বর্তমানে আমাদের দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট যাচাই করলে দেখা যায় দেশ চলছে রাজনৈতিক নেতা আর তাদের পালিত পুলিশ বাহিনীর ইচ্ছেমত। কিন্তু ইতিহাস বলে আশি এবং নব্বই দশক, এমনকি একুশ শতকের শুরুর সময়টাও ছিলো অনেকটাই ভিন্ন। তখন নেতা কিংবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপরে ছিলো পিচ্চি হান্নান, কালা জাহাঙ্গীর কিংবা সুব্রত বাইনের মত গ্যাংস্টারদের হাত। মূলত তাদের দাপটের উপরেই নির্ভর করত নেতা ও পুলিশের চালচলন। নবগঠিত বাংলাদেশের ইতিহাসে সে এক কলঙ্কিত অধ্যায়। ২০০৪ সালে বিএনপি সরকারের দ্বারা গঠিত র্যাপিড এ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর প্রায় ২ বছরের কর্মতৎপরতায় এসব গ্যাংস্টারদের ত্রাসের রাজত্ব মোটামুটি ধ্বংস করা হয়।
সেই সময়ের কুখ্যাত এবং শীর্ষস্থানীয় একজন গ্যাংস্টারের গল্প বলবো আজ। আব্দুল হান্নান নাম বললে তাকে অনেকেই চিনবে না, কারণ সে পরিচিত ছিলো “পিচ্চি হান্নান” নামে। তখন আমাদের শৈশবকাল। যতদুর মনে পরে, এমন একটা দিন ছিলোনা যেদিন পত্রিকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নানের নাম আসেনি। তখনকার সময় পত্রিকায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জন্য একরকম আলাদা বিভাগ ছিলো। যেখানে শুধু দেশের বড় বড় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কর্মকান্ডের আপডেট ছাপা হত। পিচ্চি হান্নান তাদেরই একজন…
চাঁদপুর জেলার চরদুখিয়া ইউনিয়নের এক নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা জনাব ওয়াজিউল্লাহ্। পেটে ভাত cbgd, কিন্তু ঘরে ছয়-ছয়টা ছেলেপুলে। বাধ্য হয়ে ওয়াজিউল্লাহ্ বড় দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ি জমান স্বপ্নের শহর ঢাকায়। ওয়াজিউল্লাহ্ সাহেবের দ্বিতীয় ছেলে আব্দুল হান্নান তখন সবেমাত্র ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ত। ওই বয়সে পরিবারের পেট বাঁচানোর তাগিদে সে বাবার হাত ধরে পা রাখে রাজধানী ঢাকায়। কে জানত, ১৯৯৬ সালে পেটের তাগিদে ঢাকায় আসা সেই পিচ্চি ছেলেটাই একদিন হয়ে উঠবে কুখ্যাত সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নান !
ঢাকায় এসে হান্নানের বাবা কারওয়ান বাজারে ছোট পরিসরে সবজির ব্যাবসা শুরু করেন। হান্নান তার বাবার সবজির দেখাশুনা করত। কিছুদিনের মধ্যেই ফার্মগেট রেলবস্তি এলাকায় আরিফ নামের এক গাঁজা ব্যবসায়ীর সাথে হান্নানের পরিচয় হয়। হান্নানের কম বয়স এবং চেহারার আদুরে ভাবটা কাজে লাগাতে চাইলো আরিফ। টাকার লোভে সুযোগটা হাতছাড়া করেনি হান্নান। শুরু হলো গাঁজা চালানের কাজ। আরিফের বলে দেয়া স্পটে গিয়ে গাঁজা সংগ্রহ থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট স্থানে খদ্দেরের হাতে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত পুরো কাজটাই করত হান্নান। চেহারা আর বয়সের কারণে পুলিশ কখনোই সন্দেহ করত না তাকে। এভাবে ধীরে ধীরে নিজের মত আরো কয়েকজন ছেলেপেলে জোগাড় করে টিম বানিয়ে হান্নান ছিনতাই করা শুরু করে। তারপর একে একে অপহরণ, ধর্ষন, চাঁদাবাজি, মাদক এবং অস্ত্র পাচারের মাধ্যমে অপরাধ জগতে হান্নান পোক্ত করে নেয় তার অবস্থান…
পিচ্চি হান্নানের প্রথম খুনের স্বীকার হয় রানা নামে এক যুবক। ফার্মগেট এলাকায় একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে এই খুন করে হান্নান বাহিনী। ততদিনে আব্দুল হান্নানের নাম সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে গেছে পিচ্চি হান্নান নামে ! খাটো গড়নের শরীরের কারণেই মূলত তাকে পিচ্চি উপাধী দেয়া হয়…
এই সময় ঢাকার এক শীর্ষস্থানীয় ডনের আত্মহত্যার পর ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পরে। একটার নাম হয় ফাইভ স্টার গ্রুপ, যার প্রধান ছিলো লিয়াকত এবং অন্যটা সুব্রত বাইনের সেভেন স্টার গ্রুপ। পিচ্চি হান্নান যোগ দেয় ফাইভ স্টার গ্রুপে। ওই গ্রুপের উল্লেখযোগ্য আরো কয়েকজন সন্ত্রাসী ছিলো কালা জাহাঙ্গীর, কচি দাদা, বিকাশ, প্রকাশ এবং নিটেল। অন্যদিকে সেভেন স্টার গ্রুপে ছিলো সুইডেন আসলাম, মুরগী মিলন, টোকাই সাগর, জন, নিউটন, আসিফ সহ আরো অনেকে। দুই গ্রুপের মধ্যে ক্ষমতা এবং প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ লেগেই থাকত। তাদের আঘাত, প্রতিঘাত, খুন এবং পাল্টা খুনের মাধ্যমে ঢাকা শহরে শুরু হয় এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি…
একই গ্রুপের হওয়ায় হান্নানের বন্ধুত্ব হয় কালা জাহাঙ্গীরের সাথে। এই লাইনে কালা জাহাঙ্গীর ছিলো পিচ্চি হান্নানের অনেক উপরে। হান্নান তখন নতুন নতুন তাদের দলে ঢুকেছে। কালা জাহাঙ্গীরের সানিধ্যে থেকেই হান্নান নিজের আয়ত্ব বড় করতে থাকে।
এরপর একদিন হঠাৎই ঢাকা জর্জ কোর্ট এলাকায় জনসম্মুখে দিনদুপুরে তারা দুজন মিলে খুন করে সেভেন স্টার গ্রুপের মুরগী মিলন কে। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কালা জাহাঙ্গীর এবং পিচ্চি হান্নান মিলে গড়ে তোলেন এক অবিশ্বাস্য সন্ত্রাসবাদী সমাজ। শুধুমাত্র তাদের নাম শুনেই লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা দিয়ে দিত ছোট বড় ব্যবসায়ীরা। চাঁদাবাজি, অস্ত্র এবং মাদকের ব্যাবসার মাধ্যমে অর্জিত টাকায় খুব অল্প সময়েই কোটিপতি হয়ে যায় হান্নান। তখনকার উঁচুস্তরের রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে ব্যাবসায়ী কিংবা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সবই ছিলো হান্নানের পকেটে। সুতরাং যেকোন অপরাধ করে খুব সহজেই পার পেয়ে যেত হান্নান। সবসময় সঙ্গে রাখত আগ্নেয়াস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দেহরক্ষী। কথিত আছে, এক পথচারী ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় হান্নানের সাথে ধাক্কা লাগার অপরাধে সেখানেই সবার সামনে হান্নান তাকে গুলি করে হত্যা করে।
আন্ডারওয়ার্ল্ড থেকে হান্নান এত পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন যে, তিনি তার জন্মস্থান চাঁদপুর শহরের রাস্তা স্বর্ণ দিয়ে বাধাই করার ঘোষণাও দিয়ে ফেলেছিলেন। চাঁদপুরে গেলে এখনো লোকমুখে বলতে শোনা যায়, পিচ্চি হান্নান বেঁচে থাকতে চাঁদপুরকে সোনা দিয়ে বাধাই করে ফেলত !
হান্নানের নামে খুন, ধর্ষন, অপহরণ, অবৈধভাবে জমি কব্জাসহ বিভিন্ন অপরাধের মোট ২৩টি মামলা দায়ের করা ছিলো। এরমধ্যে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান মণ্ডল হত্যা মামলা, ওয়ার্ড কমিশনার শাহাদাত হোসেন হত্যা মামলা এবং এস আই হুমায়ূন কবির হত্যা মামলা উল্লেখযোগ্য।
এরকম শ্বাপদসংকুল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চৌকষ সদস্যদের নিয়ে সন্ত্রাস নির্মূলের জন্যে তৈরী করলো এক বিশেষ বাহিনী, র্যাব। শুরুতেই র্যাব টার্গেট করলো নামধারী ঢাকাই সন্ত্রাসীদের। একে একে তাদের হত্যা করতে শুরু করলো ক্রসফায়ারের মাধ্যমে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের মোট ২৩ জন সন্ত্রাসীর তালিকা তৈরী করা হলো। এদের মধ্যে পিচ্চি হান্নান, কালা জাহাঙ্গীর ও টোকাই সাগর সহ মোট ১১ জনকে ধরিয়ে দিলে এক লক্ষ টাকা এবং বাকীদের জন্যে পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরষ্কার ঘোষনা করা হয়। বিপদ নেমে এলো কালা জাহাঙ্গীর, সুব্রত বাইন, সুইডেন আসলাম কিংবা পিচ্চি হান্নানের মত শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসীদের ঘাড়ে। এই সময় হান্নান কৌশলে বন্ধু জাহাঙ্গীরকে ইন্ডিয়ায় পাঠিয়ে দেয় এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী কিংবা পুলিশের চোখে তাকে হত্যা কিংবা আত্মহত্যার দুই বিপরীতমুখী ধূম্রজাল ছড়িয়ে দেয়। কথা ছিলো প্রয়োজন হলে সুযোগ বুঝে হান্নানও পালিয়ে যাবে ইন্ডিয়াতে। কিন্তু সেই সুযোগ আর পায়নি হান্নান !
২০০৪ সালের ২৪ শে জুন মধ্যরাতে র্যাবের কাছে খবর আসে হান্নান উত্তরার এক বাসায় বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ফূর্তি করছে। তৎক্ষণাৎ ৪০ জন র্যাব সদস্য নিয়ে তারা হানা দেয় উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের সেই ডুপ্লেক্স বাড়িতে। প্রত্যেক র্যাব সদস্যের হাতে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। অস্ত্রের নলগুলো ওই বাড়িটির ভেতরের দরজার দিকে তাক করা। হঠাৎ ভেতর থেকে দরজা খুলে বেরিয়ে আসলেন এক যুবক। তার দুই হাত দুই পকেটে ঢোকানো। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোকটি দুই পকেট থেকে কাউবয় স্টাইলে দুটি পয়েন্ট ২২ বোরের পিস্তল বের করে র্যাব সদস্যদের টার্গেট করে গুলি ছুড়তে লাগলেন। এমন আচানক আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না র্যাব সদস্যরা। তাদের মধ্যে দুজন ইতিমধ্যে লুটিয়ে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। অন্য সদস্যরা পাল্টা গুলি চালাচ্ছেন।
মধ্যরাতে গোলাগুলিতে উত্তরা এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। নতুন নতুন টেলিফোনের যুগে সেই আতংক মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরজুড়ে।
অস্ত্রধারী ওই যুবকটির শরীরে বেশ কয়েকটি গুলিবিদ্ধ হয়। ওই অবস্থাতেই লোকটি কমান্ডো স্টাইলে লাফিয়ে পাঁচিল টপকে বাড়ির বাইরে চলে যায়। সঙ্গে তার দুই সহযোগীও ! দ্রুত তারা চড়ে বসলেন বাইরে পার্ক করে রাখা মাইক্রোবাসে। র্যাব সদস্যরা এ সময় গাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকেন। কিন্তু ততক্ষণে মাইক্রোবাসটি হাওয়া হয়ে গেছে। ২০০৪ সালের ২৪ জুনের ওই রাতে পিচ্চি হান্নানকে হাতের নাগালে পেয়েও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। কমান্ডো স্টাইলে র্যাবের সামনে দিয়েই গুলি করতে করতে পালিয়ে যান তিনি ! পুরো রাতের অভিযানের উত্তেজনা, ব্যর্থতা, ক্লান্ত শরীর ও দুই গুলিবিদ্ধ সদস্যকে নিয়ে ফিরে আসে র্যাবের ওই দলটি।
র্যাবের হাত থেকে পালিয়ে গুলিবিদ্ধ পিচ্চি হান্নান তার দুই সহযোগীকে নিয়ে প্রথমে আশুলিয়া যান। সেখানে যুবদলের এক নেতার বাসায় গিয়ে রক্তমাখা কাপড় পরিবর্তন করেন। সেখান থেকে তারা সাভারের আরেক যুবদল নেতার বাসায় যান। ওই নেতাই সাভারের ইনসাফ ক্লিনিকে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেন। ক্লিনিকে পিচ্চি হান্নানের শরীর থেকে কয়েকটি গুলি বের করা হয়।
এ ঘটনার ঠিক দুদিন পর র্যাব আবারো খবর পায় সাভারের ইনসাফ ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছে পিচ্চি হান্নান ! এবার আর তাকে কোনো সুযোগ দেয়া যাবে না। আর কোনো ভুল নয়। এই রাতেই ধরতে হবে পিচ্চি হান্নানকে। নাহলে আর কোনোদিনই তাকে পাওয়া যাবেনা। এইবার ধরতে না পারলে ঠিকই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে পিচ্চি হান্নান !
অভিযানে যাবার আগে প্রস্তুতি নিতে হয়। কিন্তু এখানে প্রস্তুতি নেয়ার মত আর কোনোরকম সময় নেই। যা করার এখনই করতে হবে ! দেরী না করে র্যাব সদস্যরা ততক্ষণাৎ সুকৌশলে সেখানে উপস্থিত হয়ে যায়। মুখোমুখি হয় পিচ্চি হান্নানের…
দোতলার একটি কক্ষেই শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন পিচ্চি হান্নান। র্যাবের এক সদস্য তাকে প্রশ্ন করেন, ‘কিরে, উত্তরায় গুলিবিদ্ধ হয়ে এখন এখানে এসেছিস’?’
পিচ্চি হান্নান তখন খুব বিনয়ের সঙ্গে বলেন, ‘না স্যার, আমি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছি‘।
র্যাব অফিসার তখন তার গুলিবিদ্ধ স্থানে হাত রেখে একটু চাপ দিয়ে বলেন, ‘তাই নাকি। এখন বল, হান্নান, তোর গুলিটা কোথায় লেগেছে? এখানে? না এখানে?‘
ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে হান্নান। শেষমেষ র্যাবের জেরার মুখে একপর্যায়ে হান্নান একসময় স্বীকার করতে বাধ্য হয়, সেইই পিচ্চি হান্নান। এসময় সে র্যাবের অফিসারদের উদ্দেশ্য করে বলে, “আমি এই মুহূর্তে আপনেগো এক কোটি টাকা দিমু, আমারে ছাইড়া দেন স্যার। ফোনটা দেন, অক্ষণি টাকা আনতে বলি।”
হান্নানের প্রলোভনে সেদিন কাজ হয়নি। হাসপাতাল থেকে র্যাব হান্নানকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। সেদিন রাতেই পিচ্চি হান্নানকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে বের হয় র্যাব সদস্যরা। এবং আশুলিয়ায় তথাকথিত ‘ক্রসফায়ার’ -এ মৃত্যু হয় পিচ্চি হান্নানের ! ভবলীলা সাঙ্গ হয় আন্ডারওয়ার্ল্ডের মুকুটবিহীন এক সম্রাটের। অবৈধ উপার্জনের সাম্রাজ্য তার মরণযাত্রা এড়াতে পারেনি। জন্মস্থান চাঁদপুরে অযত্নে অবহেলায় এপিটাফহীন এক কবরের অন্ধকারে লুকিয়ে আছে পিচ্চি হান্নানের প্রাচীন কংকাল…
আরো পড়ুনঃ