১৯ শতকের কুখ্যাত সন্ত্রাসী ডিয়োগো আ্যালভেস (Diogo Alves) এর কথা অনেকেই টুকটাক শুনেছেন। যারা শুনেননি, তারাও জেনে রাখুন, ডিয়োগো অ্যালভেস ছিলেন এক ভয়ানক সন্ত্রাসী। ১৮১০ সালে স্পেনের কলিশিয়ায় জন্ম গ্রহন করেন এই ব্যক্তি। তার মাথা গত ১৭৭ বছর ধরে একটি জারের মধ্যে ফ্রিজআপ করে রাখা হয়েছে এবং এই মুন্ডুটিকে ১৭৭ বছর ধরে সংরক্ষণ করেছে লিজবোন ইউনিভার্সিটি। কিন্তু কেনো ?
ডিয়োগো আ্যালভেস এর এই কাটা মুন্ডু সম্পর্কেই আজকে আমরা জানবো…
ডিয়োগো আ্যালভেস
ডিয়োগো আ্যালভেস ছাত্র জীবনে বেশ মেধাবী ছিলেন। তিনি তার পড়াশোনা শেষ করে কাজের সন্ধানে আসে লিজবন শহরে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করার পরেও তিনি কোনো কাজের সন্ধান পাননি।আর এটাই ছিল ডিয়োগো আ্যালভেস এবং লিজবন শহরের জন্য দূর্ভাগ্যের সূত্রপাত। কাজ না পাওয়ার ফলে টাকা উপার্জন করার জন্য ডিয়োগো ক্রাইম জগৎকে তার টাকা কামানোর পন্থা হিসেবে বেছে নেয়।
ডিয়োগো অ্যালভেস প্রথমে লুটপাট, ছিনতাই দিয়ে তার ভয়ানক ক্রাইম জগৎ শুরু করে। পরে ধীরে ধীরে সে হত্যাকারীতে পরিনত হয় এবং একপর্যায়ে সে বহু মানুষকে হত্যা করে। কিন্তু একটা আশ্চর্যের বিষয় হলো, ডিয়াগো আ্যালভেস কোনো ধনী মানুষকে না মেরে গরীব কৃষককে মেরে তার হত্যাকারীর রূপে যাত্রা শুরু করেন। কৃষকদেরকেই সে কেনো হত্যা করেছে, তা আজ পর্যন্ত জানা যায়নি! এই কাজ করার জন্য সে লিজবন শহরের একটি ব্রীজকে বেছে নেয়। ডিয়োগো আ্যালভেস এই হত্যাকান্ড বেশিরভাগ সময়ই রাতে অথবা সন্ধ্যায় করত। যখন কোনো কৃষক একা একা এই ব্রীজ দিয়ে যেত, তখনই ঐ কৃষককে ডিয়োগো আ্যালভেস হত্যা করে ফেলত এবং সেই ব্রীজ থেকে লাশ নদীতে ফেলে দিত, যাতে কোনো প্রমান না থাকে।
এভাবে ডিয়োগো আ্যালভেসের খুনের নেশা বেড়ে যায় এবং একে একে এভাবে সে ১২ জন কৃষককে মেরে ফেলে। যখন কৃষকদের আচমকা মৃত্যু ঘটছিল, তখন পুলিশরা মনে করছিলো দারিদ্রতার কারণে তারা আত্নহত্যা করছে। তবে যখন ধীরে ধীরে এই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায়, তখন তা পুলিশের নজরে এসে যায় । যখন পুলিশ এই বিষয়ে তল্লাশি শুরু করে, তখন প্রমান হয় কৃষকরা আত্মহত্যা করছে না, তাদেরকে কেউ ধারালো অস্ত্র দ্বারা মেরে ফেলছে।
পুলিশ বুঝে ফেলার ফলে ডিয়োগো আ্যালভেস লুটপাত, ছিনতাই, হত্যা করা ইত্যাদি বন্ধ করে দেয় এবং সে ৩ বছর এইসব কাজ থেকে বিরত থাকে। আর ৩ বছরে পুলিশও এই বিষয়টি নিয়ে তল্লাশি এবং এই বিষয়টি মাথা থেকে ঝেরে ফেলে। এতে করে ডিয়োগো আ্যালভেস আবার লুটপাট, ছিনতাই, হত্যা ইত্যাদি শুরু করে। তবে সে অনুভব করতে পারছিল যে, তার একার পক্ষে এ সকল কাজ করা সম্ভব নয়। তাই সে তার সহযোগী নিয়োগ করে বড় গ্যাং তৈরি করে। আর এই গ্যাং এর সদস্য ছিল গরীব ছেলেরা, যাদের টাকার লোভ দেখিয়ে সে সব কাজ করাতো। কারণ, ডিয়োগো আ্যালভেস জানত তাদেরকে টাকার লোভ দেখালে তারা সবধরণের সব করতে রাজি হবে।
ডিয়োগো আ্যালভেস প্রথমে ১০-১২ জন নিয়ে তার গ্যাং তৈরি করে। তারপর ডিয়াগো আ্যালভেস তার গ্যাং নিয়ে বড় বড় লুটপাট করে। আর কিছুদিনের মধ্যে সে অস্ত্রও কিনে ফেলে। এতে করে ডিয়াগো আ্যালভেস এবং তার গ্যাং পুলিশের সাথে যুদ্ধও শুরু করতে পারে। পরবর্তী এক বছরের মধ্যে ডিয়োগো আ্যালভেস আরও অনেক মানুষকে হত্যা করে ফেলে। তবে আকর্ষনীয় ব্যাপার এটাই যে, ডিয়োগো আ্যালভেস মানুষকে মেরে ওই বডিকে কেটে টুকরো টুকরো করত। এতে করে নাকি ডিয়োগো আ্যালভেস আনন্দ পেত। এতে করে বুঝায় যায়, সে আসলেই একজন সাইকো।
ধীরে ধীরে ডিয়োগো অ্যালভেস সিরিয়াল কিলার হিসেবে প্রকাশ পেতে থাকে। তবে তার সন্ত্রাস জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল ছিল, সে একজন ডাক্তারকে হত্যা করে ফেলে। যা তার ৭০ নাম্বার হত্যার মানুষ ছিল। আর এটাই ছিল তার শেষ হত্যাকান্ড। এই হত্যাকান্ড পুলিশের কানে যায় এবং পুলিশ ডিয়াগো আ্যালভেস এবং তার গ্যাংকে ধরে ফেলে। পুলিশ যখন তাকে টর্চার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদ চালায়, ডিয়োগো আ্যালভেস তখন স্বীকার করেন তিনি ৭০ জনকে হত্যা করেছেন। তারপর ডিয়োগো আ্যালভেসকে আদালতে নেওয়া হয় এবং ডিয়োগো আ্যালভেস আদালতে ঠিক একই কথা বলে। আর আদালত তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়।
তবে বিজ্ঞানীদের মাথায় বারবার একই প্রশ্ন ঘুরতে থাকে কিভাবে ডিয়োগো অ্যালভেস এর মাথায় এত অমানবিকতার প্রভাব পড়ল, যেখানে সে একজন শিক্ষিত ভার্সিটিপড়ুয়া ছাত্র ছিল।
আর এই তথ্য উদঘাটনের জন্য বিজ্ঞানীরা আদালতের কাছে ডিয়োগো অ্যালভেস এর মাথাটি নেওয়ার অনুমতি চায় এবং অনুমতি গ্রহন করা হয়। বিজ্ঞানীরা ডিয়োগো আ্যালভেস এর মাথাটি হাতে পাওয়ার পর তার মস্তিষ্কের কোষগুলো বিশ্লেষন করে,তবে বিশ্লেষনে কি প্রমানিত হয়, তা আজ পর্যন্ত জানা যায়নি। বিজ্ঞানীরা আদৌ কিছু বের করতে পেরেছেন কিনা তাও জানা যায়নি। তারা এই বিষয়ে পরবর্তীতে কিছুই বলেননি। তাই সাধারণ ভাবেই সবাই ধরে নিয়েছে যে বিজ্ঞানীরা এখনও কিছু প্রমান করতে পারেননি। কিন্তু আদৌ যে তারা পারেননি, এর জন্যই কি তারা মাথাটিকে ওই ইউনিভার্সাটিতে রেখে দিয়েছেন ! নাকি ঘটনা অন্যকিছু?