সালের হিসাবে ৬০ বছর পর বিশ্বকাপে উড়বে না ইতালির পতাকা। শেষবার ১৯৫৮ সালের সুইডেন বিশ্বকাপে জায়গা হয় নি তাদের। পাঁচ যুগ পেরিয়ে আবারও আরেকটি হতাশার সাথে কাকতালীয়ভাবে ঐ সুইডেনই জড়িয়ে। ইউরোপিয়ান বাছাইপর্বের প্লে অফে দুই লেগ মিলিয়ে ০-১ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ স্বপ্ন ভঙ্গ আজ্জুরিদের। অথচ সুন্দর ও রক্ষণাত্মক ফুটবলের মিশ্রণে গড়া দলটি বিশ্বকাপের অন্যতম সফল দল। চারবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালি ১৯৯৪ সালের ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে টাইব্রেকারে না হারলে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল দল হিসেবেই বিবেচিত হত।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ইউরোপিয়ান অঞ্চলের গ্রুপ-জি তে ৭ জয়, ২ ড্র এবং ১ হারে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে স্পেনের (২৮ পয়েন্ট) পেছনে পড়ে যায় ইতালি। যার দলে বিশ্বকাপের টিকেট পেতে প্লে অফে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল সুইডেনের মুখোমুখি হতে হয় আজ্জুরিদের।
ডিফেন্স, মিডফিল্ড, আক্রমণ প্রতিটি বিভাগেই এগিয়ে থাকা ইতালিকেই পুরো বিশ্ব ফেভারিট ধরে রেখেছিল। গোল বারের নিচে অতীন্দ্র প্রহরী জিয়ানলুইজি বুফনের সামনে বিশ্বের সেরা ৩ ডিফেন্ডার বিবিসি ( বোনুচ্চি-বারজাগলি-কিয়েলিনি)। অপরদিকে দলের সর্বকালের সেরা সুপারস্টার ইব্রাহিমোভিচকে হারিয়ে একেবারেই তারকাহীন সুইডেন।
স্টকহোমের প্রথম লেগের ম্যাচে ইতালির ০-১ গোলের হারে নড়েচড়ে বসে ফুটবল প্রেমীরা। ৩ দিন পর সানসিরোতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে ৭০ হাজার সমর্থকদের পাশাপাশি অন্যান্য ফুটবল অনুরাগীদের মনেও ছিল একই শঙ্কা। তাহলে কি এতবছর পর ইতালিবিহীন বিশ্বকাপ পেতে যাচ্ছে ফুটবলবিশ্ব?
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করে খেলা সত্ত্বেও আর মুহুমুহু আক্রমণে সুইডেনকে চাপে রেখেও গোলের খাতা খুলতে ব্যর্থ হয় ইতালির খেলোয়াড়রা। গুনে গুনে ২৭ টা গোলে শট নিয়েও কাঙ্ক্ষিত সমতাসূচক গোলটির দেখা পায় নি আজ্জুরিরা। ব্যস, তাতেই নিশ্চিত হয়ে যায় সুইডেনের রাশিয়া “১৮ এর টিকেট। আর নিশ্চিত হয়ে যায় পরপর দুইবার বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়া ইতালির বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ব্যর্থতা।
ইতালির এই ভরাডুবির কারন প্রথমত ভুল কোচকে দায়িত্ব দেয়া। ৭০ বছর বয়সী পিয়েরো ভেঞ্চুরার কোচিং জীবনে সফলতা বলতে ১৯৯৬ তে ইতালির তৃতীয় বিভাগের শিরোপা জেতানো। হাই প্রোফাইল কোচ এন্তোনিও কন্তের জায়গায় তার স্থলাভিষিক্ত হওয়াটা অনেকের কাছেই ইতালির এমন ব্যর্থতার মূল কারন।
দ্বিতীয়ত তরুনদের যথেষ্ট সুযোগ না দেওয়া। সুইডেনের বিপক্ষে দলের সবার বয়স ২৫ এর বেশি ছিল এবং ৬ জনের বয়স ছিল ৩০ এর অধিক। বুড়োদের উপর আস্থা রাখতে গিয়ে তরুন প্রতিভাবান বার্নাডাসচি,স্পিনাজোলা,পেলেগ্রেনিদের সুযোগ দেন নি ভেঞ্চুরা।
তৃতীয়ত কোচের ভুল ট্যাকটিস ও সিদ্ধান্ত। ভেঞ্চুরা জরজিনহো আর ইনসিনিয়ের মত পারফর্মারদের ঠিক মত ব্যবহার করতে পারে না। এমনকি সুইডেন ম্যাচে পিছিয়ে থাকার সময় ইনসিনিয়ে বেঞ্চে বসিয়ে রেখে তিনি ডি রসিকে মাঠে নামাতে চেয়েছিলেন। এমন ডিসিসানে ডি রসি নিজেই রেগে গেয়েছিলেন।
ফুটবলকে যে দেশে ধর্মের মত বিবেচনা করা হয় সে দেশের এমন ব্যর্থতা একেবারেই মেনে নেবার মত না। বিশ্বকাপজয়ী সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক বুফন ক্যারিয়ারের বিদায়ক্ষণে এসে এমন লজ্জার মুখোমুখি হতে চান নি। আর ইতালিয়ানরা এই ব্যর্থতাকে “জাতীয় লজ্জা” বলে আখ্যায়িত করেছে।
বিশ্বকাপের মাসটা তাদের জন্য হতে যাচ্ছে গভীর শোকের মাস। রাশিয়ার মঞ্চ হয়ত মিস করবে ইতালির জাতীয় সঙ্গীত, সবুজ-সাদা-লাল পতাকা আর পাগলাটে সমর্থকগুলোদের।