রাজধানী ঢাকাকে বলা হয় মসজিদের নগরী। ঢাকার মত এত মসজিদ বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। এমনকি বাইরের দেশগুলোতেও এক এলাকায় এত এত মসজিদ দেখা যায়না। আপনি যদি সত্যিকার অর্থেই মসজিদের নগরী দেখতে চান, তাহলে আপনাকে যেতে হবে পুরান ঢাকায় ! আপনি কিছু দূর হাঁটা মাত্রই একটি করে মসজিদ দেখতে পাবেন। পুরান ঢাকায় যখন একসাথে সব মসজিদ আজান দেয়া শুরু করে, আপনি দ্বিধায় পরে যাবেন যে, কোনটা কোন মসজিদের আজান !
ঢাকায় অবস্থিত কিছু ঐতিহ্যবাহী মসজিদ নিয়ে ছারপোকা ম্যাগাজিন এর আজকের এই পোস্ট। এমন অনেকেই আছেন, বিভিন্ন মসজিদে নামাজ পড়া যাদের শখ। তাইলে এই মসজিদগুলোই গিয়ে নামাজ পড়ে আসতে পারেন !
বিনত বিবির মসজিদ
বিভিন্ন তথ্যসুত্র ঘেটে জানা যায়, ঢাকার সবচেয়ে পুরাতন মসজিদ হিসেবে পরিচিত এই বিনত বিবির মসজিদ ! মসজিদটির নাম এর নির্মাতা বিনত বিবির নাম অনুসারে রাখা হয়। পুরান ঢাকার নারিন্দায় এই মসজিদের অবস্থান। ১৪৫৭ সালে মারহামাতের মেয়ে মুসাম্মাত বখত বিনত বিবি এটি নির্মাণ করেন। প্রায় ৬০০ বছরের পুরাতন এই মসজিদ। তখনকার সময় বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা যখন এই বাংলায় ব্যবসা করতে আসতেন, তখন তারা এই মসজিদে নামাজ পড়তেন। কারণ নারিন্দায় ছিলো বুড়িগঙ্গা নদীর শাখা। মসজিদের পাশেই এর নির্মাতা বিনত বিবিকে শায়িত করা হয়েছে। প্রথমদিকে মসজিদটি দুইতলা থাকলেও পরবর্তীকালে এটিকে সংস্করণ করে তিনতলা করা হয়েছে। নারিন্দার এ মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে অবশ্যই ঐতিহ্যবাহী ‘বিউটির লাচ্ছি’ খেয়ে আসবেন। ঢাকার যত লাচ্ছি আছে, তারমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এই বিউটির লাচ্ছি !
তাঁরা মসজিদ
পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় অবস্থিত তাঁরা মসজিদ। ঢাকায় যে কয়টি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ আছে, তারমধ্যে আরমানিটোলার এই তাঁরা মসজিদ অন্যতম। স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে জানা যায়, এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয় আঠারো শতকের দিকে। অর্থাৎ ইংরেজদের আমলে ! লোকমুখে শুনা যায়, মির্জা গোলাম পীর এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। এই মসজিদের নাম তাঁরা মসজিদ হওয়ার কারণ হলো, মসজিদটির সাদা মার্বেল পাথরের গায়ে অসংখ্য তাঁরা আঁকা রয়েছে। এ থেকেই মসজিদটির নামকরণ করা হয় তাঁরা মসজিদ ! মসজিদের প্রবেশপথে রয়েছে বিশাল আকৃতির একটি তাঁরা। মূলত এটি একটি ঝর্ণা। সন্ধ্যার আগে ঝর্ণাটি চালু করা হয়। মাঝে মাঝে মানুষ নামাজ শেষে এখানে এসে বসে। প্রথমদিকে তিনটি গম্বুজ থাকলেও পরবর্তীকালে আরো ২টি গম্বুজ নির্মাণ করা হয়। এখন সর্বমোট ৫টি গম্বুজ আছে। শুরুর দিকে মসজিদটি অনেক সাদামাটা ছিলো। পরবর্তীতে সংস্কারকার্য করে বর্তমান রূপ দেয়া হয়েছে। মসজিদের পিছনের বাম সাইডে রয়েছে একটি কবরস্থান। নির্মাতা মির্জা সাহেবকে এখানেই করব দেয়া হয়েছিলো। লোক মুখে জানা যায়, মসজিদের প্রথম ইমামকেও এখানে কবর দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন এখানে হাজারো দেশি ও বিদেশী দর্শনার্থী ঘুরতে আসে। কোনো এক শুক্রবারে গিয়ে জুম্মার নামাজ পড়ে আসতে পারেন। সাথে উপভোগ করতে পারবেন ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটির অপরূপ সৌন্দর্য্য !
লালবাগ শাহী মসজিদ
লালবাগ যেমন লালবাগ কেল্লার জন্য বিখ্যাত। ঠিক অপরদিকে লালবাগ শাহী মসজিদ এর জন্যও বিখ্যাত। প্রায় ৩০০ বছর আগের এই মসজিদটির নির্মাণকাল ছিলো ১৭০৩ সাল। তৎকালীন ঢাকার উপশাসক সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রপৌত্র ‘ফররুখশিয়র’ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। ঢাকার মধ্যে যেসব বড় মসজিদ আছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। এই মসজিদে একসাথে প্রায় ১,৫০০ লোক নামাজ পড়তে পারে। মসজিদটির মূল নকশা ঠিক রেখে এপর্যন্ত বহুবার এর সংস্করণ করা হয়েছে। এই মসজিদের কিবলার উপরের দিকে একটি গম্বুজ আছে। যা সচরাচর দেখা যায় না। প্রত্যেকটা মিহবারের দিকে ৩টি করে প্রবেশপথ রাখা হয়েছে। লালবাগ কেল্লা ঘুরতে গেলে অবশ্যই এই জায়গাটি দেখে আসতে পারেন !
চকবাজার শাহী মসজিদ
চকবাজার শাহী মসজিদ বাংলার এমন একটি মসজিদ, যা উদ্বোধন করেছিলেন বাংলার শেষ নবাব শায়েস্তা খাঁ। চকবাজার শাহী মসজিদ ঢাকার চকবাজারে অবস্থিত। বর্তমানের এর আয়তন আগে থেকে বৃদ্ধি করে দ্বিগুণ করা হয়েছে। এটি প্রায় চারশত বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, মসজিদটি তার প্রথম নির্মাণ হারিয়েছে। অর্থাৎ প্রথমে যেভাবে নির্মাণ করা হয়েছিলো, বর্তমানে সংস্কার করে তা পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। প্রথমদিকে তিনটি গম্বুজ নিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিলো। মসজিদের আয়তন ছোট হওয়ার কারণে সামনের দিকে যে জায়গা রাখা হয়েছিলো, পরবর্তীকালে সেই জায়গায় মসজিদ এর কিছু অংশ নির্মাণ করা হয় !
মসজিদের নগরী ঢাকায় এছাড়াও রয়েছে আরো অনেক অনেক ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। ২০১৬ সালের জরীপে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকায় বড় বড় উল্লেখযোগ্য মসজিদের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজারেরও বেশি। এছাড়াও আরো অগণিত ছোটখাট মসজিদ তো আছেই। সব মিলিয়ে পুরো বাংলাদেশে মসজিদের সংখ্যা প্রায় আড়াই লক্ষেরও বেশি !
চাইলে আপনিও আপনার এলাকার মসজিদগুলো সম্পর্কে আমাদের ম্যাগাজিনে লিখতে পারেন। মসজিদ সম্পর্কে লেখা ও ছবি পাঠাতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ (Charpoka) এর ইনবক্সে !