বর্তমান পৃথিবীতে রহস্য শব্দটির উপর মানুষের মানুষের আকর্ষণ চুম্বকের মত। মানুষ যেনো এই শব্দটি শুনলেই আকর্ষিক হয়। রহস্য উদঘাটন করতে মানুষ সবসময়ই উদগ্রীব। যুগ যুগ ধরে মানুষ সমাধান করেছে নানান সব রহস্যের। তবে সৃষ্টির সেরা জীব হওয়ার সত্ত্বেও স্রষ্টার পক্ষপাতিত্ব মানুষের জন্য বাধা হয়েছে কিছু কিছু সময়।রহস্য থেকেছে অবিমাংসিত।
পৃথিবীতে রহস্যজনক স্থান এর সংখ্যা কম নয়। বিজ্ঞানী এবং কৌতুহলি মানুষের অদম্য ইচ্ছার কাছে অনেক রহস্যময় স্থান পরাজিত হলেও এখনো অনেক স্থান রয়েছে যা মানুষের কাছে এখনো অধরা। স্রষ্টার লীলাখেলায় সেসব স্থান মানুষের কাছে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। এমন অনেক স্থানগুলোর মধ্যে কিছু স্থানের বিবরণ তুলে ধরা হলো…
সুকাত্রা দ্বীপ (Socotra Island), ইয়েমেন : বর্তমান পৃথিবীর রহস্যজনক দ্বীপগুলোর মধ্যে সুকাত্রা দ্বীপ অন্যতম। এই দ্বীপ টি ইয়েমেনে অবস্থিত। এই দ্বীপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং একইসাথে রহস্যময় বিষয় হলো এই দ্বীপের উদ্ভিদ গুলো। দ্বীপের দৈর্ঘ্য ১২০ মিটার প্রস্থ ৪০ মিটার। এখানকার গাছগুলো অদ্ভুত প্রকৃতির।অদ্ভুত গাছ গুলোর মদ্ধে অন্যতম হল ‘ড্রাগন ব্লাড ট্রি’। এই গাছ দেখতে ছাতার মতো। এই গাছের রস দিয়ে তৈরি হয় রাবার। এখানে যেসব উদ্ভিদ পাওয়া যায় তাদের জীনতত্ত্ব সাধারণ জীববিজ্ঞান বহির্ভূত। বিজ্ঞানীদের ধারণা এখানকার উদ্ভিদগুলো দ্বীপের আবহাওয়া ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের কারণে এধরনের ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অধিকারি। স্থানীয় মানুষের দেয়া নাম ডেজার্ট রোজ বা মরুভূমির গোলাপ নামে একটি গাছ এর উৎপত্তি স্থল এই দ্বীপ। এই দ্বীপে প্রায় ৭০০ রকমের গাছপালা রয়েছে যেগুলো খুবই দুর্লভ। এই দ্বীপের আবহাওয়া প্রচন্ড গরম এবং শুস্ক।
শেম্পেইন লেক (Champagne lake) : প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি হলো শেম্পেইন লেক। নিউজিল্যান্ড এর Wai-O-Tapu তে এই লেক অবস্থিত। নিউজিল্যান্ড এর রাজা লর্ড মাউরিওর চাচা এই লেক আবিষ্কার করেন। পুরো অঞ্চলটিই তিব্র ভাবে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি,পানি, বাষ্প ও আরো বহু অদ্ভুত প্রাকৃতিক বৈশিষ্টে গঠিত ও পরিপুর্ণ। এই লেকের উপরের দিক দেখলে মনে হবে কমলা রঙের আস্তরণ দিয়ে লেকটি ছেয়ে দেয়া হয়েছে। তবে কমলা রঙের আস্তরণ হলো গ্রাফাইট। গ্রাফাইটের উপরে বুদবুদ উঠতে দেখা যায়। সেটি হলো কার্বন ডাই অক্সাইড। ভূতাত্ত্বিক রা মনে করেন এই লেকের আশেপাশে যে ধরনের প্রাকৃতিক পরিবেশ তাতে এই অঞ্চলে এই লেক গড়ে ওটা সত্যি বিস্ময়কর। এই লেকের পার্শবর্তী এলাকার তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এই এলাকা থেকে কিছু দূর সরে আসলেই তাপমাত্রা কমে ১০-১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে আসে। তুষারপাত হলেও এই লেকের আশেপাশের তাপমাত্রাতে কোন পরিবর্তন আসেনা যা সত্যি অভাবনীয়।
ডনজুয়ান হ্রদ (Don Juan Pond), এন্টার্কটিকা : ডেড সি কে অনেকেই পৃথিবীর সবচেয়ে লবণাক্ত হ্রদ বলে মনে করেন কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে লবণাক্ত হ্রদ হলো ডনজুয়ান হ্রদ। ১৯৮১ সালে ‘Don Roy’ এবং ‘John Hickey’ এই হ্রদ আবিষ্কার করেন বলে তাদের নাম অনুসারে এই হ্রদ এর নাম ডনজুয়ান হ্রদ রাখা হয়। এই হ্রদে পানির লবণাক্ততার পরিমাণ ৪০% যা সমুদ্রের পানির লবণাক্ততার চেয়ে ৮ গুণ বেশি। ১৯৮৩ সালে কানাডার এক দল বিজ্ঞানী এই হ্রদ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে সবচেয়ে আশ্চর্য তম বিষয়টির সন্ধান পান। যেই হ্রদের পানির লবণাক্ততা ৪০% তার আশেপাশের এলাকার পানির লবণাক্ত থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিজ্ঞানীরা সেখানে অনুসন্ধান চালিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি পান, যেখানে লবণাক্ততার পরিমাণ ২-৩% যা অবিশ্বাস্য।
বোভেট দ্বীপ (Bouvet Island) : পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা রহস্যময় দ্বীপগুলোর মধ্যে বোভেট দ্বীপ অন্যতম। বোভেট দ্বীপ এমন একটি দ্বীপ যেখানে যাওয়া মানুষের পক্ষে অসাধ্য বললেও কম বলা হবে। এটি দ্বীপ অবস্থিত সাইবেরীয় মেরু অঞ্চলে। স্থল পথে সেখানে যাওয়ার কোন উপায় নেই। জলপথে যাওয়ার রাস্তা এতোটাই দূর্গম যে সেখানে গিয়ে বেচে ফিরে আসা সম্ভব নয়। কৃত্তিম উপগ্রহের মাধ্যেমে এই দ্বীপ সম্বন্ধে জানা গেছে। বোভেট দ্বীপে কোন মানববসতি গড়ে ওঠেনি। তবে ষাটের দশকে এই দ্বীপে লাইফবোট পড়ে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু ব্যবহারকারীর সন্ধান মেলেনি। এই দ্বীপে বছরে ১৫-২০ টি প্রলংকারী ঝড় হয়ে থাকে। কিন্তু সেখানকার উদ্ভিদ ও পারিপার্শ্বিক বস্তুগুলো এতোটাই শক্ত যে দ্বীপের গায় সামান্য আচড় কাটতেও পারে না এসব ঝড়। বলা হয়ে থাকে বোভেট দ্বীপের পাশেই আরেকটি দ্বীপ ছিলো যা এখন গায়েব হয়ে গেছে। তবে বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান করে এমন কোন আলামত পাননি। কেউ কেউ মনে করেন এখানে প্রাণের কোন স্পন্দন নেই। আবার কেউ কেউ মনে করেন এখানে সিল, পেঙ্গুইন এর বিচরণ রয়েছে। তবে সবই মানুষের ধারণা। এই দ্বীপ সম্বন্ধে সঠিক তথ্যগুলো এখনো বিজ্ঞানীদের পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি।
আরো পড়ুনঃ