২৫ বছর যাবৎ স্বেচ্ছা নির্বাসিত একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সেফাত উল্লাহ ! তার একটি উক্তি আজো স্মরণীয় হয়ে আছে।
“আমাকে ফাঁসি দাও, তোমাদের ভন্ডামী আমি আর সহ্য করতে পারছিনা।” – সেফাত উল্লাহ
কে এই সেফাত উল্লাহ? কিভাবে তার উত্থান? কেনো তিনি এত জনপ্রিয়? আর কেনোই বা তার আজ এই অবস্থা? এসব নিয়ে ছারপোকা ম্যাগাজিনের আজকের এই প্রতিবেদন !
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেমাস হয়ে সেলিব্রেটি ট্যাগ পাওয়ার যে কয়েকটি উপায় রয়েছে, তার একটা হলো ফেসবুক লাইভ। এই ফেসবুক লাইভে রাতারাতি সেলিব্রেটি বনে যাওয়া একজন হলেন সেফাত উল্লাহ ওরফে সেফুদা, যিনি কিনা তার নামের চেয়ে তার লাইভে বলা কথাগুলোর জন্য অধিক বিখ্যাত। তার কথাগুলো ভাইরাল হওয়ায় সেগুলোর সাথে পরিচিত থাকলেও, তার সম্পর্কে খুব বেশি জানেন এমন ব্যক্তি খুব কমই আছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেফাত উল্লাহ্ সম্পর্কে অজানা সব তথ্য….
সেফাত উল্লাহ সেফুদা
সেফাতউল্লাহর পুরো নাম সেফাত উল্লাহ সেফুদা এবং পদবী চৌধুরী। মূলত ফেসবুকে সেফাত উল্লাহ্ সেফুদা নামের আইডি থেকে লাইভ ভাইরাল হওয়ায় এই নামেই অধিকাংশ মানুষের কাছে পরিচিত তিনি। এছড়াও তার কিছু নিকনেম রয়েছে। যেমন – প্রেমসম্রাট, কবি, গায়ক।
সেফাত উল্লাহ’র ধর্ম : সেফাত উল্লাহকে অনেক ব্লগ, ফেসবুক গ্রুপ, পেজে নাস্তিক সম্বোধন করা হলেও নিজেকে তিনি সুন্নী মুসলিম হিসেবে দাবী করেন। তার কথামতে, তিনি কারো ধন সম্পদ আত্নসাৎ করেন না, স্রষ্টায় বিশ্বাসী, নামায-রোজা রাখেন, হজ্বে যেতে চান। তবে জানা যায়, ২০১৩-১৪ সালে বাংলাদেশে একের পর এক ব্লগার তথা মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যার ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করার ঘোষনা দিয়েছিলেন সেফাত উল্লাহ।
জন্মস্থান ও বসবাস : সেফাত উল্লাহ খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গায় ৫ নভেম্বর ১৯৪৬ সালে জন্মগ্রহন করেন। তবে তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। ১৯৮৫ (মতান্তরে ১৯৮৮) সালে প্রথম সৌদি আরব যান এবং সেখান থেকে ১৯৮৮ সালে (মতান্তরে ১৯৯১) সালে অষ্ট্রিয়ায় যান। এরপর আর তিনি কখনো দেশে ফিরে আসেননি। বিদেশের মাটিতে স্বেচ্ছা নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি অষ্ট্রিয়ার ভিয়েনায় বসবাস করেন।
পেশা : তথ্য অনুযায়ী, সেফাত উল্লাহ ১৯৭৯/১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে ভিয়েনায় এক স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর হিসেবে আছেন। পাশাপাশি একটি অনলাইন শপে পার্টটাইম কাজ করেন। স্বীকৃত কাজ ছাড়াও তিনি কবিতা লিখেন, গান লিখেন, স্থানীয় গনমাধ্যম তথা টেলিভিশনে কাজ করেন। দেশে থাকাকালে বিভিন্ন সময় তিনি বাংলাদেশ বেতারে কবিতা পাঠ করতেন বলেও জানা যায়।
পারিবারিক জীবন : সেফাত উল্লাহর স্ত্রী এবং এক সন্তান রয়েছে। যদিও বর্তমানে তার স্ত্রী-সন্তান কিংবা পরিবারের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। পারিবারিক সম্পর্কবিহীন সেফাত উল্লাহ দেশের উপর রাগ করে একাকী প্রবাস যাপন করছেন দীর্ঘদিন। তার স্ত্রী সাবেক বিটিভি কর্মকর্তা।
প্রিয় যতকিছু : সেফাত উল্লাহর প্রিয় খাবার হল চেরিফল, মদ/ওয়াইন। অধিকাংশ সময় লাইভে এসে এই খাবারগুলো খান এবং মানুষকে এগুলোর গুনাগুন বর্ননা করেন। খেতে উৎসাহিত করেন। হাফপ্যান্ট এবং সবুজ কালারের টিশার্ট পরতে ভালোবাসেন। তার প্রিয় কাজগুলোর মধ্যে একটা হল বাংলাদেশের চলমান বিষয়গুলো নিয়ে অশ্লীলভাবে ব্যক্তিবিশেষকে গালাগালি করা। এমনকি তা থেকে বাদ যান না মন্ত্রী-এমপি এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রীও !
উক্তিসমূহ : ফেসবুক লাইভে এসে সেফাতুল্লাহ অশ্লীল ও মজার কিছু উক্তি করেন যেগুলা স্যোশাল মিডিয়ায় আলোচিত। ইনবক্স, কমেন্টবক্স এমনকি বাস্তব জীবনেও তরুন প্রজন্মের মুখে মুখে তার সেই উক্তিগুলো। উল্লেখযোগ্য কিছু উক্তি –
- মদ খাবি মানুষ হবি
- মদ খাও আর পরী **, শুটকি খাও আর পেত্নি **
- ট্রস ট্রস করে মারবো
- কত মেয়েরা আমাকে ভালবাসে। আমি কি সবাইকে ভালবাসতে পারি?
- আমি প্রেম সম্রাট, প্রেম ধর্মের নবী
- অকেয়?
- শুভ অপরাহ্ন…
অচেনা সেফাত উল্লাহ
সেফাত উল্লাহকে দেখলে পাগল, মাতাল মনে হলেও সেফাত উল্লাহর সম্পর্কে এমন অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য রয়েছে যেগুলোর অল্প কিছু জানলেই যে কেউ চমকে যেতে বাধ্য ! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন সেফাত উল্লাহ্। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা !
প্রবাসে দীর্ঘদিন থাকলেও দেশের বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে সেফাত উল্লাহর। তার তথ্যমতে, সে একজন ভিআইপি এবং বাংলাদেশের হয়ে সে জাতিসংঘে কথাও বলেছে ! তার রাজনৈতিক ক্ষমতা এতটাই প্রকট যে ভিয়েনায় বসে একজন মন্ত্রীকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে পারে। একারনেই খুব সম্ভবত বড় বড় নেতা, ক্রিকেটার, সেলিব্রেটিদের নিয়ে লাইভে অশ্লীলতার মাত্রা ছাড়ানো কথাবার্তা বললেও কেউ তাকে ঘাটায় না !
যদিও জানা যায়, সেফাতের নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুয়া। বরং সে ধর্ষণ করে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে দেশত্যাগ করে !
২০১০ সালে বড় ধরনের স্ট্রোক করেন সেফাত উল্লাহ। তার কিছুদিন পর মাথার চুল পড়ে যায় আবছাভাবে। যদিও পূর্বে তার মাথার সামনে টাক ছিল এবং যৌবনকালে ঘাড়ের দিকে লম্বা বাবরি চুল রাখতেন। স্ট্রোকের পর তার মাথা হঠাৎ হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং উল্টাপাল্টা কাজ করে বসেন। তারই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক কালে ফেসবুক লাইভে আসেন, যা সোশ্যাল সাইটে ভাইরাল হয়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয় এবং তিনি হয়ে যান লাইভ সেলিব্রেটি !