নদীপথে যাত্রায় আমাদের দেশে রকেট স্টীমার এর বিরাট ভুমিকা রয়েছে। প্রায় শত বছর ধরে আমাদের দেশের নদীতে এই রকেট স্টীমারগুলো চলাচল করছে। যা কিনা এখনো পরিবর্তন হয়নি। বরং বহাল তবিয়তেই টিকে আছে !
রকেট স্টীমার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে চলুন জেনে নেয়া যাক রকেট স্টীমারে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ফেসবুক থেকে পাওয়া কিছু তথ্য…
- অত্যন্ত পুরনো হওয়ায় সবগুলো স্টীমারের কন্ডিশন অত্যন্ত খারাপ। বিশেষ করে ইঞ্জিনের অবস্থা ভয়াবহ। মাঝপথে ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটে। তখন ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয় মাঝ নদীতে।
- কেবিনগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। বৃষ্টির সময় পানি ঢুকে একাকার হয়ে যায়। পরিবার নিয়ে এসব কেবিনে যাওয়াটা সুবিধাজনক না।
- এগুলোতে আধুনিক নেভিগেশন সিস্টেম নেই। শীতকালে কুয়াশার সময় মাঝ নদীতে নোঙ্গর করে বসে থাকে। ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে দুপুর হয়ে যেতে পারে। সেই তুলনায় এদের নতুন দুটি বোট “বাঙালী” এবং “মধুমতি” অনেক ভালো। এই দুটো জাহাজে আধুনিক নেভিগেশন সিস্টেম আছে।
- শীতকালে কুয়াশার কারনে মাঝনদীতে নোঙ্গর করে থাকার সময় অন্য লঞ্চ এসে ধাক্কা মেরে দেয়ার ঘটনাও অতীতে ঘটেছে, যাতে একজন নিহতও হয়।
- গরমের জন্য ডবল টাকা ভাড়া দিয়ে মানুষ ফার্স্ট ক্লাশে যায় এসির জন্য। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় কেবিনগুলোতে এসি নষ্ট থাকে। সেগুলো ঠিক করার কোন ব্যবস্থা থাকে না।
- অনেক সময় যান্ত্রিক ক্রুটির কারনে কেবিনে ফ্যানও চলে না। জাহাজে যদি একজন ইলেকট্রিশিয়ান থাকার কথা, কিন্তু তাকে প্রায়ই খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন অসহ্য কষ্ট দায়ক একটা জার্নি করতে হয়।
উপরের অভিজ্ঞতামূলক অংশটুকু পড়ে এটাকে অভিযোগ বলেই মনে হবে। এ অভিযোগগুলো কতটা সত্য এবং যৌক্তিক, এখন আমরা তাই জানবো ! চলুন একনজরে জেনে নেয়া যাক, রকেট স্টীমার সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য !
রকেট স্টীমার
বৃটিশ শাসনামলে রকেট স্টীমার ঢাকা-বরিশাল, বরিশাল-গোয়ালন্দ রুটে যোগাযোগ রক্ষা করত। তখনকার সময়ের মানুষেরা এই স্টীমারে করে গোয়ালন্দ গিয়ে ট্রেনে কলকাতা যেতে পারতেন। প্রায় শত বছর আগে থেকে ইংল্যান্ড এর রিভার এন্ড স্টিম নেভিগেশন (আরএসএন) কোম্পানীর বিশাল বিশাল সব স্টীমার চলাচল করত এ ঘাট দিয়ে। বলা হয়ে থাকে, বৃটিশ সরকার নাকি একবার বরিশালে রেলপথ সম্প্রসারনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যবসা হারানো ভয়ে স্টীমারের মালিকরা বৃটেন বসে কলকাঠি নেড়েছিলো বলে বরিশালে আর রেলপথ যায়নি। আগে এসব ষ্টিমার কয়লা দ্বারা উৎপাদিত ষ্টিমে চলত বলে এগুলোকে ষ্টিমার বলা হতো। এখন চলে ডিজেলে, তবু নাম রয়ে গেছে ষ্টিমার। আবার কোন এক অজানা কারণে এর অন্য নাম রকেট সার্ভিস। হয়ত আগের দিনে এটি ছিলো সবচে গতি সম্পন্ন । তাই এই নৌযানের এমন নামকরণ !
সারা বিশ্বে হাতে গোনা যে কয়টি প্যাডেল স্টীমার আছে, তারমধ্যে ৫টি আছে বাংলাদেশে। এগুলোর নাম হলো, মাসহুদ, অস্ট্রিচ, লেপচা, ও টার্ন। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় প্যাডেল স্টীমার হচ্ছে মাসহুদ ও অস্ট্রিচ ! প্রায় শতবর্ষী পুরনো এ স্টীমার দুটি তৈরি হয়েছিলো যথাক্রমে ১৯২৮ ও ১৯৩৮ সালে কলকাতার গার্ডেন রিচ ওয়ার্কশপে। বড় বড় দুটি প্যাডেল দিয়ে এই নৌযানগুলো সামনের দিকে এগোয়, তাই এগুলোকে প্যাডেল স্টীমার বলা হয়। তবে সর্বসাধারণের মাঝে এগুলো রকেট স্টিমার নামেই পরিচিত !
রকেট স্টীমার কতটা নিরাপদ ?
নৌপথে নিরাপত্তার হিসেব নিকেশ করা হয় নৌযানের স্ট্যাবিলিটি দিয়ে। শুনে অবাক হবেন, আমাদের গর্বের এই রকেট স্টীমারগুলোই দেশের একমাত্র সঠিক স্ট্যাবিলিটি ক্যালকুলেট করে নির্মাণ করা নৌযান। আর তাই শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করেও এরা এখনো শতবছর ধরে বহাল তবিয়তে টিকে আছে। এবং আরো দীর্ঘকাল টিকে থাকবে। এগুলো এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, ছোট বড় ঝড়-ঝঞ্ঝা আর দুর্ঘটনাও এগুলোকে সহজে ডোবাতে পারেনি !
তাই স্টীমার কর্তৃপক্ষের সার্ভিস টুকটাক খারাপ হলেও নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে রকেট স্টীমারেই আপনি যাতায়াত কর পারেন নির্বিঘ্নে !