তেলাপোকা দেখলে একেক মানুষের একেক রকম অনুভূতি হয়। বিশেষ করে মেয়েরা এই প্রাণীটিকে সাবেক প্রেমিকের চেয়েও বেশি ঘৃণা করে। ঘরে তেলাপোকা হাঁটতে দেখলেই অনেকের শ্বাসকষ্ট শুরু হয় আর তেলাপোকা যখন ওড়া শুরু করে তখন তো কথাই নেই…
কিন্তু যে যত ঘৃণাই করুক না কেনো, যেকোনো পরিবেশে অনায়াসে খাপ খাইয়ে নেবার অসাধারন ক্ষমতার বলে এটি পৃথিবীর অন্যতম সফল একটি প্রানী। বলা হয়, বিশাল আকারের ডায়নোসর বিলুপ্ত হয়ে গেছে, কিন্তু তেলাপোকা টিকে আছে। তার মানে বিরূপ পরিবেশে তেলাপোকার বেঁচে থাকার অসাধারণ গুণ রয়েছে।
কিন্তু এত তীব্র অভিযোজন ক্ষমতা নিয়ে কি তেলাপোকা মঙ্গল গ্রহেও বেঁচে থাকতে পারবে? যেখানে কিনা একজন মানুষ স্পেসস্যুট ছাড়া এক মিনিটও টিকবে না !
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে আসুন জেনে নেই তেলাপোকার এমন কিছু গুণ বা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে, যা এই পতঙ্গগুলোকে পৃথিবীর বুকে টিকিয়ে রেখেছে প্রায় ২৮ কোটি বছর ধরে !
তেলাপোকার যত সুপারপাওয়ার
অনেকই ধারনা করেন, যে কোন প্রতিকুলতা সহ্য করার মত শক্তিশালী প্রানী এটি, এমন কি পারমানবিক তেজষ্ক্রিয়তাতেও এদের কিছুই হয় না, যে ধারনাটা প্রায় পুরোটাই ভুল। কারন বেশ কিছু পরীক্ষা পরে প্রমান করেছে যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এদের প্রতিকুলতা সহ্য করার ক্ষমতা অন্য অনেক কীটপতঙ্গের মতই গড়পড়তা। অন্তত তেমনটাই ধারনা করা হত। কিন্ত ২০০৮ থেকে ২০১০ এ বেশ কিছু গবেষনায় বিজ্ঞানীরা নিশ্চিৎ হয়েছেন, আসলেই এদের বিশেষ কিছু গুণ বা বৈশিষ্ট্য আছে যা, অন্য কীটপতঙ্গ থেকে তাদের একটু বেশী কষ্টসহিষ্ণু হবার ক্ষমতা দিয়েছে। যেমন –
- এরা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও টিকে থাকতে পারে।
- মাসখানেক কোনো খাবার ছাড়াই এদের চলে। কারণ এরা ঠাণ্ডা রক্তের প্রাণী।
- মাথা কাটা গেলেও এরা অন্তত এক সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারে। কারণ সে শরীরের বিভিন্ন অংশের সূক্ষ্ম ছিদ্রপথে শ্বাস নেয়। তবে মুখ ছাড়া পানি খেতে পারে না বলে শেষ পর্যন্ত মারা যায়।
- ওরা দম বন্ধ করে ৪০ মিনিট পর্যন্ত থাকতে পারে।
- পানির নিচে আধা ঘন্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
- খাবারের ব্যাপারে এদের কোন বাছবিচার নেই। যা পায় তাই খায়। অন্য প্রাণীর মল খায়, অন্য পোকা খায়, নিজেরাই নিজেদের খায়, আবার সুযোগ পেলে ঘুমন্ত মানুষকেও কামড়ায়। বেশিরভাগ সময় এরা মানুষের নখ খায় !
- তেলাপোকা অন্ধকারে বেশিদিন বাঁচে। এরা আলো সহ্য করতে পারে না।
- তেলাপোকা তাদের বাসস্থান নিজেদের মল দিয়ে ঢেকে রাখে ক্ষতিকর ছত্রাকের আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে!
এবার তো বুঝতেই পারছেন কিভাবে এত প্রতিকূলতার পৃথিবীতে এই পতঙ্গটি নিজেকে টিকিয়ে রেখেছে। এবার অন্তত কিছু সম্মান দিন একে…
মঙ্গল গ্রহে তেলাপোকা’র বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কতটুকু?
এটা কঠিন প্রশ্ন। নাসা একবার কিছু তেলাপোকা সেখানে পাঠিয়ে দিলেই হয়। তবে গ্রহটির প্রতিকূলতা অনুযায়ী বলা যায়, মঙ্গল গ্রহে তেলাপোকা খুব বেশিদিন টিকে থাকার কথা নয়। কারণ –
- মঙ্গল গ্রহে মহাকাশ থেকে আসা তেজস্ক্রিয় রশ্মির তীব্রতা বেশি। তেলাপোকা হয়তো তা সহ্য করতে পারবে। কিন্তু কতদিন? হয়তো খুব বেশিদিন টিকবে না।
- তেলাপোকা গরম যতটা সহ্য করতে পারে, ঠাণ্ডা ততটা নয়। মঙ্গল গ্রহে এত বেশি ঠাণ্ডা যে সেখানে তার পক্ষে টিকে থাকা কঠিন।
- মঙ্গল গ্রহে বাতাস প্রায় নেই। চাপ তো খুবই কম। পৃথিবীর শূন্য চাপের মতই। এতো অল্প চাপে তার বেশিদিন টিকে থাকার কথা নয়।
- একে তো বাতাস কম, তার ওপর অক্সিজেন প্রায় নেই। তেলাপোকা অবশ্য খুব কম অক্সিজেনে টিকে থাকে, কিন্তু কিছু অক্সিজেন তো লাগবেই। অক্সিজেনের অভাবে ৪০ মিনিটের মধ্যেই তাকে বিদায় নিতে হবে।
তাই বলা যায়, মঙ্গল গ্রহে তেলাপোকা ছেড়ে দিলে হয়ত মানুষের চেয়ে কিছু বেশি সময় বাঁচবে। তবে খুব বেশি দিন নয়। দ্রুতই প্রান হারাবে। গড়ে হিসাব করলে মঙ্গল গ্রহে তেলাপোকার আয়ুস্কাল হতে পারে আধা ঘণ্টার মত।
পারমাণবিক বিস্ফোরণে তেলাপোকার বেঁচে যাওয়ার তত্ত্ব কতটা সঠিক?
কোন কোন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে আছে, পারমানবিক বিস্ফোরনের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবী ধ্বংশ হলেও তেলাপোকা ঠিকই বেচে থাকবে। কথাটা ঠিক না , তেলাপোকারা কিন্তু আবার এত শক্তিশালীও না। পরীক্ষা করে দেখা গেছে খুব অল্প ডোজ, ৬৪০,০০০ গ্রে (Gray) যথেষ্ট ৯৩% অপরিনত বয়ষ্ক তেলাপোকা মারতে (গ্রে হচ্ছে রেডিয়েশন শোষন করার ক্ষমতার একটি একক)। এর দশগুন বেশী রেডিয়েশন কিন্তু মানুষই সহ্য করতে পারে। আর মাছির সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, মাছি সহ্য করতে পারে প্রায় ৬ মিলিয়ন গ্রে আর পরজীবির বৈশিষ্ট সম্পন্ন ওয়াস্প (wasp) কে মারতে লাগবে ১০ মিলিয়ন গ্রে রেডিয়েশন।
পরিশেষে চকলেট প্রেমীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
US Food and Drug Administration (FDA) এর গাইডলাইন অনুযায়ী, “প্রতি একশো গ্রাম চকলেটে প্রায় ৬০টি তেলাপোকা বা অন্যান্য পতঙ্গের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থাকে !
আরো পড়ুনঃ