মাইনী নদী , নাম শুনেই অবাক লাগছে না? এই নদী আবার কোথেকে এলো ! বাংলাদেশের মোট নদ-নদীর সংখ্যা প্রায় ২৩০টি হলেও শাখা প্রশাখা সহ এর সংখ্যা প্রায় আট শতাধিক। তারই মধ্যে একটি এই মাইনী নদী ! এটি কিন্তু ছোট কোনো নদী নয়। বেশ বড়সড়ই একটা নদী।
গুগল ঘাটলে এই নদী সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও উইকিপিডিয়া আপনাকে এক লাইনের মধ্যে কিছু তথ্য দিবে –
“মাইনী নদী বাংলাদেশের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১০৯ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৬২ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক মাইনী নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী নং ০৫” – (তথ্যঃ উইকিপিডিয়া)
মাইনী নদী পরিচিতি
ষাটের দশকের আগেও মাইনী উপকূল ছিল রিজার্ভ এলাকা। ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধের ফলে শত শত গ্রামের উদ্বাস্তু হওয়া পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য ১৯৬৫ সালে মাইনী উপকূল রিজার্ভ খুলে দেওয়া হয়। তখনই মাইনী উপকূলে ব্যাপকহারে জনবসতি বাড়তে থাকে। এসব ক্রমবর্ধমান বসতিগুলো নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে দিঘীনালা।
দীঘিনালায় যেমন সারি সারি পাহাড় রয়েছ, তেমনি রয়েছে বিস্তীর্ণ সমতল মাঠ। এ মাঠের একপাশের বুক চিঁড়ে সাপের মত আঁকাবাঁকা হয়ে বহুদূর বয়ে গেছে ছোট্ট একটি নদী, নাম তার মাইনী ! এই মাইনী নদীকে কেন্দ্র করেই দীঘিনালার কৃষিজীবী মানুষের জীবন ও জীবিকার ধারা প্রবাহিত হয়।
চীরসবুজ মাইনী নদী ! সারা বছরই এ নদীর দুইধারে ধান আর নানান রকমের সবজির চাষ হয়। মাইনী নদীকে নির্ভর করে তার দুপাশে গড়ে উঠেছে শত শত গ্রাম। এই গ্রামগুলোতে বসবাস করা হাজার মানুষের সুখ-দুঃখের সাক্ষী হয়ে মাইনী নদী বিরামহীন ভাবে বয়ে চলেছে যুগের পর যুগ। যদিও এই নদীর কথা আমাদের অনেকেরই অজানা !
মাইনী নদীর বর্তমান অবস্থা
দীঘিনালার প্রাণ এই মাইনী নদীর বর্তমান অবস্থা খুবই করুণ। শীর্ণকায়, মুমূর্ষু দশা নিয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছে এ নদী। দুপাশে ফসলি সবজি চাষের বদলে এখন তামাক চাষই বেশি দেখা যায়। তামাক চাষে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক স্যার ব্যবহার করা হয়। আর সেই সাথে বিষাক্ত কীটনাশকের ব্যবহার তো আছেই। এই রাসায়নিক বর্জ্য আর বিষ ক্রমাগত মিশে যাচ্ছে মাইনী নদীর পানিতে। ফলে মাইনী নদীর জীববৈশিষ্ট্য এখন হুমকির মুখে !
আগে মাইনী নদীতে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যেত, এখন আর তা পাওয়া যাচ্ছে না। টুকটাক যে মাছগুলো মাইনীতে পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো খাওয়াও হয়ে যাচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ। দিঘীনালায় শত শত তামাক চুলা রয়েছে, এ চুলাগুলোতে প্রতি বছর হাজার হাজার টন পাহাড়ি কাঠ পুড়ানো হয়। বন জঙ্গলও ধ্বংস হচ্ছে ব্যাপকহারে। যার ফলে পাহাড় ক্ষয়ে মাইনী নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন।
এভাবে পাহাড় ক্ষয়ে নদী ভরাট হওয়ার বর্ষার সময় নদীর নাব্যতা কমে। এছাড়াও পাড় ভাঙন হচ্ছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। আর চুলাগুলোতে প্রতি তামাক সিজনে যে হারে তামাকের বিষাক্ত গ্যাস বের হয় তা দীঘিনালা মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। সবদিক থেকে হিসেব নিকেশ করে দেখা যায়, মূলত তামাক চাষই এখন মাইনী নদী ধ্বংসের একমাত্র মূল কারণ !