মাত্র ৩ লাখ ৩০ হাজার জনসংখ্যার ছোট্ট একটা দেশ আইসল্যান্ড, যাদের প্রধান আয়ের উৎস কৃষিকাজ এবং মাছ ধরা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এর ধরাছোঁয়া থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে দেশটি ৭ বছর আগেও ফিফা র্যাংকিং এর শীর্ষ ১৩০ দলের বাইরে ছিলো দেশটির জাতীয় ফুটবল দল। অথচ এমন একটি দল কিনা ইউরোপিয়ন চ্যাম্পিয়নশীপ এর কোয়াটার ফাইনালে এবং বিশ্বকাপে চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিলো।
ফুটবল খেলার জন্য আবহাওয়া একদমই উপযোগী নয় আইসল্যান্ডের। এতটাই শীতপ্রবন দেশ যে গ্রীষ্মকালে দেশটির তাপমাত্রা থাকে ১০-১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আর শীতকালে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২০ ঘন্টায় থাকে রাত। বাইরে মাঠে ফুটবল খেলার মত পরিবেশ নেই। তবুও থেমে থাকেনি দেশটির ফুটবল। আইসল্যান্ড ফুটবল ফেডারেশন এখন পর্যন্ত ১১ টি ফুল সাইজ ইনডোর ফুটবল স্টেডিয়াম এবং ১৫০ টি ছোট সাইজের ফুটবল ট্রেনিং গ্রাউন্ড তৈরি করেছে। যার সুফল আসে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপে যেখানে ইংল্যান্ড দ্বিতীয় রাউন্ডে হারিয়ে দলটি কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয়।
দুই বছর আগে সেপ্টেম্বর এর ৫ তারিখে শুরু হওয়া বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব মিশন সফলতার সাথে শেষ হয় গত বছর অক্টোবর মাসে ঘরের মাঠে কসোভোকে হারিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে। মিশনটা কোনো মতে সহজ ছিলো না। ইউরোপিয়ান বাছাই পর্বে প্রতিটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দলটিই বিশ্বকাপে জায়গা পায়। আর রানার্স আপ দলকে কাটাতে হয় প্লেঅফ এর ফাঁড়া। অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী গ্রুপে জায়গা হয় আইসল্যান্ড এর। কারন গ্রুপে ৬ টি দলের মধ্যে ৪ টি দলই ছিলো সদ্য শেষ হওয়া ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপে অংশগ্রহনকারী দল। ইউক্রেনের সাথে ড্র দিয়ে শুরু করে পরের দুই ম্যাচ এ ফিনল্যান্ড এবং তুর্কি এর বিপক্ষে জয় তুলে নেয় তারা। এরপর হোচট খায় ক্রোয়েশিয়ার কাছে ০-২ গোলে হেরে। পরের দুই ম্যাচ এ কষ্টার্জিত জয় পাওয়া সত্বেও দুর্বল ফিনল্যান্ড এর কাছে হেরে বিশ্বকাপ স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায় আইসল্যান্ডের। টেবিলে শীর্ষে থাকা ক্রোয়েশিয়াকে টপকে বিশ্বকাপে যেতে পরের ম্যাচ গুলিতে জয়ের বিকল্প ছিলো না। টানা তিন ম্যাচ যথাক্রমে তুর্কি, ইউক্রেন ও কসোভোকে হারিয়ে বিশ্বকাপের মানচিত্রে জায়গা করে নেয়। সেইসাথে ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোকে পিছনে ফেলে সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে।
আইসল্যান্ডের খেলার ধরন অনেকটা এটলেটিকো মাদ্রিদের মতন। ডিফেন্স শক্ত রেখে প্রতি পক্ষকে বিল্ডআপ এর সুযোগ দিয়ে কাউন্টার এটাক এ বিশ্বাসী তারা। যার প্রমান মিলে পুরো বাছাই পর্বে তাদের বল পজেশন মাত্র ৪০% যা ইউরোপিয়ান বাছাই পর্বে ৫৩ টি দলের মধ্যে ৩৯তম। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ১০ ম্যাচ এ ৭ জয় পাওয়া দলটির ম্যাচ প্রতি গোলে শট নেওয়ার গড় মাত্র ২.৭!
বিশ্বকাপ নিশ্চিত হবার পর দলের কোচ যিনি কিনা একজন পার্টটাইম ডেন্টিস্ট ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ভাষা হারিয়ে ফেলেন। ঠিক এমনই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় দলের বাকি খেলোয়ারদেরও। বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়াটাই সপ্নের মত মনে হলেও এখানেই থেমে যেতে চায় না তারা। কঠোর পরিশ্রম এবং নিখুঁত টিমওয়ার্কের মাধ্যমে বিশ্বকাপেও ভালো পারফর্মেন্স উপহার দিতে চায় দলটি। বিশ্বকাপ ফুটবলের মত গ্লোবাল ইভেন্টে নিজেকে তুলে ধরার জন্য মুখিয়ে আছেন দলের প্রতিটি খেলোয়াড়রা। গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনা, নাইজেরিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে তারা। বড় কোনো অঘটন ঘটাতে পুরো আইসল্যান্ডবাসির স্পটলাইট এ থাকবে দলের সুপার স্টার বিশ্বকাপ বাছাইতে ৪ গোল করা এভারটন তারকা গিলফি সিগুর্ডসন। আর সারা বিশ্বের ফুটবল প্রেমীরাঅপেক্ষায় থাকবে তাদের ভয়ঙ্কর “জলদস্যু” উদযাপন উপভোগ করার জন্য।