উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র জিবুতি ! দেশটির রাজধানীর নামও দেশের নামেই দেয়া। জিবুতিই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যে দেশের নাম এবং দেশের রাজধানীর নাম এক। তবে জিবুতি সম্পর্কে এটাই একমাত্র মজার তথ্য নয়। আরো অনেক অদ্ভুততা ঘিরে আছে এই জিবুতিকে ঘিরে। আর এসব কারণেই জিবুতিকে বলা হয় অদ্ভুত ভূমির দেশ। আইনগতভাবে জিবুতিতে সন্ধ্যার পর ট্যাক্সি ভাড়া বেড়ে যায়। এরকম আরো অনেক অদ্ভুত আইন নিয়ে গঠিত দেশ জিবুতি। এ পর্বে আমরা জিবুতি সম্পর্কে সেই মজার তথ্যগুলোই জানবো। চলুন একনজরে আফ্রিকান দেশ জিবুতি সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক…
মাত্র ২৩,২০০ স্কয়ার কিলোমিটারের জিবুতি দেশটি আফ্রিকার তৃতীয়তম ছোট্ট দেশ। এই তালিকায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে আছে সোয়াজিল্যান্ড এবং গাম্বিয়া। জিবুতির লাক আস্যাল লেকটি অ্যান্টার্কটিকার চেয়েও বেশি লবনাক্ত। এই লেকের পানিতে লবণের পরিমাণ এতটাই বেশি যে, এটা জর্ডানের ডেড সি বা মৃত সাগরের চেয়েও বেশি বিখ্যাত !
জিবুতির নাম আমরা হয়ত খুব বেশি একটা শুনিনি। তবে জেনে অবাক হবেন, এই জিবুতির পোর্ট বা স্থলবন্দরই বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম পোর্ট ! বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জাহাজ জিবুতির সমুদ্র বন্দরের উপর দিয়ে যাতায়াত করে। ভৌগলিক অবস্থানগত ভাবে আরবের তেলের খনিগুলোর সবচেয়ে কাছে এই দেশটির অবস্থান…
লাক অ্যাবে নামে জিবুতিতে আরেকটি লেক রয়েছে, যা কিনা Australopithecus skeleton Lucy এর জন্য বিখ্যাত। এটি একটি নারী দেহের কঙ্কাল, যার অস্তিত্ব ছিলো প্রায় ৩.২ মিলিয়ন বছর আগে। এত পুরনো মানবফসিল এর আগে আর কোথাও পাওয়া যায়নি। সে হিসেবে বলা যায়, জিবুতিতে ছিলো আমাদের আদিমানবদের বসবাস ! বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ভূমি এই জিবুতি !
জিবুতি সম্পর্কে মজার কিছু তথ্য
1. সূর্য ডুবে যাবার পরই জিবুতিতে ট্যাক্সি ভাড়া ৫০% বেড়ে যায়। কি কারণে ভাড়া বেড়ে যায় তা বলা না হলেও জিবুতিতে আইনগতভাবেই এটা করা হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ট্যাক্সিভাড়া গুণতে হয় জিবুতিতে। তাও আবার লক্কর ঝক্কর টিনের ট্যাক্সিক্যাবে চড়ে !
2. সারাবিশ্বে ২৫ ডিসেম্বরে বড়দিন উদযাপন করা হলেও জিবুতিতে ক্রিস্টমাস পালন করা হয় ৭ জানুয়ারীতে।
3. জিবুতির বাসিন্দারা Qat নামক একটি ফুল গাছের পাতা চিবিয়ে সময় পার করেন। ঠিক যেমন অবসরে আমরা পানসুপারি বা চুইংগাম চাবাই !
4. ১৮৯১ সালে ফ্রান্স জিবুতিকে সোমালিল্যান্ডের রাজধানী বানিয়ে দিয়েছিলো। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে জিবুতি ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।
5. জিবুতিতে মুসলিমদের বসবাস বেশি। গোদা পাহাড় হচ্ছে সেখানকার মুসলিমদের তীর্থস্থান।
6. জিবুতির নারীরা লং স্কার্টের সাথে হিজাব করেন বা কাপড়ের টুকরা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখেন।
7. জিবুতির সবচেয়ে ভয়ানক পোকা The longhorn beetles ! এই প্রজাতির সবচেয়ে বড় এবং বিষধর পোকাগুলো শুধুমাত্র জিবুতিতেই পাওয়া যায়। আমাদের দেশে যেমন ঘরে বাইরে অহরহ তেলাপোকা পাওয়া যায়, তেমনি জিবুতিতে পাওয়া যায় এই লংহর্ন বিটলস !
8. জিবুতিয়ানরা এখনো জুনিপার গাছের পাতা দিয়ে ঘর বানিয়ে থাকে।
9. Blue-naped mousebird পাখিটি শুধুমাত্র জিবুতিতেই দেখা যায়। এছাড়া আর কোনো দেশে এই পাখিটি নেই।
10. ইয়াসমিন ফারাহ নামে এক জিবুতিয়ান নারী প্রথমবারের মত ২০১২ সালের অলিম্পিক গেমসে আফ্রিকার প্রতিনিধিত্ব করে স্বর্ণপদক জয় করেন।
জিবুতির খাবার দাবার
- সমুচা জিবুতির বহুল প্রচলিত খাবার। দেশটির পথেঘাটে, হোটেল কিংবা দোকানে সবচেয়ে বেশি এই সমুচা খাবারটিই পাওয়া যায়।
- ছাগলের মাংস দিয়ে বানানো ফাহ-ফাহ (Fah-fah) নামক খাবারটি জিবুতির অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। এটি উট কিংবা দুম্বার মাংস দিয়েও বানানো হয়। বাটি ভর্তি নোনতা স্যুপের মধ্যে ছোট ছোট মাংসের টুকরো রান্না করা হয়। এতে মাংসটি তুলার মত নরম হয়ে যায় !
- আমাদের দেশের আলুর চপের মত জিবুতিতে কলার চপ বানানো হয়। কলা খেতে মিষ্টি হওয়ায় এই তেলে ভাজা এই চপটির স্বাদ অনেকটা পিঠার মত হয়।
- মুকবাজা (Mukbaza) নামে আরেকটি জনপ্রিয় খাবার রয়েছে জিবুতিতে। এটি মাছ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। তবে খাবারটি দেখতে অনেকটা পাউরুটির মত। বলা যায়, এটি মাছ দিয়ে বানানো একধরণের ব্রেড বা পাউরুটি। ইয়েমেনি মাছ ও চারকোল দিয়ে এটি বানানো হয়।
জিবুতির বাসিন্দাদের খাদ্যাভ্যাস বেশ ভালো। তেমন কোনো উদ্ভট খাবারই এরা খায় না।