সিনেমার ইতিহাসে একটি অভিশাপ হিসেবে পরিচিত দ্যা ওমেন ! হরর সিনেমা হিসেবেই জন্ম হয়েছিলো ছবিটির। কিন্তু এই হরর সিনেমাটাই যে এত অভিশপ্ত হবে, তা কি সিনেমাটি নির্মাণের সময় পরিচালক ঘুণাক্ষরেও টের পেয়েছিলেন? একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে যাওয়া হরর সিনেমা দ্যা ওমেন নিয়েই আজকে আমরা কথা বলবো। চলুন জেনে নেয়া যাক এই সিনেমা নির্মাণ পরবর্তী যত অঘটনের কথা…
দ্যা ওমেন (The Omen 1976)
১৯৭৬ সালে মার্কিন-ব্রিটিশ যৌথ প্রযোজনার হরর ছবি ‘দ্যা ওমেন’ মুক্তি পায়। রিচার্ড ডোনার পরিচালিত এই ছবিটি পরবর্তীকালে কাল্ট মুভি’র মর্যাদা পায়। গ্রেগরি পেক, লি রেমিক, ডেভিড ওয়ার্নার অভিনিত এই ছবি দেখতে বসলে আজও দর্শকদের থমকে যেতে হয়। নিঃশব্দে কখন যে আতংক গ্রাস করে, টের পাওয়া যায় না। এক দম্পতি আর তাদের এক শিশুপুত্রকে নিয়ে এক সুখের সংসার কীভাবে তছনছ হয়ে যায় অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রকোপে, এটাই ছিলো এই সিনেমার বিষয়বস্তু।
কেনো এই সিনেমাটি অভিশপ্ত, তা বলার আগে সিনেমার কাহিনীটা সংক্ষেপে একটু জেনে নেয়া যাক…
ঘটনার একটা পর্যায়ে গিয়ে সিনেমার ওই দম্পতি আবিস্কার করে, তাদের নিষ্পাপ চেহারার শিশুপুত্রটি আসলে শয়তানের প্রতিরূপ। অপক্ষমতার অধিকারী সেই শিশুকে ঘিরে শুরু হয় একের পরে এক অমঙ্গলজনক ঘটনা। ঘটতে থাকে অপমৃত্যু। শিশু দামিয়েন যে আসলে অ্যান্টিক্রাইস্ট, সেটা টের পাওয়া যায় অনেক পরে। কিন্তু ততক্ষণে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেছে। ছবির শেষেও দামিয়েনরূপী অ্যান্টিক্রাইস্টই শেষ হাসিটি হাসে…
দ্যা ওমেন সিনেমাটি যে কারণে অভিশপ্ত
এই সিনেমাটি নির্মাণাধীন সময় থেকে মুক্তির পর পর্যন্ত যে কয়টি দুর্ঘটনা ঘটেছিলো, তা জানার পর সিনেমাটিকে অভিশপ্ত না বলে আর উপায় নেই।
- ছবির শ্যুটিং চলাকালীন সময়েই নায়ক গ্রেগরি পেক এক বিমান বিভ্রাটে পড়েন। আটলান্টিকের উপরে বজ্রবিদ্যুৎ ঘটিত গোলযোগে থমকে যায় পেকের বিমান। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান মহানায়ক।
- প্রথম বিমান দুর্ঘটনার এক সপ্তাহ পরে ছবির নির্বাহী প্রযোজক মেস নিউফিল্ডও আরেক বিমান দুর্ঘটনায় পড়েন। সেই দুর্ঘটনার কারণটাও ছিলো প্রথমবারের মত সেই বজ্রবিদ্যুৎ ঘটিত গোলযোগ !
- সিনেমার প্রযোজক হার্ভে বার্নহার্ড তখন ছিলেন রোমে। দেশে ফেরার সময় তিনিও বিমানে বজ্রবিদ্যুৎ ঘটিত গোলযোগে পড়েন।
- ইসরায়েল যাওয়ার জন্য পেকের একটি বিশেষ বিমান ধরার কথা ছিলো। কপাল ভালো, কোনো একটা কারণে তিনি ফ্লাইট বাতিল করেন। সেদিনই ওই প্লেনটি ক্র্যাশ করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই বিমানের কোনো যাত্রীরাই আর জীবিত ফিরতে পারেননি।
- হল্যান্ডে সিনেমার ডিজাইনার জন রিচার্ডসনের গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। রিচার্ডসনের সঙ্গিনী লিজ মুর মারা যান। লিজের শরীরের আঘাতগুলি দেখে স্তম্ভিত হন জন। সিনেমার একটি বিশেষ দৃশ্যে অপঘাতে মৃত এক ব্যক্তির আঘাতের যে ডিজাইন করেছিলেন তিনি, হুবহু সেই আঘাতগুলিই তাঁর সঙ্গিনীর দেহে। এখানেই শেষ নয়। দুর্ঘটনার জায়গাটাকে ভালোভাবে খেয়াল করতে গিয়ে জন দেখেন, কাছেই একটা নোটিশ। তাতে ওলন্দাজ ভাষায় লেখা রয়েছে— ‘ওমেন, ৬৬.৬ কিমি’ ! (ওমেন একটি ডাচ শহর। আর ৬৬৬ শয়তানের নিজস্ব সংখ্যা। এই সংখ্যাটি আবার সিনেমায় বার বার দেখানো হয়েছিল)
- সিনেমায় ব্যবহারের জন্যে একপাল রটওয়েলার কুকুর আনা হয়েছিলো। হঠাৎই একদিন কুকুরগুলি খেপে গিয়ে তাদের ট্রেইনারকে আক্রমণ করে বসে।
- সিনেমার শ্যুটিং শুরুর কয়েকদিন আগে নায়ক গ্রেগরি পেকের ছেলে আত্মহত্যা করেন।
এতকিছুর পর এই সিনেমাকে অভিশপ্ত না বলে আর কোনো উপায় থাকে? এখন পর্যন্ত বিশ্বের সকল সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত অভিশপ্ত সিনেমা হিসেবে দ্যা ওমেন সিনেমাটি জায়গা করে বসে আছে। আর এই সিনেমাটিও এখন খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর ! চাইলেই কোথাও খুঁজে দেখতে পাবেন না