সিয়েরা লিওন পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ। সিয়েরা লিওনের সাংবিধানিক নাম সিয়েরা লিওন প্রজাতন্ত্র। ভৌগলিক অবস্থানে সিয়েরা লিওনের উত্তর সীমান্তে গিনি, দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে লাইবেরিয়া এবং দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের দিকে আটলান্টিক মহাসাগর অবস্থিত। সিয়েরা লিওনের বৃক্ষহীন তৃণভূমি অঞ্চল থেকে রেইনফরেস্ট পর্যন্ত একটি বিচিত্র পরিবেশের গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু বিদ্যমান। সিয়েরা লিওনের মোট আয়তন ৭১,৭৪০ বর্গকিলোমিটার (২৭,৬৯৯ বর্গমাইল) এবং এর মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬ মিলিয়ন। (২০১১ জাতিসংঘ পরিসংখ্যান অনুসারে)
ফ্রিটাউন সিয়েরা লিওনের রাজধানী, সর্ব বৃহত্তম শহর এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্র। বো সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। ১ লক্ষের বেশি জনসংখ্যাভূক্ত অন্যান্য শহরসমূহ হল কেনেমা, ম্যাকেনি, কাইদু। সিয়েরা লিওন উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চল চারটি ভৌগলিক অঞ্চলে বিভক্ত, যেগুলো আবার ১৪টি জেলায় বিভক্ত।
সিয়েরা লিওনে প্রায় ১৬টি জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে, যাদের প্রত্যেকের রয়েছে আলাদা ভাষা ও রীতিনীতি। দুটি বৃহত্তম ও সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতিগোষ্ঠী হলো তেমনে ও মেন্দে। তেমনে জাতিগোষ্ঠীকে দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তার করতে দেখা যায়, এবং মেন্দেরা দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে তাদের কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে। যদিও দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে সরকারি প্রশাসন ও বিদ্যালয়সমূহে ইংরেজীতে কথা বলা হয়, তবুও দেশে এবং দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ক্রিও ভাষা সবচেয়ে বেশি কথ্য ভাষা। বিশেষ করে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যবসা বানিজ্য এবং একে অপরের সাথে সামাজিক যোগাযোগে ক্রিও ভাষা ব্যবহার করে।
এছাড়া ২০০২ সালে তৎকালীন সরকার বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে ঘোষণা করে। সিয়েরা লিওন বাংলাদেশের পর একমাত্র রাষ্ট্র, যেখানে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
সিয়েরা লিওন খনিজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে হীরা, এটি অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি। এছাড়াও রয়েছে অন্যতম পন্য টাইটানিয়াম ও বক্সাইট, অন্যতম প্রধান পন্য সোনা, এবং রয়েছে রুটাইলের পৃথিবীর বৃহত্তম মজুদের একটি অংশ। সিয়েরা লিওনে রয়েছে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক হারবর। এত প্রাকৃতিক সম্পদ থাকার পরেও সিয়েরা লিওনের ৭০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে।
সিয়েরা লিওন ১৯৬১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে।সরকারের দুর্নীতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের অব্যবস্থাপনার ফলে সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধ হয় (১৯৯১ – ২০০২), যার জন্য এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশে ধংসযজ্ঞ চলে। এ যুদ্ধে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়, দেশের অবকাঠামো প্রায় ধংস করে এবং প্রায় বিশ লাখ মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে শরনার্থী হিসাবে বাস্তুহারা হয়।
২০১৪ সালে ইবোলা প্রাদুর্ভাব সিয়েরা লিওনের দুর্বল স্বাস্থ্য সেবা কাঠামোর উপর জটিলতা সৃষ্টি করে। চিকিৎসা খাতে অবহেলিত মনোভাবের কারণে আরও অনেক মৃত্যু ঘটে। এটি একটি মানবিক সংকট সৃষ্টি করে এবং দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও ব্যাহত করে। দেশের গড় আয়ু ৫৭.৮ বছর, যা অত্যন্ত কম।
সিয়েরা লিওন একটি নামমাত্র মুসলিম দেশ, যদিও খ্রিস্টান সংখ্যালঘুরা যথেষ্ট প্রভাবশালী। সাধারণভাবে দেশের মোট জনসংখ্যার ৬০% মুসলিম, ৩০% আদিবাসী বিভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী এবং ১০% খ্রিস্টান ধর্মীয়। সেখানে আদিবাসী বিশ্বাসের সংগঠিত ধর্মীয় সামঞ্জস্যতা অধিক। সিয়েরা লিওনকে বিশ্বের সবচেয়ে ধর্মীয় সহিষ্ণু জাতি হিসাবে গন্য করা হয়। মুসলিম ও খ্রিস্টানরা একে অপরের প্রতি সহযোগী ও শান্তিপূর্ণ আচরণ করে। সিয়েরা লিওনে ধর্মীয় সহিংসতা খুবই বিরল।