সিনেমা, মানুষের চিত্তবিনোদন এর একটি অন্যতম প্রধান উপায়। সিনেমা এমন একটি মাধ্যম যার সাহায্য নিয়ে সমাজ, মানুষের ব্যক্তিগত জীবন, একটি রাষ্ট্রের পরিস্থিতি, চিন্তাধারা সবকিছু প্রকাশ করা যায়। সিনেমা জগৎ এ মানুষের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ থাকে একশন মুভি, রোমান্টিক, সাইন্স ফিকশন কিংবা হরর মুভির প্রতি।
মানুষের আকর্ষণ এর দিক যাচাই করে নির্মাতারা তৈরি করেন এসব সিনেমা। সিনেমা দেখে আনন্দ পাই আমরা। কিন্তু সিনেমা তৈরির সময় ঘটে যাওয়া যাবতীয় ঘটনা গুলো সম্পর্কে আমরা কতটা জানি? এমন কিছু সিনেমা আছে যেগুলোর অন দ্যা স্ক্রিন এর প্রাপ্তি গুলো সুখকর হলেও বিহাইন্ড দ্যা স্ক্রিন এর প্রাপ্তিগুলো মোটেও সুখকর নয় ! সে কারণেই সিনেমাগুলোকে বলা হয়ে থাকে অভিশপ্ত সিনেমা !
দ্য এক্সরসিস্ট : The Exorcist
১৯৭৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর হলিউডে মুক্তি পায় উইলিয়াম ফ্রেডকিন এর একটি হরর মুভি। নাম দ্য এক্সরসিস্ট (The Exorcist) ! মুক্তি পাওয়ার পর প্রথমে মাত্র ২৬টি থিয়েটারে এই মুভিটি বুক করা হয়। এরপর মুভিটি তার গন্ডি পেরিয়ে অনেকদূর অগ্রসর হয়। তবে এই মুভিটি নির্মাণ করতে পরিচালকের আড়াই বছর সময় লেগেছিলো। সর্বকালের সেরা হরর মুভিগুলোর ভিতর অন্যতম মুভি এটি।
১৯৭৩ সালের এই মুভিটি তখনকার সময় সবচেয়ে ভয়ানক মুভি ছিলো। একটি বাস্তব সত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই মুভির কাজ শুরু হয়। তবে এই সিনেমার কাজ শুরুর প্রতিটি পদে এই সিনেমা সংশ্লিষ্ট অনেককে শিকার হতে হয়েছে অনেক রহস্যময় ঘটনার। এই সিনেমার শুটিং শুরু হওয়ার ২ সপ্তাহের ভিতর ঘটে প্রথম অঘটন। শুটিং শুরুর ২ সপ্তাহের মাথায় শুটিং সেডে আগুন লেগে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি সাধন হয়। ২ জন ক্রু আহত হয় গুরুতরভাবে।
তবে সিনেমার প্রধান চরিত্র বাচ্চা রোলান্ডো (রেগেন ম্যাকলিন) অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যান, যেখানে তার কোন সম্ভাবনাই ছিলো না। এমনকি তার গায়ে একটি সামান্য ক্ষতও তৈরি হয়নি। এই ঘটনার পর নতুনভাবে সবকিছু শুরু হয়। কিন্তু এই সিনেমার সাথে প্রায় সবাই সর্বক্ষণ অনুভব করত, তাদের পাশে অদৃশ্য কেউ একজন বিরাজ করছে।
শুটিং সেডে আগুন লাগায় ১ মাস পরে দ্য এক্সরসিস্ট সিনেমার বাচ্চা মেয়ে রোলান্ডোর মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করা অভিনেত্রী গাড়ি এক্সিডেন্টে গুরুতর আহত হন। এর ফলে শুটিং আরো ৩ মাস পিছিয়ে যায়। সিনেমায় কাজ করার সময় মেকাপম্যান হিসেবে কাজ করা ব্যক্তিদের ১ জন মানসিকভাবে আসুস্থ হয়ে পড়েন। এমনকি পরিচালক নিজে স্বীকার করেন, তার নিজ বাড়িতে অবস্থান করার সময় তিনি প্রায়ই তার বাড়িতে কেউ হেঁটে যাওয়ার শব্দ পেতেন।
দ্য এক্সরসিস্ট সিনেমাতে পার্শ্ব চরিত্রে অনেকেই ছিলেন, যারা ক্ষুদ্র চরিত্রের জন্য অভিনয় করেছিলেন। এদের ভিতর একজন অভিনেতা Mary Boylan এবং Dick Callinan নামের আরেকজন ক্রু হঠাৎ করেই নিরুদ্দেশ হয়ে যান। ২ সপ্তাহ পরে Dick Callinan নামের ব্যক্তির খোঁজ মেলে একটি পরিত্যক্ত সরাইখানায় মৃত অবস্থায়। কিন্তু মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। আরেকজন Mary Boylan আত্মহত্যা করেন রহস্যজনকভাবে !
দ্য এক্সরসিস্ট সিনেমার কাজ যখন প্রায় শেষ পর্যায় তখন আরেকটি দূর্ঘটনা ঘটে, যাকে স্বাভাবিক বলে মনে হয়নি। এই সিনেমায় রোলান্ডোর আত্মার শব্দ যিনি দিয়েছিলেন Mercedes McCambridge সেই মহিলার ছেলে তার নিজের স্ত্রী এবং ছোট বাচ্চাকে নৃসংশ ভাবে হত্যা করে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায় তারা ব্যক্তিগত জীবনে সুখী ছিলেন। এই ঘটনার পরেই খুনি স্বামী নিজেও আত্মহত্যা করেন। তার সুইসাইড নোটে লেখা ছিলো, “আমি এবং আমার স্ত্রী ও সন্তানের মৃত্যুর জন্য কোন অদৃশ্য শক্তি দায়ী।”
এভাবে শত প্রতিকুলতার মধ্যে দিয়ে দ্য এক্সরসিস্ট সিনেমার শুটিং শেষ হয়। সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেছিলেন, “আমি এই সিনেমা নির্মাণ করে অনেক বড় ভুল করেছিলাম, যার মাশুল আমাকে গুণতে হয়েছে।”
সিনেমাটি জনগণের কাছে বিপুল সাড়া পায়। মুভি রিলিজ হওয়ার পরে প্রথম দেখে অনেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন, উত্তেজনা ও ভয়ে অনেকেই হলে বমি করে দেন। একটি সিনেমাহলে ১ জন হার্ট অ্যাটাকও করেন। ১ জন মহিলার এই সিনেমা দেখার পরে অকাল গর্ভপাত হয়। এক কথায় বলা যেতে পারে, এই সিনেমাটি হলিউডে অন্যতম অভিশপ্ত সিনেমা।
তবে দ্য এক্সরসিস্ট সিনেমাটি অভিশপ্ত হলেও ব্যবসায়িক দিক থেকে অনেক সফলতা অর্জন করে। ৪৪১ মিলিয়ন ডলার আয়ের রেকর্ড করে এই সিনেমা। ১০টি একাডেমিক এওয়ার্ড পায়। বেস্ট সাউন্ড মিক্সিং ও বেস্ট এডাপ্টেড স্ক্রিনপ্লের জন্য পুরষ্কার পায় এই সিনেমা। এই ব্যবসায়িক সাফল্যই শেষ পর্যন্ত চাপা দিতে পেরেছিলো সিনেমাটির কালো অতীত এবং অভিশপ্ততাকে !
সিনেমাটি এখান থেকে (The Exorcist 1973) দেখে নিতে পারেন বা ডাউনলোড করতে পারেন ! ধন্যবাদ…
আরো পড়ুনঃ