গোসল করতে তো কম বেশি আমাদের সবারই ভালো লাগে, যদিও শীতকালের কথা কিছুটা ভিন্ন। গরমের দিনে, অনেকের ক্ষেত্রে শীতের সময়ও মাত্র একদিন বা দুইদিন গোসল না করলেই খুব অস্বস্তি বোধ হয়।
ভৌগলিক কারণে আমাদের দেশে পানির তেমন কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু আফ্রিকার কিছু কিছু অঞ্চলের আবহাওয়া এবং ভৌগলিক অবস্থান এতটাই রুক্ষ যে, তারা খাবার পানি জোগাড় করতে হিমশিম খেয়ে যায়। গোসল করা তো তাদের কাছে স্বপ্নের মতো ব্যাপার !
নিজেকে কখনো ওরকম পরিবেশে কল্পনা করেছেন? কখনো কি ভেবে দেখেছেন, একটানা অন্তত বছরখানেক গোসল না করলে কি হবে আপনার?
শুধুমাত্র একবছর গোসল না করার কারণে আপনি মারা যাবেন না। তবে এই সময়ের শেষে কিংবা গোসল না করার মধ্যবর্তী সময়টা খুব একটা সুখকর হবেনা বলাই বাহুল্য।
এবার জেনে নেয়া যাক, একটানা এক বছর গোসল না করলে আর কি কি সুবিধা কিংবা অসুবিধার মুখোমুখি হতে হবে…
টানা একবছর গোসল না করলে যা ঘটবে
- প্রথমত, চামড়ার উপরের স্তরে ধুলাবালি লেগে যাবার কারণে হয় আপনার স্কিন প্রচন্ড শুষ্ক হয়ে যাবে অথবা প্রচন্ড তেলতেলে হয়ে যাবে। তবে যেটাই হোক না কেনো, দুটো ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার জন্যে অভয়ারণ্য হয়ে উঠবে আপনার শরীর।
- শরীরের সঙ্কুচিত অংশগুলো, যেমনঃ বগল, কানের পিছনের অংশ, দুই রানের চিপা, মেয়েদের ক্ষেত্রে বক্ষতল ইত্যাদি অংশে ঘাম থেকে জন্ম নেয়া ব্যাকটেরিয়ার আক্রমনে ঘাঁ হতে পারে।
- চুল এবং মাথা না ধোয়ার কারণে খুব দ্রুত চুলের গোড়ায় ময়লা জমতে শুরু করবে। যার ফলে একসময় মাথার ত্বকে খুশকি হবে এবং প্রচন্ড চুলকানির উদ্রেগ করবে।
- একাটানা অনেকদিন গোসল না করার কারণে আপনার মুখমণ্ডলের তৈলাক্ত মৃত চামড়া এবং বাইরের ধুলাবালির সংস্পর্শে ব্রন হবে। ব্রন থেকে জন্মানো ব্যাকটেরিয়া পরিষ্কার না করলে সেটা একসময় মারাত্মক ইনফেকশনের কারণ হতে পারে।
- দুর্ঘটনাবশত আপনার শরীরের কোনো অংশ যদি হঠাৎ কেঁটে যায়, তাহলে সেটা হবে ব্যাকটেরিয়াদের জন্যে আপনার শরীরে প্রবেশের একটা খোলা দরজা। ব্যাকটেরিয়া আপনার শরীরের ভেতর একবার ঢুকতে পারলে খুব দ্রুত বংশবিস্তার করবে এবং অভ্যন্তরীণ ইনফেকশন ঘটিয়ে অঙ্গহানি’র মতো মারাত্মক ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে।
আর হ্যাঁ, যেই পরিমান দুর্গন্ধ আপনার শরীর থেকে ভেসে আসবে তা নিশ্চই বিস্তারিত বলার অবকাশ রাখে না !
সঠিকভাবে গোসল করার কয়েকটি প্রয়োজনীয় নিয়ম
জেনে অবাক হবেন, প্রায় ৯০ পারসেন্ট মানুষই সঠিক নিয়মে গোসল করেনা। ভুল নিয়মে গোসল করে। গোসল করারও কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। যা পাঠ্যপুস্তকে খুঁজে পাওয়া ভার। চলুন জেনে নেয়া যাক বিশেষজ্ঞদের মতামত থেকে পাওয়া গোসল করার কিছু অলিখিত নিয়ম …
- শীতকালে আমরা অনেকেই গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পছন্দ করি। অনেকেই হয়ত জানেন না যে গরম পানি আমাদের চামড়ার জন্যে খুবই ক্ষতিকর। গরম পানি চামড়ার উপরিভাগের প্রাকৃতিক তৈলাক্ততা দূর করে চামড়া খসখসে করে ফেলে। যার ফলে ফুসকুড়ি এবং চুলকানি হতে পারে।
- দিনে ৩-৪ বার গোসল করা, কিংবা লম্বা সময় নিয়ে গোসল করলেও একই সমস্যা দেখা দিতে পারে। সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে গোসল শেষ করা উচিৎ।
- অতিরিক্ত সাবান ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। বাসা থেকে বাইরে না বেরোলে প্রতিদিন গোসলের সময় সাবান শ্যাম্পু ব্যবহার না করাই উত্তম। সাবান ব্যবহার করলেও তা হতে হবে খুব অল্পমাত্রায় !
- গোসল করার সময় শক্ত ব্রাশ বা মোটা কাপড় দিয়ে শরীর মাজা উচিত নয়। শরীর মাজার জন্য পাতলা ব্রাশ ব্যবহার করা উত্তম। মোটা বা শক্ত কাপড় দিয়ে শরীর মাজলে অবশ্যই সময় নিয়ে আস্তে আস্তে মাজতে হবে। এত করে আর স্কিনের কোনোরকম ক্ষতি হবে না।
- গোসলের পর তেল বা লোশন ব্যবহার করে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা উচিৎ