বিদেশ ভ্রমণে আমাদের প্রায়ই বিমানে যাতায়াত করতে হয়। বিমানে উঠে বসার পর নিয়ম অনুযায়ী এয়ারহোস্টেজরা যাত্রীদেরকে যাত্রাপথে নিরাপদ থাকার জরুরী কয়েকটি নির্দেশনা জানিয়ে দেন। তবুও এর বাইরে কিছু নিয়মকানুন রয়েছে, যা আমরা অনেকেই জানিনা। চলুন এমন কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক, বিমানে চড়ে যে কাজগুলো করা উচিত নয় !
১. টেকঅফ বা ল্যান্ডিংয়ের সময় ঘুমানো : বিমানে উঠে অনেকেই সিটবেল্ট বেধে ঘুমিয়ে পরেন। কেউ যাত্রাপথের ক্লান্তি এড়াতে ঘুমান। আবার কেউ ঘুমান বিমানযাত্রার ভয়ের কারণে। প্লেন টেকঅফ বা ল্যান্ডিংয়ের সময় এ কাজটি করা মোটেই উচিত নয়। বিমান উড্ডয়নের সময় কেবিনের ভেতরের প্রেসার যাত্রীদের কানের ভেতরকার প্রেসারের চেয়ে বেশি হয়। এই প্রেসারে সমতা রাখার জন্য যাত্রীকে সজাগ থাকতে হয়। এসময় চুইংগাম চাবানো যেতে পারে অথবা ঘন ঘন কয়েকবার হাইও তোলা যায়।
কিন্তু এসময় যদি কেউ ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে আচমকা ঝাঁকি লেগে ঘাড়ে ইনজুরি হবার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি এয়ার প্রেসারের কারণে কানেও ইনফেকশন হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিমান ল্যান্ডিং বা টেকঅফ করার সময় ঘুমানোর কারণে যাত্রীদের বমি বমি ভাব হয়। এতে বিমানের কেবিনের ভেতর অসুস্থ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাই বিমান টেকঅফ বা ল্যান্ডিংয়ের সময় ঘুমানো উচিত নয়।
২. দীর্ঘসময়ের ফ্লাইটে একটানা বসে থাকা : দুরপাল্লার যাত্রা বা দীর্ঘসময়ের ফ্লাইটে একটানা বসে থাকা আরেকটি সমস্যার কারণ। আপনি যদি বেশি দুরত্বের কোনো ফ্লাইটে থাকেন, তাহলে আপনার পুরো যাত্রায়ই প্লেনের সিটে বসে থাকা অনুচিত। কারণ উড়ন্ত বিমানের কেবিনের ভেতর প্রেসার কম থাকে। যা আপনার ব্লাড সারকুলেশনকে আস্তে আস্তে দমিয়ে দিবে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সমস্যাটির কারণে পায়ের রক্ত জমাট বেধে যায়। আর একবার এই রক্ত জমাট বাধা শুরু হলে এটি আপনার হার্ট, ব্রেইন এমনকি ফুঁসফুস পর্যন্তও যাতায়াত করতে পারে। যদি এই দীর্ঘ যাত্রাপথে আপনি সিট থেকে উঠে দাঁড়াতে না পারেন, তাহলে অন্তত সিটে বসেই কিছুক্ষণ পর পর পা নাড়াচাড়া করা উচিত।
৩. বিমান থেকে দেয়া পানীয় ফেরত দেয়া : বিমানের কেবিন অত্যন্ত শুষ্ক একটি জায়গা। বিমানের ভেতরে বসে যখন আপনি নিঃশ্বাস ছাড়েন, তখন আপনার নিঃশ্বাসের সাথে শরীর থেকে অনেক ময়েশ্চার বের করে যায়। এই কারণে বেশি উচ্চতায় শরীরে ডিহাইড্রেশনের উপদ্রব হয়। এয়ারওয়েজ থেকে আপনাকে বিনামূল্যে যে বেভারেজ বা বোতলজাত পানীয় দেয়া উচিত, তা অবশ্যই খেয়ে নেয়া উচিত।
৪. বিমানে চা ও কফি খাওয়া : বিমান কর্তৃপক্ষ থেকে যে চা বা কফি পরিবেশন করা হয়, এটি না খাওয়াই আপনার জন্য শ্রেয়। একটি আন্তর্জাতিক জরীপে দেখা গেছে, পৃথিবীর ১২ শতাংশ কমার্সিয়াল এয়ারওয়েজের পানিতেই ব্যাকটেরিয়া এবং কলিফর্ম থাকে। তাছাড়া বিমানের পানির ট্যাংকও খুব সময়ই পরিষ্কার করা হয়। তাই বিমানে তৈরিকৃত চা বা কফিতে জীবাণু থাকা খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। চা বা কফির বদলে আপনি এয়ারহোস্টেজের নিকট বোতলজাত সফট ড্রিংকস চেয়ে নিলেই সেটা আপনার জন্য বেশি ভালো।
৫. অ্যালকোহল বা মদপান করা : বিমানে ২১ বছরের উর্ধ্বে যেকোনো যাত্রীই অ্যালকোহল সেবনের সুবিধা পান। ফ্রিতে পাওয়া এই অ্যালকোহল পান করা মোটেই আপনার উচিত নয়। কারণ প্রথমত, এটি আপনার যাত্রা শেষের প্রথম দিনটিই মাটি করে দিবে। মাটি থেকে বেশি উচ্চতায় বিমানের ভেতর এমনিতেই যাত্রীদের ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হয়। মদ এই সমস্যাটি আরো বাড়িয়ে দিবে। এছাড়াও একবার যদি মদ খেয়ে বিমানের ভেতর আপনি মাতলামি শুরু করেন, তাহলে আপনার নাম ও পাসপোর্ট নম্বর বিশ্বের সব বিমানবন্দরের No Fly লিস্টে চলে যাবে। বাকি জীবন চাইলেও আপনি আর কোনোদিন বিমানে চড়তে পারবেন না।
৬. প্রয়োজনের সময় বিমানের টয়লেট ব্যবহার না করা : অনেকেই আছেন, যারা পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে চান না। কারণ নানান রকম মানুষ এই রিলাক্সেবল কমোডগুলো ব্যবহার করে। নানান ধরণের জীবাণু এখানে থাকে। তবুও বিমান যাত্রায় প্রয়োজনের সময় আপনি যদি এই টয়লেট ব্যবহার না করেন, তাহলে তা আপনার শরীরের জন্যই মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৭. ছবি তোলা : বিমানে মুঠোফোন ব্যবহার করে ছবি তোলা সবচেয়ে বড়ধরণের একটি ভুল কাজ। বিমানে উঠার আগেই আপনার ফোনটি বন্ধ করে নেয়া উচিত। ফোন চালু থাকলে বিমানের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিতে সমস্যা হয়। একইসাথে এসময় ছবি তোলার জন্য ডিএসএলআর বা অন্য কোনো ক্যামেরাও ব্যবহার করা উচিত নয়। আপনার একটি ভুল আরো কয়েকশ মানুষের প্রাণনাশের কারণ হতে পারে। তাই বিমানে ছবি তোলা থেকে বিরত থাকুন। ছবি তোলার জন্য বিমান ল্যান্ডিং সম্পন্ন হবার অপেক্ষা করুন।