সৃষ্টির আদিকাল থেকেই মানুষ ছুটে চলেছে হাজারও রহস্যের পেছনে। সেই সময়ে সব কিছুই ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন, ধোঁয়াটে রহস্যে ঘেরা। ধাপেধাপে মানুষ অতিক্রম করে এসেছে সেই সব রহস্যের সিঁড়ি। গত কয়েকশো বছর পূর্বে যার অস্তিত্ব মানুষের কল্পনাতেও ছিল না সেটা আজ বাস্তবে বিরাজ করছে। এতকিছুর পেছনে আছে মানুষের অসাধারণ চিন্তাশক্তি। বর্তমানে যা আছে তা আমাদের অতীতের চিন্তার ফল।
প্রাচীন কালে কোনো একটা ঘটনা ঘটলে মানুষ তার কারণ নিয়ে ভাবতে পছন্দ করতো। কিন্তু প্রকৃতি রহস্য পছন্দ করে কিনা, তাই এমন অনেক ঘটনাই প্রকৃতিতে থেকে যায়। যার সুনির্দিষ্ট কারণ মানুষের পক্ষে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়ে উঠেনি।
এই আর্টিকেলটিতে মূলত সেরকমই একটি রহস্যময় দ্বীপ নিয়ে আলোচনা করা হবে। যার নাম বাল্ট্রা দ্বীপ।
বাল্ট্রা দ্বীপ (Baltra Island)
দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডর এর নিকটবর্তী ১৩টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত গালাপগোস দ্বীপপুঞ্জ। এই ১৩ টি দ্বীপের মধ্যে একটি হচ্ছে বাল্ট্রা। জনমানবশূন্য, প্রাণহীন একটি দ্বীপ। যে দ্বীপে কোনো পশু পাখি ও থাকতে চায় না। অন্যান্য ১২টি দ্বীপ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এই রহস্যময় বাল্ট্রা দ্বীপ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার কর্তৃক এই দ্বীপপুঞ্জে কয়েকটি এয়ারবেস স্থাপন করা হয়। ওই সময়ের এয়ার বেসের একজন অফিসার ছিলেন ফ্রান্সিস ওয়েগনার। যার মাধ্যমে পুরো বিশ্ব জানতে পারে রহস্যময় দ্বীপ বাল্ট্রা সম্পর্কে।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকা হওয়ায় এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। অন্য ১২টি দ্বীপে বৃষ্টি পড়লে ও একমাত্র বাল্ট্রাতেই এক ফোঁটাও বৃষ্টি পড়ে না। কোনো এক অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে তখন। বৃষ্টির পানি অনেক উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে ওপারে বর্ষণ হয়। বাল্ট্রা দ্বীপের অর্ধেকটা আসার পর আর এক ইঞ্চির জন্যও বৃষ্টির পানির পক্ষে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনা। যেন মনে হয় অদৃশ্য কোনো কিছু পুরো ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে।
এমনকি সমুদ্রের নাবিকদের ও বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দেয় এই দ্বীপটি। এই দ্বীপের আশেপাশে এলেই দিক নির্দেশনাকারী কম্পাসের কাটা শক্ত হয়ে যায়। অথবা ইচ্ছে মত ঘুরতে থাকে আবার অনেক সময় ভুল দিক নির্দেশনা দেয়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মত ওতটা না হলেও স্পষ্টভাবেই দ্বীপটি প্লেনের উপর ম্যাগনেটিক প্রভাব ফেলে।
এই রহস্যময় দ্বীপে না আছে কোনো উদ্ভিদ, না আছে কোনো প্রাণী! তবে একটা সময় এখানে গালাপগোস ইগুয়ানা নামে এক ধরণের সরিসৃপ প্রাণী বাস করতো। যদিও তা পরবর্তীতে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়।
ফ্রান্সিস ওয়েগনার যখন এই দ্বীপের অদ্ভুত সব ব্যাপার টের পান। তখন তিনি কিছু প্রাণী আনানোর ব্যবস্থা করেন। যা আনার পর বাল্ট্রা এবং সান্তাকুজের মধ্যবর্তী খালে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ওয়েগনার লক্ষ্য করেন প্রাণীগুলো বাল্ট্রাকে এড়িয়ে পার্শ্ববর্তী সান্তাকুজের পাশ দিয়ে হেঁটে চলেছে।
শুধু পশু নয়, এমনকি পাখিরাও প্রবেশ করতো না এই দ্বীপে। ব্যাপারটা ওয়েগনারের চোখ এড়ায়নি। যখনই কোনো পাখি দ্বীপে প্রবেশের চেষ্টা করেছে তখনই মনে হয়েছে কোনো এক অদৃশ্য দেয়াল তাদের বাধা দিচ্ছে ঢুকতে। সেই বাধা পেয়ে পাখিরাও ফিরে যাচ্ছে।
সব চাইতে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে যখনই কেউ এই দ্বীপে পা রাখে তখনই তার মস্তিষ্ক নিজেকে ভারমুক্ত করে দিয়ে পুরোপুরি হালকা হতে শুরু করে। খুব সুক্ষ্মভাবে মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে দ্বীপটি। মানসিক দুশ্চিন্তা চলে যায়, সৃষ্টি হয় এক অজানা অন্যরকম ভাল লাগার। খুব বেশি সময় ধরে দ্বীপে থাকার পর যখন ফিরে আসা হয়। তখনও সে ভাবটা ঠিকই থেকে যায়। অনেকটা নেশার মত, কাটতে সময় লাগে।
এই অদ্ভুত দ্বীপে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর পেছনের কারণ কি! সেটার সঠিক ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায়নি। অনেকেই মনে করে থাকেন এখানে কোনো সুপার ন্যাচারাল পাওয়ারের অস্তিত্ব আছে। যার কারণে ঘটছে এই সব অদ্ভুত কর্মকান্ড। যদিও কোনো যুক্তি দিয়েই কোনো কিছু সঠিকভাবে প্রমাণ করা যায় নি।
প্রকৃতি রহস্য পছন্দ করে কিনা !