Selfie – ইংরেজিতে ছয় অক্ষরের একটি শব্দ। অথচ এটাই বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত শব্দগুলোর একটি। বন্ধুদের সাথে আড্ডা থেকে শুরু করে কোনো সেলিব্রেটির সাথে প্রথম দেখা, সব জায়গাতেই এখন প্রথমে উঠে আসে এই শব্দটা। যেকোনো মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দী করতে সেলফির জুড়ি মেলা ভার।
চলুন একটু খুঁজে দেখি, এই সেলফি আসলে কি? আর কেই বা প্রথম প্রচলনকারী এই পদ্ধতিটার?
নিজস্বী বা সেলফি (Selfie) হলো আত্মপ্রতিকৃতি আলোকচিত্র, যা সাধারণত হাতে-ধরা ডিজিটাল ক্যামেরা বা ক্যামেরা ফোন ব্যবহার করে নেয়া হয়। বর্তমানে অত্যন্ত পরিচিত একটা শব্দ। Selfie শব্দটি প্রথম এসেছে Selfish থেকে। বোঝাই যাচ্ছে যে, এই শব্দটি কোনো পুরানো শব্দ নয়। বর্তমানে Selfie বলতে প্রতিকৃতি বোঝানো হয়।
সেলফির ইতিহাস খুব অদ্ভুত। যতদুর জানা যায়, ইতিহাস এর প্রথম সেলফি তোলা হয়েছিলো ১৮৩৯ সালে। রবার্ট কর্ণিলিয়াস নামের একজন ফটোগ্রাফার প্রথম সেলফি প্রকাশ করেন। তর্কসাপেক্ষে ওইটাই ছিলো প্রথম সেলফি। তৎকালীন সময় ক্যামেরায় ছবি ধারণ করতে একটু সময় লাগতো। রবার্ট সাহেব এই সুযোগ টা কাজে লাগান। তিনি ক্যামেরার টেক বাটনে ক্লিক দিয়ে দৌড়ে ক্যামেরার সামনে চলে যান। এবং নিজের প্রতিকৃতি তুলতে সক্ষম হন। এরপর অনেক বছর পর্যন্ত এই প্রথাটা বন্ধ থাকে।
১৯০০ সালে পোর্টেবল কোডাক ব্রাউনি বক্স ক্যামেরা বাজারে আসার পর ফোটোগ্রাফিক আত্ম-প্রতিকৃতি তোলা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। বহনে সহজ এই ক্যামেরার সাহায্যে আয়নার মাধ্যমে সেলফি তোলার প্রচলন শুরু হয় তখন থেকেই। তবে সেলফি শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ২০০২ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ান এক অনলাইন ফোরামে।
অতঃপর ফেসবুক জনপ্রিয় হওয়ার পর অনেক দিন পর্যন্ত সেলফি নিম্ন রুচির পরিচায়ক ছিল। কারণ তখন বেশিরভাগ সেলফি গুলো বাথরুমের আয়নার সামনে তোলা হত। তখনকার দিনের সব সেলফিগুলোই টিনেজ মেয়েরা আপলোড করত।
২০১২ সালের শেষের দিকে টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে ‘Selfie’ শব্দটি বছরের আলোচিত সেরা দশ শব্দের অন্যতম শব্দ হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০১৩ সালে অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির অনলাইন ভার্সনে ‘Selfie’ শব্দটি নতুন সংযোজিত হয়। স্মার্টফোনের কল্যানে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্বে সেলফি তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
বর্তমানে সেলফি উভয় লিঙ্গের মানুষের মাঝেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে সেলফির উত্থান ঘটে মূলত ‘পর্ণ সংস্কৃতিতে’ ব্যবহারের মাধ্যমে। নিজেদের শরীর সুন্দরভাবে প্রদর্শনের মধ্যমে অন্যকে আকৃষ্ট করার জন্যই মহিলারা সেলফি তুলতো। যত বেশি আকর্ষণীয় হবে সেই সেলফি তত বেশি উন্নত। তবে আকর্ষণীয় নয় এমন সেলফি ব্যাপকতা পায় ২০১০ সালের পরবর্তী সময়।
২০১০ পরবর্তী সময়টাকে বলা হয় সেলফি যুগের নবজাগরণ। এই সময় সেলফি অনেকটা শিল্পের পর্যায়ে চলে যায়। একজন মানুষের উপস্থিতি, তার পছন্দ অপছন্দ, তার স্মরণীয় মূহুর্ত সব কিছুই ফুটে উঠে এই সেলফির মাধ্যমে। ২০১৪-২০১৭ সালের সময় টা হলো সেলফির পরিপূর্ণতা কাল। সেলফি এই সময়ে একটা শিল্প হয়ে ওঠে। টং এর দোকানের চাচা থেকে শুরু করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সবারই সেলফির ব্যাপারে উৎসাহ জন্ম নেয় এখানে।
সেলফি এখন এতটাই জনপ্রিয় যে, লেখকের এব্যাপারে আর কিছু না বললেও চলে। তারপরও জেনে রাখা ভালো যে, এই পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঠিক কতটা সেলফি আপলোড করা হয়েছে তার সঠিক তথ্য এখনো কোনো মাধ্যম দিতে পারেনি। তবে অনেক নিউজ পোর্টালের দাবী যে, প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায় দুই মিলিয়ন সেলফি আপলোড দেয়া হয়ে থাকে।
এবার একটু কল্পনা করে দেখেন তো এই ছবিগুলো যদি প্রিন্ট করে রাস্তায় সাজিয়ে রাখা যায় তাহলে কি হবে? বলা বাহুল্য যে, অনায়াসে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রাস্তা ঢেকে যাবে।
বন্ধুদের সাথে একটা আড্ডায় নিজেকে সেলফি ছাড়া চিন্তা করুন। ভাবুন তো কেমন লাগে? বিরক্ত লাগেনা?