ফেমিন ফুড বা পোভার্টি ফুড হচ্ছে কমদামী এবং সহজলভ্য খাবার, যা কমবেশ হাতের কাছেই পাওয়া যায়। এই খাবারগুলো দুর্যোগ ও দুর্ভিক্ষের কারণে অনাহারে থাকা ক্ষুদার্থ মানুষদের খাদ্যের যোগান দিতে সরবরাহ করা হয়। আরেকটু সহজভাবে বললে দুর্যোগগ্রস্ত, বন্যা কবলিত কিংবা যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রীর সাথে যে খাবার বিতরণ করা হয়, তাকেই বলা হয় ফেমিন ফুড বা দুর্ভিক্ষের খাবার ! ইংরেজিতে এটি Famine food বা Poverty food নামে পরিচিত। এই খাবারগুলো একরকম বিপদের বন্ধু …
ফেমিন ফুড এর অন্তর্গত খাবারগুলো খুব একটা পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হয় না। বিস্তর মানুষের মাঝে এই খাবারগুলো বিতরণ করা হয়। যদিও এই খাবারগুলোকে গুরুত্বহীন হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। দেশ ও জাতি বিভেদে এই খাবারগুলোর ধরণ ও চাহিদা আলাদা রকমের হয়। যেমন ধরা যাক, বাংলাদেশে আমরা বন্যাকবলিত এলাকায় যে খাবার ত্রাণ হিসেবে দিয়ে থাকি, সেখানে মুড়ি চিড়া ও পিঠা সহ নানান ধরণের শুকনো খাবার থাকে। এই খাবারগুলো আমরা প্রতিনিয়তই বাসায় কমবেশ খেয়ে থাকি। অন্যদিকে আফ্রিকার কোনো একটি দেশের কথা যদি বিবেচনা করা হয়, সেখানকার মানুষরা দুর্ভিক্ষের সময় বিপদে পরে কাঁকড়া বা লবস্টার (বিচ্ছু) জাতীয় জলজ প্রাণীগুলো খেয়ে থাকে। আবার ঠিক এই কাঁকড়া বা লবস্টারের মত খাবারগুলোই সেন্ট্রাল আমেরিকার রেস্টুরেন্টগুলোয় চড়া দামে পরিবেশন করা হয় ! অর্থাৎ, স্থান ও জাতিভেদে ফেমিন ফুড বা দুর্ভিক্ষ খাবারের সংজ্ঞাটা বদলায়…
বিশ্বের উল্লেখযোগ্য কিছু ফেমিন ফুড
১. শেলফিস (Shellfish) : নানান জায়গার সমুদ্রে নানান রকমের অদ্ভুত প্রাণীর দেখা পাওয়া যায়। তেমনি একটি অদ্ভুত প্রাণী হচ্ছে খোসাওয়ালা মাছ শেলফিস। যা দেখতে অনেকটা ঝিনুক বা মাসেলস এর মত। কানাডার আটলান্টিক কোস্টের দরিদ্র উপবাসীরা আর্থিক মন্দায় থাকলে পোভার্টি ফুড হিসেবে এই শেলফিস খান। এমনকি সেখানকার অনেক বাসিন্দারা লবস্টার খেয়ে সেগুলোর খোসা ডাস্টবিনে না ফেলে বাড়ির পেছনে গোপনে মাটিচাপা দিয়ে রাখেন। যাতে তাদের চলমান অভাবের কথা প্রতিবেশীরা বুঝতে না পারে !
২. বিড়ালের মাংস (Cat meat) : ইতালীর উত্তর পশ্চিমের পেডমন্ট, লিগুরিয়া অঞ্চলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেখানকার বাসিন্দারা বিড়ালের মাংস খেয়ে বেঁচে থাকার যুদ্ধে লড়েছিলেন।
৩. এপ (Ape) : প্রশান্ত মহাসাগরের একাধিক দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র পলিনেশিয়া ! সেখানে Xanthosoma নামক একটি গাছের পাতা দিয়ে বিশেষ এক প্রকারের খাবার বানানো হয়, যা এপ নামে পরিচিত। পলিনেশিয়ায় দুর্যোগের সময় ত্রাণ হিসেবে এই খাবারটি বিতরণ করা হয়।
৪. ননি ফল (The fruits of Noni) : এটি বেশ কড়া গন্ধযুক্ত ও তেঁতো একটি ফল। খেতে বিস্বাদ হবার কারণেই এই ফলটিকে ফেমিন ফুড হিসেবে নির্বাসিত করা হয়। বিভিন্ন দেশে বড়ধরণের দুর্ভিক্ষের সময় ত্রাণের সাথে পাঠানো খাবারের মধ্যে এই ফলটি দিয়ে দেয়া হয়।
৫. নারা তরমুজ (Nara Melon) : সাউথ আফ্রিকার বিবর্জিত একটি ফল নারা তরমুজ। বিষাক্ত কাঁটায় জর্জরিত ডালপালার মাঝে এই ফলটি বেড়ে ওঠে। এই ফলটি সাধারণত মানুষ ছুঁয়েও দেখে না। শুধুমাত্র সেখানকার দুর্ভিক্ষ ও দুর্যোগগ্রস্ত এলাকায় বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন হিসেবে এই ফলটি খাওয়া হয়।
৬. সেগো জাতের লিলি ফুল (Sego lily) : সল্টলেক অঞ্চল থেকে এসে আমেরিকায় জায়গা করে নেয়া যীশু খ্রিস্টের বার্তাবাহকরা যখন খুব শস্য সংকটে পরেন, তখন তারা এই উদ্ভিদটি খেয়ে বেঁচে ছিলেন।
৭. ব্রেডনাট (BreadNut) : ব্রেডনাট বা মায়া নাট হচ্ছে প্রাচীন মায়ান জাতিদের একটি খাবার, যেটি কিনা দুর্ভিক্ষের সময় ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করা হত। সেন্ট্রাল আমেরিকার দুর্যোগ কবলিত মানুষরা পোভার্টি ফুড হিসেবে এই খাবারটি গ্রহণ করেনি।
এরকম আরো কয়েক শত খাবার রয়েছে, যেগুলোর নাম লিখে পোস্টটি চওড়া করা সম্ভব। কিন্তু চিড়া, মুড়ি খেয়ে বড় হওয়া বাঙ্গালী হিসেবে বিদেশি ওইসব ফেমিন ফুড নিয়ে কথা বলতে কারোই খুব একটা ভালো লাগবেনা। অন্তত গর্ব করে আমরা এটুকু বলতে পারি, শত অভাব অনটন দুর্যোগ আর দুর্ভিক্ষের মধ্যে থেকেও আমরা ঠিকই দুবেলা দুমুঠো ভাত খেতে পারি। দুর্যোগ কবলিত অঞ্চলে চিড়া মুড়ি স্যালাইন ও বিশুদ্ধ পানি পাঠিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলা করার মত অবস্থাও আমাদের আছে !
এই একটা কারণেও একজন বাংলাদেশি হিসেবে আপনি নিজেকে সুখী ভাবতে পারেন…
আরো পড়ুনঃ