উত্তরাঞ্চলীয় ফিলিপাইনের মাউন্টেন প্রদেশের ইগোরোট গোত্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের মৃতদেহকে ঝুলন্ত কফিনে দাফন করে আসছে। এই দাফনের পদ্ধতি তাদের বহু বছরের ঐতিহ্য। পাহাড়ের উচ্চতায় মাটির উপরের অংশগুলিতে পেরেক দিয়ে এই কফিনগুলো ঝুলিয়ে রাখে। তাঁরা মনে করেন, এই ঝুলন্ত কফিনে মৃতদেহগুলোর জন্য প্রচন্ড আরামদায়ক। যদিও আগের মত এর ব্যপকতা নেই। কিন্তু ছোটখাট স্কেলে হলেও এগুলো অনেকে সচল রাখছে। সম্প্রতি ফিলিপাইনের নতুন রাফ গাইডটি গবেষণা করার সময়, কিকি ডিয়ের নামক এক ব্যক্তি এসব জানতে পারেন।
ঝুলন্ত কবরস্থান এর ইতিহাস
ঝুলন্ত কফিনের প্রচলন শুরু হয়েছিলো বেশ কয়েকটি কারণে ! প্রথমত, তাঁরা মনে করতেন, পাহাড়ে কফিনগুলো ঝুলিয়ে রাখলে মৃতদেহগুলো তাঁদের আত্মার খুব কাছাকাছি থাকবে। তাঁরা আরো মনে করতেন, মৃত্যুর পর তাঁদের আপনজনদের একটি আরামদায়ক অবস্থান থাকুক।
দ্বিতীয়ত, কবর দেওয়ার ব্যাপারে দুই ধরনের ভয় ছিলো। মৃতদেহগুলো কুকুর খাবে, তাই মৃতদেহগুলো পাহাড়ের উপর তুলে কুকুরের নাগালের বাইরে রাখা। আরেকটা ব্যপার ছিলো, কয়েক বছর ধরে, কালিঙ্গা এবং পূর্ব বন্টোক প্রদেশের বিভিন্ন অংশ থেকে বর্বর শত্রুরা মৃতদেহের মাথার খোঁজে আসত, যেগুলো তারা বিভিন্ন খেলার ট্রফি হিসাবে সংরক্ষন করে রাখত।
মৃতদেগুলো অদ্ভুত ভাবে দাফন করা হত। মৃত ব্যক্তিটিকে প্রথম একটা কাঠের খাটিয়ায় রাখা হয়। তারপর লাশটি বেত দিয়ে বাধা হয়। এবং লাশটি একটি কম্বল দিয়ে আবৃত করে দেয়া হয়। তারপর লাশটিকে সম্মান করার জন্য বাড়ির প্রধান দরজার মুখোমুখি করে রাখা হয়। এবং লাশের পঁচা গন্ধ দূর করার জন্য ধূমপান করা হয়।
মৃতদের জন্য এই আয়োজন কয়েকদিনের জন্য অনুষ্ঠিত হয়, এরপর মৃতদেহটি কফিনে নিয়ে যাওয়া হয়। মিছিল সহকারে লাশটি পাহাড়ের উপর নিয়ে যাওয়া হয়। যখন মিছিলটি ঝুলন্ত কবরস্থানে পৌঁছে যায়, তখন যুবকেরা পাহাড়ের পাশে উঠে যায় এবং লাশটির কফিন পেরেক দিয়ে পাহাড়ের গায়ে ঝুলিয়ে রাখে।
এভাবে দাফনের মাধ্যমে ইগোরেট সদস্যরা মনে করেন, তাঁরা তাঁদের প্রিয়জনদের স্বর্গে পৌঁছে দিয়ে এসেছেন !