আজকাল টাকা, স্বর্নালঙ্কার কিংবা সমজাতীয় কিছু নিরাপদে রাখার জন্য ব্যাংক একটি বহুল পরিচিত মাধ্যম। কিন্তু কেউ যদি কোনো ব্যাংকে টাকা রেখে মারা যান, তাহলে পরবর্তী সময়ে এ টাকার মালিক কে হবেন? মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া টাকাপয়সা কিভাবে বণ্টন হবে? কারা পাবেন? কিভাবে পাবেন? পরিবার কিংবা নমিনীর অজান্তে থাকা মৃত ব্যক্তির টাকাগুলোই বা ব্যাংক কি করে? আসুন জেনে নেওয়া যাক এ বিষয়ের কিছু তথ্য…
মৃত ব্যক্তিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও মৃত্যুপরবর্তী হিসাব নিকাশ
নমিনী : একসময় হিসাব খোলার ক্ষেত্রে নমিনীর নাম দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিলো না। তখন কেউ ইচ্ছা করলে নমিনী দিতে পারতেন। না দিলেও অ্যাকাউন্ট খোলা যেত। যাদের নমিনী দেয়া থাকত, তারা মারা গেলে নমিনীর সাথে যোগাযোগ করে টাকা দিয়ে দেয়া হত। টাকা বন্টনের সেই নিয়মটি নিচে দেয়া হলো…
টাকার বন্টন :
- যখন অ্যাকাউন্ট খোলার সময় নমিনীর নাম দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল না, তখন ব্যাংক ব্যক্তির দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী যোগাযোগ করতো। যে ব্যক্তি নমিনি না রেখে মৃত্যুবরণ করতেন, তাঁদের উত্তরাধিকারদের পোহাতে হত অনেক আইনি ঝামেলা। আদালত থেকে সাকসেশন সার্টিফিকেট নিয়ে টাকা উত্তোলন করতে হত। আদালত থেকে সাকসেশন সার্টিফিটিকেট নিতে অনেক সময়ের দরকার হয়। এ সময়ের মধ্য মৃত ব্যক্তির পরিবার যথেষ্ট সমস্যার মুখোমুখি হন।
- মৃত ব্যক্তি যদি মুসলিম হন, তাহলে মুসলিম আইন অনুযায়ী তাঁর রেখে যাওয়া টাকার ভাগ হবে। মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীরা এ টাকার মালিক হবেন। মুসলিম আইনে যেভাবে সম্পত্তি ভাগ হওয়ার কথা বলা আছে, ঠিক সেভাবেই এ রেখে যাওয়া টাকার ভাগ হবে। কোনো উত্তরাধিকারীকে অন্য উত্তরাধিকারীরা বঞ্চিত করতে পারবেন না। আইন অনুযায়ী নমিনী শুধুমাত্র টাকা তোলার অধিকার রাখেন। নমিনী হওয়ার কারণে তিনি কোন বিশেষ অধিকার ভোগ করতে পারবেন না।
পরিবার কিংবা নমিনীর অজান্তে অ্যাকাউন্টের টাকা
অনেকেই আছেন যারা ব্যক্তিগতভাবে গোপনে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে সেখানে টাকা জমা রাখেন। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কথা তিনি ছাড়া তার পরিবার পরিচিতদের মধ্যে আর কেউই জানেন না। তাহলে এধরণের মৃত ব্যক্তিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট গুলোতে জমাকৃত টাকা কোথায় যায়?
- অনেক ক্ষেত্রে অনেকে একের অধিক অ্যাকাউন্ট খুলে থাকেন বিশেষ প্রয়োজনে। সেক্ষেত্রে যখন নমিনী দেওয়ার নিয়ম ছিল না, তখন ব্যাংক যদি পরিবারবর্গের কোনো খোঁজ না পেত, তখন সেই একাউন্টের টাকা বাজেয়াপ্ত করা হত।
- বর্তমান আইন অনুযায়ী নমিনী থাকা বাধ্যতামূলক। যদি কোনো ছোট শিশুকে নমিনী করা হয়, তাহলে মৃত ব্যক্তির পরিবার সেই শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত সেই টাকা তুলতে পারবে না। কিন্তু কোনো কারনে যদি ব্যাংক মৃত ব্যক্তির পরিবার কিংবা নমিনীর খোঁজ না পায়, কিংবা তাদের অজান্তে থাকায় টাকা তুলতে না পারে, তাহলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর সেই টাকার নিয়ন্ত্রনভার বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকে চলে যাবে !