“Déjà vu” আসলে কি?
হিউম্যান ব্রেইন কম্পিউটারের মত এক্সাক্টলি সব ইনফো সেভ করে রাখতে পারেনা । মেমোরির একটা অংশ ভালভাবে সেভ করে, আরেকটা অংশ অস্পষ্ট হয় বা মুছে যায় । কোনো একটা বিশেষ স্মৃতির কিছু অংশ দেখলে আমাদের ব্রেইনের টেম্পোরাল লোব উত্তেজিত হয়ে পড়ে । যদি পুরা মেমোরিটা সে রিকল করতে পারে, তখন কোন সমস্যা নেই । কিন্তু মেমোরির অর্ধেকটা রিকল করতে পারছে, বাকি অর্ধেক পারছেনা – এই রকম সিচুয়েশনে ব্রেইন বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে । এই সিচুয়েশনকে ডেজা ভূ বলে । (এক্সাম্পল–রিক্সায় করে লাল সালোয়ার কামিজ পরা মেয়ে দেখলে আপনার মনে পড়ছে যে, এই মেয়েটাকে আমি দেখেছিলাম আগেই, কিন্তু কোথায় দেখেছি মনে পড়ছেনা, এই সিচুয়েশনটা ডেজা ভ্যু)
মনের অগোচরে অনেক সময় আমরা অনেক কিছুই উপলদ্ধি করি কিন্তু তা কাউকে বলতে পারিনা। হতে পারে চক্ষু লজ্জা বা হতে পারে অন্য কোনো কারনে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো এই Déjà vu ! একে “পারামনেসিয়া” ও বলা হয়ে থাকে। গ্রিক (παρα “para” অর্থ নিকটে আর μνήμη “mēmē”, অর্থ “স্মৃতি”) অথবা প্রোমনেসিয় হল একটি নিশ্চিত অনুভবের অভিজ্ঞতা যা একজন ইতঃপূর্বে এ পরিস্থিতি সম্মুখীন হয়েছে অথবা স্বচক্ষে দেখেছে (একজন ব্যক্তি অনুভব করে যে ঘটনাটি ইতিপূর্বে অথবা সাম্প্রতিক ঘটেছে), যদিও পূর্ববর্তী পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার সঠিক ঘটনাটির সম্পর্কে অনিশ্চত। একজন ফরাসী মানসিক গবেষক “এমিল বোইরেক” (১৮৫১–১৯১৭), তার “L’Avenir des sciences psychiques” (লাভনির ডেস সন্স সিসিক বা মানসিক বিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ) নামক বইতে একটি বিস্তৃত প্রবন্ধ লিখেছিল যেখানে এই শব্দটি ব্যবহার করেন, তখন তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালযয়ের ছাত্র ছিলেন। ডেজা ভ্যু ব্যাপারটি সচরাচর ঘটে থাকে। সাউদার্ন মেথোডিস্ট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী অ্যালান এস. ব্রাউন ২০০৩ খৃস্টাব্দের একটি অনুসন্ধানে দেখেছেন যে, ৬০ শতাংশ মানুষের জীবনে একবার হলেও ডেজা ভ্যু জাতীয় অভিজ্ঞতা রয়েছে। ডেজা ভ্যু আসলে কী?
ডেজা ভ্যু প্রায় প্রতিটি মানুষের জীবনেই কমপক্ষে একবার করে ঘটে থাকা একটি ঘটনা। কোথাও গিয়ে মনে হল যে এমন কোথাও আপনি আগেও এসেছেন, কিংবা কোন একটি ঘটনা দেখার পর মনে হল ঠিক এমনটাই যেন এর আগেও দেখেছেন আপনি। অথচ বাস্তবে সেটি সত্যি নয়। মোটেও এই স্থানে আসেননি আপনি, এমন কোন ঘটনার মুখোমুখিও হননি। তাহলে এই যে মনে হওয়া? এই যে বিচ্ছিন্ন স্মৃতি? সেটা কী? এটাকেই বলা হয় দেজা ভু। কিন্তু কেন হয় এমনটা? ঠিকঠাক কারণ না জানতে পারলেও এখন অব্দি অনেকেই চেষ্টা করেছেন এর পেছনে থাকা রহস্যকে খুঁজে বের করতে। দিয়েছেন নানারকম মজার মজার তত্ত্ব। আর সেগুলোরই দুটি দেওয়া হল নীচেঃ
১. মস্তিষ্ক ও অনুভূতির মিশ্রণঃ বিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের অনুভূতি শক্তি একটার সাথে একটা জড়িত। আর এই অনুভূতি শক্তির সাথে জড়িত আমাদের মস্তিষ্কও। তাই যখন আমাদের ইন্দ্রিয় কোন একটা অনুভূতির মুখোমুখি হয় তখন সেটা সেই অনুভূতির সাথে জড়িত পুরোন সব স্মৃতিকে জাগ্রত করে তোলে মস্তিষ্কে। এই যেমন- কোন একটা গন্ধ, সেটা নাকে লাগার সাথে সাথে আপনি অনেক আগে ঠিক কোথায় এই একই গন্ধ পেয়েছিলেন এবং সেটার সময় কি হয়েছিল সেটার ওপর নির্ভর করে আপনার অবচেতন মন একটা ছবি এঁকে দেয় মস্তিষ্কে। আর সেই ছবিকে মনে রেখেই সামনের পরিস্থিতির সাথে মেলানোর চেষ্টা করে আপনার মস্তিষ্ক। সৃষ্টি হয় দেজা ভু। মস্তিষ্কের এ মিলিয়ে নেয়ার ঘটনা অনেক যৌক্তিক।
২. জ্বীণ তত্বঃ এটা আমার নিজস্ব তত্ব। আমরা সবাই জানি জ্বীণের অনেকগুলো প্রকারভেদ রয়েছে। ক্বারিন নামের এক প্রকার জ্বীণ আমাদের সাথেই থাকে। ক্বারিন সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন: وَمَن يَعْشُ عَن ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ
অর্থঃ “যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী (قَرِينٌ)।” ***সূরা যুখরুফ; আয়াত: ৪৩:৩৬।
ক্বারিন অর্থ হচ্ছে সংগী, প্রত্যেক মানুষের সাথেই শয়তান জ্বীণ থাকে, সঙ্গী হিসেবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
“তোমাদের প্রত্যেককে জিনদের মধ্য হতে একজন ক্বারিন (সঙ্গী) দেওয়া হয়েছে।” সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন: “এমনকি আপনাকেও ইয়া আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেন, “হ্যা, কিন্তু এখন সে আমাকে শুধু ভাল কাজ করতে বলে।” ***সহীহ মুসলিমঃ ৭১৩৪।
এখান থেকে ইসলামিক মতে ডেজা ভ্যু আমি ব্যাখ্যা করবো। আমরা জানি জ্বীণ মানুষের থেকে বেশী বছর বাচে, ধরুন জ্বীণদের গড় আয়ু ৫০০/৭০০ বছর আর মানুষের ৬০/৭০ বছর। কিন্তু একজন মানুষের সাথে যদি একটি ক্বারিন জ্বীণ থাকে, সে মানুষ মারা যাবার পরে সে ক্বারিন জ্বীণ কই যাবে? নিশ্চই আরাকজন মানুষের কাছে। কারন ক্বারিন নামক জ্বীণ মানুষের সাহচার্য ছাড়া থাকেনা। এটা ওদের বৈশিষ্ট। তো ধরুন Mr.X এর সাথে Mr.J নামক একটি ক্বারিন জ্বীণ আছে, Mr.X যখন মারা যাবে Mr.J তখন আরাকজন নতুন জন্ম নেয়া Mr.Y এর সাথে মিশে যাবে। এখন Mr.X এর সাথে Mr.J এর কিছু স্মৃতি থাকে যা Mr.J বয়ে বেড়ায়, কারন জ্বীণদের ও নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ও স্মৃতি শক্তি আছে। আর শয়তান জ্বীণদের কাজ ই হলো মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়া। তো এখন Mr.Y এর সাথে যখন Mr.J বসবাস শুরু করবে, তখন যখন Mr.Y কোনো নতুন যায়গায় যাবে যেখানে ঠিক Mr.X আগে গিয়েছিলো, সেই স্মৃতি এখন Mr.J এর দ্বারা Mr.Y এর কাছে চলে আসবে আর সেটিই হবে দেজা ভূ। কারন, এখন Mr.Y দেখবে Mr.X এর স্মৃতি, আর এটা Mr.Y এর কাছে আবছা মনে হবে কারন এটা সরাসরি Mr.Y এর স্মৃতি নয় বরং এটা ক্বারীন জ্বীণ মানে Mr.J এর স্মৃতি।
প্রাচীন ভারতীয় দার্শনিক শংকরাচার্জ বলেছিলেনঃ “ব্রহ্মই সত্য, জগত মিথ্যা। জগতের সবই মায়া। তার মতে ব্রহ্মই হয়ত ছিলেন সেই মহা প্রোগ্রামার।”
আমাদের অস্তিত্ব কি কোনো সিমুলেশন — এ নিয়ে অর্থাৎ আমাদের অস্তিত্বের সমস্যা নিয়ে অনেক সায়েন্স ফিকশন ফিল্ম হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো আছে বিখ্যাত। তবে আমি যে মুভিটার কথা বলব সেটা বিখ্যাত নয়, আন্ডাররেটেড মুভি। নাম “একজিসটেনজ”। ১৯৯৯ সালে নির্মিত কানাডিয়ান সায়েন্স ফিকশন ফিল্ম। শুরু হয় একটা নিকট ভবিষ্যতে। যেখানে গেম প্যাডের পরিবর্তে অর্গানিক ভার্চুয়াল রিয়ালিটি গেম কনসোল ব্যবহার করা হয় এবং যা যুক্ত করতে হয় একটি বায়ো পোর্টের মাধ্যমে। গেমে প্রবেশ করার পর কোনটা বাস্তব এবং কোনটা গেম তা খেলোয়াড়েরা পার্থক্য করতে পারে না। এত দূরেই বা কেন যাচ্ছি, কিছুদিন আগের আলোচিত মুভি “এভেটার” ই দেখিনা।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুভিটি দর্শকের আগ্রহ ধরে রাখতে সক্ষম। এবং শেষদিকে এসে দর্শককে ছুঁড়ে দেয় অস্তিত্বের প্রশ্ন। মুভিটি দেখতে দেখতে মনেও হবেনা আপনি কোন জগতে আছেন।
সিমুলেশন হাইপোথিসিসের ব্যাপারে প্রথম বিস্তারিতভাবে তার ধারণা ব্যক্ত করেন দার্শনিক নিক বোস্ট্রম। মানুষেরা যে কম্পিউটার সিমুলেশন বানায় আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরে সেগুলো আরো বেশি জীবন্ত ও শক্তিশালী হবে। তখন সেইসব সিমুলেশনে যদি কোনো সত্তা থাকে তবে তার কাছে সেই সিমুলেশনের ত্রুটি ধরা পড়বে না। এভাবে আমরাও হয়ত একটা সিমুলেশনে আছি যা আমাদের পূর্বপুরুষেরা তৈরি করেছে। তারা আছে আরেকটা সিমুলেশনে যেটা তৈরি করেছে তাদের পূর্বপুরুষেরা। (মাথা ঘুরছে তাইনা :p)
অথবা এটা হতে পারে, আমাদের সিমুলেশন তৈরি করেছে ভীনগ্রহবাসী কোনো উচ্চ বুদ্ধিমত্তার এলিয়েন অথবা জ্বিন। এর সম্ভাবনা আছে। কারণ মহাবিশ্বে বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ-নক্ষত্র আছে। সেখানে অতি উচ্চ বুদ্ধিমত্তার প্রাণী থাকা স্বাভাবিক।
ধরেন এই পৃথিবী, আপনার এবং আমার চারপাশ একটি সিমুলেশন/গেমস। কম্পিউটার সিমুলেশনের মত (যেমন, একটি গেম গ্র্যান্ড থেফট অটো/ভাইস সিটি) আমাদের যে বাস্তবতা সেটা একটা সিমুলেশন। আমাদের চিন্তা চেতনাও তার অংশ। ফলে আমরা কখনো সেটা ধরতে পারি না।
কিন্তু সিমুলেশন যতই উন্নত হোক না কেন তাতে কিছু ত্রুটি থাকা স্বাভাবিক। তাহলে আমাদের বাস্তবতার যে সিমুলেশন তাতেও ত্রুটি আছে। সেই ত্রুটিগুলোর কারণে আমরা কখনো কখনো ব্যাখ্যাতীত কোনো বিষয় দেখে ফেলি। ধরা যাক, মানুষের প্যারানরমাল অভিজ্ঞতা কিংবা এই ডেজা ভ্যু এগুলো সেই সিমুলেশনের ত্রুটি, কিন্তু আমরা তা ধরতে পারি না। অথবা আমরা ভালোমত লক্ষ্য করি না।
ডেজা ভ্যু নিয়ে অনেক আলোচনা করলাম।চলুন এবার দেজা ভু এর বিপরীত নিয়ে একটু দেখে আসা যাকঃ-
জেমাইস ভূ আরেকটি রহস্য। এটাকে দেজা ভূ র বিপরীত বলা হয়। এই অনুভূতির কারনে কোন মানুষ অনেক পরিচিত জিনিস চিনতে পারে না। তার কাছে মনে হয় যেন সে এটা প্রথমবার দেখছে। কোন কিছুই সে চিনতে পারে না। ‘জেমাইশ ভূ’ শব্দের অর্থ যা ‘কখন দেখা হয়নি। ‘এটি একটি ফ্রেঞ্চ শব্দ। যেকোন কিছুর জন্য এটি হতে পারে,যেকোন সময় হতে পারে। একটি অতি পরিচিত শব্দ ,একটি অতি পরিচিত মুখ দেখেও মনে হতে পারে যে জীবনেও এটি দেখা হয় নি। ভূজা দে আরেকটি রহস্য এটিও জেমাইস ভূ এর মতই।
প্রথমদিকে মনরোগ বিশেষজ্ঞরা চেয়েছিলেন এই অনুভূতিকে মানসিক রোগ বলতে। একটা নাম দেওয়া হয়েছিল ‘Temporal Lobe Epilepsy’।
এই ধারনা কিছু গবেষককে আগ্রহী করে তুলেছিল। তবে শেষমেশ এই ধারনা তেমন একটা ভিত্তি পায়নি। অনেকে বলে মৃগী রোগিরা অনেক সময় ও দেজা ভূ দেখতে পায়।
যাইহোক একসময় বিজ্ঞানীরাও এক বাক্যে স্বীকার করবে পবিত্র আল কোরআনে বর্নীত জ্বীণ জাতির কথা। আর সেদিন ই সার্থক হবে আমার লেখা গুলো, হয়ত আজ কেউ মুল্য দিবেনা, কারণ বিজ্ঞানময় নয় এমন কিছুর অস্তিত্ব স্বীকার করতে নারাজ আমরা। ধন্যবাদ।
আরো পড়ুনঃ