দেবী : সিনেমা না হুমায়ুন সৃষ্টির অবমাননা !
আমাদের কাছে হুমায়ুন আহমেদ শুধুমাত্র একজন সাহিত্যিকই না, একজন ম্যাজিশিয়ান। আমাদের কাছে হুমায়ুন আহমেদ গোটা একটা প্রজন্মের অনুভূতি। হুমায়ুন পড়ার আগে কেউ প্রবল মুগ্ধতা নিয়ে বৃষ্টি দেখতো কিনা আমার জানা নেই৷ কিন্তু হুমায়ুন পড়ার পরই আমি বৃষ্টির আবেশে জড়িয়ে যাওয়া শিখেছি। বৃষ্টি ঝরলেই যেনো প্রিয়জন বলে ওঠে –
“যদি মন কাঁদে
তুমি চলে এসো
এক বর্ষায়”
সাহিত্য নিয়ে সিনেমা হতেই পারে, সেটা দোষের কিছু না। কিন্তু সাহিত্যটা যখন হুমায়ুনের, তখন আমাদের সতর্ক দৃষ্টি, সাথে ভয় আর আশাহতের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে! কিছুদিন আগেই না দেখলাম, সিনেমার নামে হুমায়ুনের ‘কৃষ্ণপক্ষ’র কি নিদারুণ অপচয়, হুমায়ুন সৃষ্টির অপচয় ! শুধু অপচয় না, সেটা হুমায়ুন সৃষ্টির প্রতি অবমাননাও বটে !
হিমুর চেহারার পরিপূর্ণ বর্ণনা না দিলেও হুমায়ুন আহমেদ মিসির আলীর সম্পুরক চেহারার বর্ননা দিয়ে গেছেন।
উপন্যাসের কাহিনী অনুসারে মিসির আলীর বর্ণনা এভাবে পাওয়া যায় –
“মিসির আলির বয়স ৪০-৫০-এর মধ্যে। তাঁর মুখ লম্বাটে। সেই লম্বাটে মুখে এলোমেলো দাড়ি, লম্বা উসখো-খুসকো কাঁচা-পাকা চুল। প্রথম দেখায় তাঁকে ভবঘুরে বলে মনে হতে পারে; কিছুটা আত্মভোলা। তাঁর হাসি খুব সুন্দর, শিশুসুলভ। মিসির আলির স্মৃতিশক্তি বেশ ভালো।”
“মিসির আলি একজন ধূমপায়ী। তিনি ‘ফিফটি ফাইভ’ ব্র্যান্ডের সিগারেট খান। তবে তিনি প্রায়ই সিগারেট ছেড়ে দেবার চেষ্টা করেন। তাঁর শরীর বেশ রোগাটে আর রোগাক্রান্ত। নানারকম রোগে তাঁর শরীর জর্জরিত; লিভার বা যকৃৎ পুরোটাই অকেজোঁ প্রায়, অগ্ন্যাশয়ের কার্যকারিতা হ্রাস পেয়েছে, রক্তের উপাদানে গড়বড়, হৃৎপিণ্ড ড্রপ বিট দেয়। এজন্য কঠিন এসব রোগের পাশাপাশি সাধারণ যেকোনো রোগই তাঁকে বেশ কাহিল করে ফেলে। ফলে প্রায়ই অসম্ভব রোগাক্রান্ত হয়ে তাঁকে হাসপাতালে থাকতে হয় এবং শেষপর্যন্ত তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন।”
সম্প্রতি সরকারি অনুদানের ছবি এবং জয়া আহসান প্রযোজিত ছবি ‘দেবী’ এর ট্রেইলার প্রকাশ হয়েছে। ট্রেইলার দেখেই সেই আগের ভয় বাসা বেধেছে। যেহেতু আমরা ঘর পোড়া গরু, সিঁদুর দেখলেও ভয় পেয়ে যাই…
ট্রেইলারে মিসির আলী রূপে চঞ্চলকে যেটুকু দেখা গেলো, আমার তাকে দেখে কখনোই মিসির আলীর মত মনে হয়নি। হুমায়ুন আহমেদের মিসির আলী এতটা স্বাস্থ্যবান ছিলোনা। হুমায়ুন আহমেদ আমাদের যে মিসির আলী দেখিয়েছেন, এ মিসির আলী সে না ! মিসির আলী আমাদের খুব পরিচিত, তাঁকে তো আমরা চিনি।
মিসির আলীকে হুমায়ুন আহমেদ এমনভাবে বর্ননা করেছেন, যে তিনি জীবত থাকাকালীন তাঁকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে।
হুমায়ুন আহমেদ নিজেই জানান –
“মিসির আলি চরিত্রটি এতটাই পাঠক জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে, অনেকেই তাঁকে রক্তমাংসের মানুষ ভাবতে শুরু করেছেন। হুমায়ূন আহমেদ প্রায়ই জিজ্ঞাসিত হন যে, মিসির আলি কি কোনো বাস্তব চরিত্রকে দেখে লেখা কিনা। এর নেতিবাচক উত্তর পেয়ে অনেকেই আবার মিসির আলি চরিত্রটির মধ্যে লেখকেরই ছায়া খুঁজে পান।”
অনেকে বলতে পারেন, শুধুমাত্র ট্রেইলার দেখেই আমি পুরো সিনেমার জাজ কিভাবে করছি। আসলে আমি পুরো সিনেমার জাজ করছি না, শুধু মিসির আলীর ব্যপারটা নিয়ে প্রশ্ন তুলে গেলাম। কারণ আমি আর হুমায়ুন সৃষ্ট চরিত্রের অবমানা দেখতে পারবো না।
আমি এই সিনেমা দেখবোও না, লাস্টে এটা বলবা, ‘দেবী’ দেখলেই আমার অবদমিত আগ্রহটা শেষ হয়ে যাবে। তাই আমি দেবী দেখবো না। দেবী জমা পড়ে থাকুক আমার ভালোবাসায় চিলেকোঠাতে…
আরো পড়ুনঃ