শুরুতেই আপনি আমাকে পাগল ভাববেন না। এজন্যই বললাম, শুরুতে পাগল ভাবলে বাকিটা আপনি মন দিয়ে শুনতে পারবেন না। আর শুনলেও তেমন গুরুত্ব দিবেন না। জগতের কোনো মানুষই পাগলদের কথা মন দিয়ে শোনেনা। এমনকি সাইকিয়াট্রিস্টরাও না। অথচ পাগলদের কথা তাদেরই সবচেয়ে মন দিয়ে শোনার কথা। ঠিক না?
হুমায়ূন আহমেদ এর আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি বইটি নিয়ে আমাদের আজকের এই রিভিউ ! চলুন জেনে নেয়া যাক, কেমন হবে এই বইটি !
বইঃ আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশকঃ মাজহারুল ইসলাম, অন্যপ্রকাশ
প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ
হুমায়ূন আহমেদ প্রসঙ্গে কিছু কথা…
হুমায়ূন আহমেদের নাম শোনেনি, এদেশে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। তিনি তাঁর লেখা দিয়ে লাখো পাঠকের মন জয় করেছেন। তিনিই বিশাল এক তরুণ সমাজকে বইমুখী করে তুলেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালী কথা সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তাঁকে স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি একজন বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার ও গীতিকার, চিত্রনাট্যকার এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা। বাংলা কথা সাহিত্যে তিনি সংলাপ প্রধান নতুন শৈলীর জনক। তাঁর বেশকিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বেশকিছু গ্রন্থ স্কুল কলেজের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত।
আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি
এবার আসি “আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি” উপন্যাস প্রসঙ্গে। এটি মূলত একজন সিজোফ্রেনিক রোগীকে নিয়ে লেখা, যেখানে প্রধান চরিত্র ফখরুদ্দীন চৌধুরী এবং তার স্ত্রী রুপা।
একদিন শ্রাবণ মাসের ঘোর বর্ষায় বইয়ের পাতায় চোখ বুলাতে বুলাতে তিনি একটি মেয়ে কণ্ঠ শুনতে পান। ভয় না পেয়ে তিনি তার কাজের ছেলেকে রফিককে জিজ্ঞেস করেন, বাড়িতে কোনো ভুত আছে কিনা? রফিক বলে, হ্যাঁ আছে। এতেও তিনি চিন্তিত না হয়ে নিজেই বোধ করলেন তার হ্যালুসিনেশন হয়েছে। প্রতিকার হিসেবে তিনি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলেন। কারণ তিনি তার বাড়িতে একাই থাকতেন।
বিয়ে করার জন্য তিনি তার মামা ইফতেখার সাহেবকে খবর পাঠালেন। তার যাবতীয় কাজ চালিয়ে নেবার জন্য লোক আছে। ইফতেখার সাহেব ‘ধর তক্তা মার পেরেক’ টাইপ মানুষ। তিনি খুব তাড়াতাড়ি মেয়ে ঠিক করে ফেললেন।
মেয়েরা তিন বোন। বড় জন সাথী, ডাক্তার। মেজ জন ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী আর ছোটন। বিয়ে হলো প্রাচীন কায়দায়। মেয়ে দেখতে এসেই ইফতেখার সাহেব বিয়ে দিয়ে দিলেন।
বিয়ের রাত্রে ফখরুদ্দীন সাহেব বাসায় আসার পরেই তার শ্বশুরবাড়ি থেকে একটি ফোন আসে। ফোন করেছে তার মেজ শালী রুপা। রুপা বলে, ‘বড়বোনের হুট করে এই বিয়ে হয়ে যাওয়াটা সে মেনে নিতে পারছে না। এই বিয়ে না ভাঙ্গলে আপা ছাদ থেকে লাফ দিবে।’
তার পরদিনই তাদের তালাক হয়ে হয়ে যায় !
কিছুদিন পর ফখরুদ্দীন সাহেবের সাথে সোবাহান সাহেব (রুপার বাবা) তার মেজ মেয়ের বিয়ে বেশ আয়োজন করেই দেন। বিয়ের পরে রুপার নাম বদল করে তারা তাকে দস্তা কন্যা বলে ডাকতেন। বিয়ের পর রুপা নানা অদ্ভুত জিনিস খেয়াল করতে থাকে ফখরুদ্দীনের ব্যাপারে। যেমন -বানরের সাথে কথা বলা, মাঝ রাতে ঘুম থেকে উঠে ছাদে শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখা, গাছের গোড়ায় পানি দেয়ার বদলে রক্ত দেওয়া।
এর মাঝে একদিন কাঁসা কন্যার (সেই মেয়ে কন্ঠ) উদয়। ফখরুদ্দীন সাহেব নানান জিনিস লক্ষ্য করলেন যার সবটাই ছিলো তার মস্তিষ্কের কল্পনা। তিনি এটাও বুঝে গেলেন যে, তাকে দস্তা কন্যা এবং এই কাঁসা কন্যা দুইজনের সাথেই জীবনযাপন করতে থাকবে। দুইজনের ভেতর থেকে তিনি যেকোনো একজনকে বেছে নিবেন।
কিছুদিন পর সোবহান সাহেবের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর তার মেয়েরা তাদের দরজার কাছে খড়মের শব্দ শুনে পায়। এই ভয়ে তারা তাদের বাড়ি ছেড়ে ওঠে তার মেজ বোনের শ্বশুরবাড়িতে। অর্থাৎ ফখরুদ্দীন সাহেবের বাড়িতে…
একা একা বাস করতে থাকা ফখরুদ্দীন সাহেব হুট করে অতিরিক্ত দুইজন মানুষ মেনে নিতে পারেননি। তারপর তিনি এমনভাবে দুইটা খুন করলেন, যাতে কেউই তাকে অপরাধী প্রমাণ করতে না পারে।
প্রথমে ‘এক্সপেরিমেন্ট’ করতে গিয়ে ডাক্তার সাথীকে এবং পরে ছোটকে (রুপার ছোট বোন) কৌশলে আত্মনাশের মাধ্যমে ! এবং এই ব্যাপারটা কেউই ধরতে পারলেন না ইফতেখার সাহেব ছাড়া।
ফখরুদ্দীন সাহেব কাকে বেছে নিলেন শেষ পর্যন্ত? দস্তা কন্যাকে? নাকি কাঁসা কন্যাকে? শেষটুকু জানতে হলে অবশ্যই বইটা পড়তে হবে।
হুমায়ূন আহমেদ স্যারের লেখা বইগুলোর মধ্যে “আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি” বইটা আমার ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ। এই বই আপনাকে নতুন এক স্বাদ দিবে, অন্তত সেই নিশ্চয়তা দিতে পারি !
হ্যাপি রিভিং… ☺