পবিত্রতা আর পরিশুদ্ধতার মধ্য দিয়ে পালিত হয় পবিত্র মাহে রমজানের আনুষ্ঠানিকতা। মাসজুড়ে রোজা রাখার ধর্মীয় এবং আত্মিক গুরুত্বের কথা আমরা সবাই কমবেশ জানি। কিন্তু রোজা রাখার শারীরিক উপকারের কথা আমরা অনেকেই জানি না। রোজা রাখা অর্থাৎ ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত আযান অনুযায়ী সব ধরণের খাওয়া ও পান করা থেকে বিরত থাকা। অনেকের মতে এই লম্বা সময়ে একেবারেই না খেয়ে থাকা শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর। বিশেষ করে এই গরমের দিনের প্রায় ১৫ ঘণ্টার মতো পানিও পান করে না থাকার ক্ষতিকর দিন নিয়ে অনেকেই চিন্তিত থাকেন। কিন্তু আসলে রোজা রাখা ঠিক কতটা ক্ষতিকর? নাকি এর উপকারিতাই বেশি? চলুন জেনে নেয়া যাক..
রোজা রাখার উপকারিতা ও অপকারিতা
১. ওজন কমাতে সাহায্য করে : সাধাণত যখন হাতের কাছে খাবার থাকে এবং খাবার গ্রহণে কোনোরকম বিধি নিষেধ থাকে না, তখন ডায়েটের চিন্তা না করে আমরা সাথে সাথেই খেয়ে ফেলি। ফলে আমাদের ওজন বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে ওজন সংক্রান্ত রোগ বৃদ্ধির ঝুঁকি। কিন্তু রোজার সময় খাবারে একটু বিধি নিষেধ থাকে বলেই দৈহিক ওজনটা এই ফাঁকে কমিয়ে নেয়া যায়। দেহের ফ্যাট কাটে এই রোজার মাসে।
২. দেহ থেকে ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে : রোজা রাখার ফলে দেহের ফ্যাট ক্ষয় হয়। এবং এই ফ্যাটের সাথে থাকা ক্ষতিকর টক্সিনও দূর হয়ে যায় দেহ থেকে।
৩. ডায়বেটিস রোগীদের জন্য উপকারী : অনেকেই ভাবেন ডায়বেটিসের রোগীদের রোজা রাখা উচিত নয়। কিন্তু এটি একেবারেই ভুল। রোজার মাসেই বরং বেশি খাবার নিয়ন্ত্রণ করে চলা সম্ভব হয়। যার ফলে দেহে ইনসুলিনের মাত্রা সঠিক থাকে।
৪. পরিপাকতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় : রোজা রাখার সময়টাতে সর্বক্ষণ চলতে থাকা পরিপাকতন্ত্রটি একটু হলেও বিশ্রাম পায়। তবে অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন, সারাদিন রোজা রেখে একসাথে অনেক খাবার খেয়ে ফেলবেন না। অল্প অল্প করে বিশ্রাম নিয়ে খাবেন।
৫. উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে : রোজা রাখার সময় আপনাআপনিই দেহের রক্তচাপ কমে আসে। এতে করে উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা অনেকটাই ভালো থাকেন রোজার সময়ে। তবে রক্তচাপ কম বলে অতিরিক্ত কোলেস্টোরলযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়। এই ব্যাপারে নজর রাখবেন।
৬. ধূমপান ও মদ্যপানের খারাপ অভ্যাস দূর করতে সহায়তা করে : পুরো একটি মাস যদি রোজা রাখতে পারেন, তাহলে আপনার প্রতিদিনের ধূমপান বা মদ্যপানের রুটিনে একটু হলেও ভাটা পড়ে আসবে। এতে করে চাইলে আপনি রোজার মধ্যেই এই বাজে অভ্যাসটা দূর করে নিতে পারবেন।
৭. স্বাস্থ্য ঠিক রাখে : অনেকেই রোজার সময়েই বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে যান, সারাদিন রোজা থাকতে হবে বলেই সেহরিতে স্বাস্থ্যকর খাবার এবং পানি পান করে নেন। আবার রোজা রাখা হয় বলে বাইরের ফাস্টফুডও বেশ কম খাওয়া হয়, এতে করে দেহ অনেকটাই সুস্থ থাকে।
এ থেকে আমরা দেখতে পাই, রোজা রাখার তেমন কোনো অপকারিতাই নেই, বরং উপকারিতাটাই বেশি ! আসুন সংযমের এই এক মাস আমরা রোজা রাখি, সব পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখি।