উচ্ছৃঙ্খল এবং অনিয়মানুবর্তী শিক্ষার্থীকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা নিশ্চই তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিংবা অঘটন হিসেবে কুখ্যাত হবার মতো কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু সেই বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী যদি উক্ত ঘটনার প্রতিবাদে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠে এবং ফলশ্রুতিতে ১৭ জন নিরীহ শিক্ষার্থীর প্রান কেড়ে নেয় তখন কেমন হবে?
জ্বী হ্যাঁ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ঠিক এরকমই একটা ঘটনা ঘেটেছে গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সেই বহিষ্কৃত ছাত্রটি ফুলের পরিবর্তে গুলি ছুঁড়েছে তারই প্রাক্তন বন্ধুদের দিকে।
ফ্লোরিডা হাইস্কুল হত্যাকাণ্ড
ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডের মেজরিটি স্টোনমেন ডগলাস হাইস্কুল, সময় দুপুর ২টা বেজে ৪০ মিনিট। নিকোলাস ক্রুজ নামের একজন তরুণ হঠাৎ স্কুল কম্পাউন্ডে ঢুকে এলোপাথারি গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। ক্লাসে মনোযোগী ছাত্র-ছাত্রীরা প্রথম কয়েকটা গুলির শব্দকে আতশবাজী ভেবে উড়িয়ে দিলেও তাদের ভুল ভাঙ্গে বাইরের আতঙ্কিত শিক্ষার্থীদের আর্তনাদে। ততক্ষণে হামলাকারী নিকোলাস ক্রুজের বন্দুকের গুলিতে ৩ জন নিহত আর বেশ কয়েকজন আহত হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে ক্রুজ এগিয়ে যায় স্কুলের ভিতরে ক্লাসরুমগুলোর দিকে। বন্দুকের গুলি শেষ হবার আগপর্যন্ত থামেনি তার ধ্বংসলীলা। ক্লাসরুমে সবাইকে জিম্মি করে একে একে ১৭ জনের প্রাণনাশ, এবং আরো প্রায় ১২ জনকে অর্ধমৃত করে ক্ষান্ত হয় নিকোলাসের অর্ধস্বয়ংক্রিয় এআর-১৫ বন্দুকটি। ইচ্ছা ছিলো একে একে সব শিক্ষার্থীদের হত্যা করার। ততক্ষণে স্কুলের বাইরে ভীড় জমে গেছে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অভিভাবক আর উৎসাহী জনতার। পুলিশ আর এফবিআই সদস্যরাও যার যার অবস্থান গ্রহণ করে উদ্ধার অভিযান শুরু করে দিয়েছে। হামলা শেষ হবার পরে নিকোলাস চেয়েছিলো শিক্ষার্থীদের ভীড়ের মাঝে নিজেকে আড়াল করে পালিয়ে যেতে। কিন্তু তার এই হাস্যকর চেষ্টা ব্যর্থ হয়, এবং এফবিআই সদস্যরা কোনো রকম নাটকীয়তা ছাড়াই তাকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।
এই ঘটনার পর বিশ্বের সবচেয়ে ‘আশ্চর্য্যজনক’ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সস্ত্রীক হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সাথে সেলফি তুলেছেন এবং টুইটার বার্তায় ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। যদিও অস্ত্রআইনে দুর্বল আমেরিকার অস্ত্রনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে রাজী হননি তিনি। অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সাথে তার একটা গোপন সুসম্পর্কের দিকে সরাসরি ইঙ্গিত দিয়ে রাতারাতি তারকাখ্যাতি পেয়ে যায় হামলার পর বেঁচে যাওয়া এক ছাত্রী। আবার ফ্লোরিডার গভর্নর সাহেব এই ঘটনার জন্যে সরাসরি দায়ী করেছেন এফবিআই’র দায়িত্বহীন আচরনকে।
এইতো শোনালাম প্রত্যক্ষ ঘটনার দৃশ্য, এবার চলুন জেনে নেই পর্দার আড়ালের কিছু তথ্য।
প্রায় বছর খানেক আগে ওই স্কুল থেকে বহিষ্কার হওয়া ক্রুজ সাহেব বরাবরই ছিলেন ধনাঢ্য বাবার বখাটে সন্তান। তার ‘কাউকে মানি না’ টাইপের আচরনের জন্যই বহিষ্কার করা হয়েছিলো পার্কল্যান্ডের ওই স্কুল থেকে। বহিষ্কৃত হবার পর থেকেই নিকোলাসের ভেতর প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে থাকে, আর কিভাবে কি করা যায় তা ভাবতে ভাবতেই কি’না কে জানে তার অাচরণে খানিকটা অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। যা তার বন্ধুদের চোখে বেশ ভালেভাবে ধরা পরে। বন্ধুদের আড্ডায় ধ্বংসাত্মক কথা বলা, বে-আইনি অস্ত্র যোগারের চেষ্টা করা, এমনকি ফেইসবুক আর টুইটারে তার ধ্বংসাত্মক মন্তব্যগুলাই তার অস্বাভাবিকত্বের প্রমান বহন করে। এসব বিষয় লক্ষ্য করে নিকোলাসের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাম প্রকাশ না করে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংগঠন এফবিআই-কে সবকিছু খুলে বলে। হামলার মাসখানেক আগের ঘটনা এটা, যদিও এফবিআই তখন এসব কথা আমলে নেয়নি।
সেদিন যদি নিকোলাসের বন্ধুর কথাগুলো এফবিআই উড়িয়ে না দিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করত, তাহলে হয়তো বেঁচে যেত ১৭টা তাজা প্রান। ভুল বললাম, ১৮টা প্রান। সাজার অপেক্ষায় থাকা ১৯ বছর বয়সী নিকোলাস সাহেবকে কি আর জীবিত বলা যায়?