পৃথিবীতে মানুষের উৎপত্তির পরপরই প্রয়োজন হয়েছিল খাদ্যের। প্রথমদিকে খাদ্য যোগাতে মানুষকে প্রচুর সংগ্রাম করতে হলেও সময়ের সাথে সাথে সেই সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে। তারপরও কিছু কিছু জায়গায় মানুষ ঐতিহ্য কিংবা উৎসবের নামে সেই প্রাচীন বর্বর মানুষদের মত করে খাদ্য ভক্ষন করে। তেমনই একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব হলো চীনের জুয়াংজি ঝং প্রদেশের ইউলিন শহরের চাইনিজ ডগ ফেস্টিভাল বা ‘কুকুর খাওয়ার উৎসব’। আসুন জেনে নিই অদ্ভুত উৎসব চাইনিজ ডগ ফেস্টিভাল (Chinese Dog Festival) সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য….
চাইনিজ ডগ ফেস্টিভাল পরিচিতি
কুকুরের মাংস খাওয়ার ধুম পরে যায় বলে বিশ্বব্যাপী এটি ‘কুকুর উৎসব’ বা ‘ডগ ফেস্টিভাল ‘ বলেই বেশি পরিচিত। বছরের সবচেয়ে বড় দিনকে উদযাপন করতে চীনের এই প্রদেশটিতে প্রতিবছর পালিত হয় ইউলিন উৎসব (Yulin Festival)। মূলত কুকুরের মাংস খাওয়ার উৎসব হলেও এর থেকে রেহাই নেই বেড়ালদেরও। উৎসবকে কেন্দ্র করে মৃত্যুবরন করে মানুষের খাবার হতে হয় হাজারো বেড়ালকেও।
চীনে বছরের সবচেয়ে বড় দিন হয় ২১ কিংবা ২২ জুন। সাধারনত এই বড়দিন থেকে উৎসবটি শুরু হয় এবং একটানা ১০ দিন পর্যন্ত চলে।
উৎসবটিকে কেন্দ্র করে মানুষজন কুকুর ভক্ষণে মেতে ওঠে। হত্যা করা হয় হাজার হাজার কুকুর। সাধারনত লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে, জবাই করে কিংবা জ্যান্ত অবস্থায় হত্যা করা হয় কুকুরগুলোকে। তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করতে করতে মারা যায় কুকুরগুলো। আর সে সময় কুকুরের কান্না শুনে উল্লাসে মাতে আশপাশের লোকজন !
ভয়ংকর ভাবে জ্যান্ত অবস্থায় আগুনের শিখায় পোড়ানো হয় কুকুরের গায়ের লোম। আস্তে আস্তে কুকুরটি যখন দুর্বল হয়ে পরতে থাকে, তখনই তাদের জ্যান্ত হাড়িতে বসিয়ে দেয়া হয়। তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করতে করতে মারা যায় কুকুরগুলো। আর সে সময় কুকুরের কান্না শুনে উল্লাসে মাতে আশপাশের লোকজন ! অথবা এক কোপে মাথা আলাদা করে রান্না করা হয়।
জ্যান্ত অবস্থায় রান্না হতে হতে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে কুকুরগুলো যন্ত্রণায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পুরোপুরি মারা যেতে তাদের সময় লাগে আরো অনেকক্ষণ। রান্নার পাত্রটির গভীরতাও হয় কম। এতে কুকুরগুলো ডুবেও মারা যেতে পারে না। ফলে তাদের যন্ত্রণা ভোগ করে যেতে হয়। তাও আবার অন্য কুকুরের সামনে। এ নির্মম হত্যাকাণ্ড দেখে মানসিক কষ্টে ভোগে অন্যান্য বন্দী কুকুরগুলো। তাদের ভয়ানক যন্ত্রণা ভোগ করে মরতে হয়…
যন্ত্রণা দিয়ে কুকুর হত্যা করলে মাংসের স্বাদ বাড়ে বলে মনে করে তারা। যে কুকুর যত কষ্ট পেয়ে মারা যায় তার মাংসের দামও ঠিক ততটাই বেশী!
চীনে প্রতিবছর ১০ থেকে ২০ মিলিয়ন কুকুর জবাই করা হয়। এর মধ্যে ১০ হাজারই হত্যা করা হয় ইউলিন উৎসবে। ইউলিনের কুকুর জবাইয়ের দোকানগুলোতে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০টি কুকুর জবাই করা হয়।
ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে এ উৎসব চললেও আসলে এর কোনো ঐতিহ্যগত ভিত্তি নেই। ২০১০ সালে উৎসবটির প্রচলন ঘটানো হয়। অনেকের অভিযোগ, কুকুরের মাংসের ব্যবসায় আরো লাভের মুখ দেখতেই এই নারকীয় উৎসবের প্রচলন ঘটিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও, এখানকার মানুষের ধারনা কুকুরের মাংস খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। মূলত এসব থেকেই পরিচিতি উৎসবটির…