জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এর আগেও আমাদের সৌরজগতের বাইরে পৃথিবীর মত গ্রহ খুঁজে পেয়েছেন, কিন্তু এক কোপে সাতটি ! তাও আবার একটি তারার চারপাশে ! চমকটা উপলব্ধি করা যায়।
আবিষ্কার করেছেন বেলজিয়ামের লিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মিশায়েল জিল ও তার সতীর্থরা। তাদের সমীক্ষা গত বুধবার ‘ন্যাচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সদ্য আবিষ্কৃত সব কয়টি গ্রহেই ‘‘উপরিভাগে তরল পানি, এমনকি জীবনের রেশ থাকতে পারে,’’ প্রবন্ধতে লিখেছেন জিল।
নতুন আবিষ্কৃত গ্রহগুলি যে বামন তারাটির চারপাশে ঘুরছে, তার বৈজ্ঞানিক নাম হলো ‘ট্র্যাপিস্ট-১’ (Trappist-1)। আয়তনে বৃহস্পতি গ্রহ বা Planet Jupiter এর প্রায় কাছাকাছি। পৃথিবী থেকে ৩৯ আলোকবর্ষ দূরত্বে রয়েছে এই বামন তারকাটি।
গ্রহ সাতটিকে আপাতত শুধু ১বি, ১সি ইত্যাদি করে ১এইচ অবধি ডাকা হচ্ছে। তারা সকলেই ‘ট্র্যাপিস্ট-১’ এর বেশ কাছে, সূর্য থেকে পৃথিবীর যা দূরত্ব, তার চেয়ে অনেক বেশি কাছে।
এটা সম্ভব, কেননা ‘ট্র্যাপিস্ট-১’ সূর্যের চেয়ে অনেক ছোট ও অনেক বেশি ঠান্ডা, যার ফলে তথাকথিত নাতিশীতোষ্ণ, বসবাসের উপযোগী এলাকাটি তারকার অনেক কাছে এসে পড়েছে, যেখানে পানি উবে যাবে না অথবা জমে যাবে না, তরলই থাকবে। অর্থাৎ শূন্য থেকে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে থাকে এই ‘হ্যাবিটেবল জোন’।
তারার আলো
‘ট্র্যাপিস্ট-১’-এর আলোও খুব উজ্জ্বল নয়। সমীক্ষাটির যৌথ রচয়িতা আমরি ত্রিয় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি বলেছেন যে, ‘ট্র্যাপিস্ট-১’ এর আলো সূর্যালোকের ২০০ ভাগের এক ভাগের মত হবে। অর্থাৎ সূর্যাস্তের শেষে যেরকম আলো হয়। কিন্তু ‘ট্র্যাপিস্ট-১’ এর আলো অন্তত আমাদের চাঁদের আলোর চেয়ে বেশি জোরালো, কাজেই এই গ্রহগুলি খুব বেশি ঠাণ্ডা হবে না, বলেছেন ত্রিয়।
‘ট্র্যাপিস্ট-১’ এর আলোকরশ্মির অধিকাংশই অবলোহিত বর্ণালীতে, যা আমরা দেখতে পাই না। আকাশটা নাকি হালকা সুড়কি রঙের হতে পারে, বলে ত্রিয়র ধারণা।
সেখানে কি জীবন আছে?
‘ট্র্যাপিস্ট-১’ এর গ্রহগুলিতে যদি সমুদ্র থাকে আর সেখানে জীবনের সূচনা ঘটে (থাকে), তাহলে কোনো বিপদ নেই। কিন্তু সাগর ছাড়া অন্য কোথাও জীবনের সূচনা ঘটলে তার ‘বাঁচা-মরা’ নির্ভর করবে ‘ট্র্যাপিস্ট-১’ থেকে গ্রহটির দিকে কি পরিমাণ রশ্মি বিকিরণ ঘটছে, তার উপর।
ট্র্যাপিস্ট-১ এ প্রানের সন্ধান !
এই গ্রহগুলির বায়ুমণ্ডল বা আবহমণ্ডল পরীক্ষা করে দেখার উদ্যোগ নিয়েছেন গবেষকরা। গবেষকরা এ কাজের জন্য জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করবেন। টেলিস্কোপটিকে এবছর মহাকাশে পাঠানো হবে এবং তা সদ্য আবিষ্কৃত গ্রহগুলিতে মিথেন, অক্সিজেন ও ওজোন, এই তিনটি গ্যাস আছে কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখবে। ওই তিনটি গ্যাস একসঙ্গে থাকার অর্থ, সেখানে জীবনের সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।