২০০৩-০৪ এর দিকে দেশে প্রথম মোবাইল ফোন অ্যাভেইলেবল হওয়া শুরু করে। স্বাভাবিকভাবেই তরুণ সমাজের সামনে উন্মোচিত হয় এক নতুন বিনোদনের জগত। মিসডকল দিয়ে কাউকে বিরক্ত করা কিংবা রং নাম্বারে ফোন দিয়ে সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষের সাথে মজা করাটা নিত্যদিনের রুটিনে পরিনত হয় অনেকের কাছেই। এরকম রং নাম্বারে কথা বলতে বলতে প্রেম থেকে বিয়ে হওয়ার মত ঘটনার সংখ্যাও খুব কম নয়। ঠিক এরকমই একটা প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয় “রং নাম্বার” সিনেমাটি। সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক রিয়াজ এবং ইপসিতা শবনম শ্রাবন্তী !
সিনেমার শুরুতেই দেখা যায় একদল বদমাইশ তরুণী রং নাম্বারে মিসডকল দিচ্ছে, এবং সেই অপরিচিত ব্যক্তি কলব্যাক করলেই তার সাথে প্রেমালাপ করার চেষ্টা করছে। এই দলটির সেনাপতি হচ্ছেন আমাদের নায়িকা শ্রাবন্তী। তখনকার ছোটপর্দায় নিয়মিত অভিনয় করা মিষ্টি মেয়ে শ্রাবন্তীর সম্পূর্ণ ভিন্ন অবতারের দেখা মেলে এই সিনেমায়। অন্যদিকে পুরো সিনেমায় ফতুয়া আর ক্যাপের বিজ্ঞাপন করা রিয়াজ বেশ সহজ সরল ধরনের ছেলে।
ঘটনাচক্রে একদিন শ্রাবন্তীর গ্যাং মিসডকল দিয়ে বসে রিয়াজকে। এরপর গতানুগতিক বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে যা হয়, তাই। প্রথমে কিছুটা খুনসুটি, এবং তারপর মান অভিমান পর্ব শেষে প্রেম। অদেখা অচেনা অজানা দুটো মানুষ কিভাবে একে অপরের প্রেমে পরে, এবং কি হয় তাদের প্রেমের পরিণাম তা জানতে হলে আপনাকে দেখতে হবে মুভিটি…
এবার আসি অভিনয়ের প্রসঙ্গে। রিয়াজ বরাবরই ভালো অভিনয়ের মাধ্যমে সবার প্রশংসা কুড়িয়ে এসেছে, এই মুভিতেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। আর প্রথম সিনেমা হিসেবে শ্রাবন্তীর অভিনয়ও বেশ প্রশংসার দাবীদার। সমস্যা করেছে পার্শ্ব চরিত্রগুলো, একেকজন যেনো ওভার অ্যাক্টিংয়ের ড্রাম। চোখে লাগার মত বাজে অভিনয় করেছে শ্রাবন্তীর গ্যাংয়ের অন্যান্য লেডিগুণ্ডারা। দুটো কমেডিয়ানের কোনো কারণ ছাড়াই লাফালাফি-নাচানাচি বেশ বিরক্তিকর ছিলো। অমল বোস আর তুষার খান নিজেদের চরিত্রে বেশ মানানসই ছিলেন। বড়ভাই নামক চরিত্রে আব্দুল কাদের ছিলেন বেশ সাবলীল।
এবার আসি পর্দার পেছনের গল্পে। এডিটিং আর সিনেমাটোগ্রাফি বলতে কিচ্ছু নাই এই মুভিতে। আমজাদ হোসাইন আর মোস্তফা কামাল সম্ভবত ফ্রীতে কাজ করেছিলেন। আর কোনো ডিরেক্টরের কাজ এত জঘন্য হতে পারে তা আমার জানা ছিলো না। প্রণব ভট্টের লিখা গল্পটা বেশ মিষ্টি হলেও তার সবটাই তেঁতো করে দিয়েছে ডিরেক্টর মতিন রহমান।
রং নাম্বার সিনেমার গানগুলো ছিলো খুবই সুন্দর। আইয়ুব বাচ্চু, ইমন সাহা, এস আই টুটুল এবং নচিকেতার লিখা গানগুলো অলটাইম হিটের তালিকায় থাকার যোগ্য দাবীদার। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকেও টুটুল ভাই বেশ ভালো কাজ করেছেন।
এতসব খেদ থাকার পরেও মুভিটা আমি বেশ কয়েকবার দেখেছি, কেনো জানেন? আবেগ থেকে। ওই সময়ের সামাজিক পরিবেশ পরিস্থিতি যারা নিজ চোখে দেখেছেন, তাদের নস্টালজিক করে দিতে বাধ্য এই মুভিটা। রিয়াজ আর শ্রাবন্তী তাদেরকে বারবার ফিরিয়ে নিবেই সেই রং নাম্বারে প্রেম করার দিনগুলোতে !
দ্য রং নাম্বার ইজ নাউ দ্য রাইট নাম্বার..