বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের নাম নিতে গেলেই সবার আগে আমাদের যার কথা মনে হয় তিনি হচ্ছেন বিল গেটস। কিন্তু আমরা কি জানি মানব সভ্যতার শুরু থেকে এখন অব্দি সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিটি কে ছিলেন? আজকে সেই ব্যক্তির গল্পই বলবো।
উনার নাম ‘মানসা মুসা’। মুসা ছিলেন পশ্চিম আফ্রিকার মালি সাম্রাজ্যের অধিপতি। ‘সেলিব্রেটি নেট ও্যর্থ’ এর হিসাব মতে ১৯১৭ সালে যেই পরিমান সম্পত্তির বাজার মূল্য ১০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার, ২০১৭ সালের হিসাবে সেই সমপরিমাণ সম্পত্তির মূল্য হবে ২২৯৯.৬৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার। মাত্র ১০০ বছর আগের অর্থনৈতিক মূল্যমানের হিসাবে ১৩৩৭ সালে মানসা মুসার সম্পদের পরিমান ছিলো প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। যেখানে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বিল গেটসের সম্পত্তির পরিমান মাত্র (!) ৯০.৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ভাবা যায়? গেটস সাহেবের চেয়েও প্রায় ৪ গুণ ধনী ছিলেন মানসা মুসা।
মানসা মুসা মালি সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন ১৩১২ সালে। তিনিই প্রথম কোনো আফ্রিকান শাসক ছিলেন, যিনি ইওরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতা বিস্তার করেছিলেন। ৪০০ বিলিয়ন ডলারের মালিক মুসা অত্যন্ত দানশীল ছিলেন বলে জানা যায়।
ইসলাম ধর্মের অনুসারী মুসা প্রচন্ড ধার্মিক ব্যাক্তি ছিলেন। কথিত আছে, প্রতি শুক্রবার তিনি একটা করে মসজিদ নির্মান করতেন। উনার নিজের বসবাসের প্রসাদটি ছিলো সম্পূর্ণ স্বর্ণের তৈরী। ১৩২৪ সালে মুসা হজ্জ্ব করতে সৌদিআরব যাবার সময় সঙ্গে নিয়েছিলেন প্রায় ৬০ হাজার সঙ্গী এবং ১২ হাজার গোলাম যারা প্রত্যেকে বহন করেছিলো একটি করে সোনার তরবারি। এসব তরবারির একেকটার ওজন ছিলো ১.৮ কেজি করে। এই কাফেলায় তার যাত্রাসঙ্গী হয়েছিলো তৎকালীন আফ্রিকার সব নামীদামী আলেম ওলামা, শিক্ষক, চিকৎসক এবং সঙ্গীতশিল্পীরা। যাত্রাসঙ্গীদের সবার খরচ মুসা নিজেই বহন করেছিলেন। প্রায় ৮০টি উট ছিলো তার বহরে, যার প্রত্যেকটি প্রায় ১৪০ কেজি করে স্বর্ন বহন করেছিলো।
এই যাত্রাপথে প্রচুর দান খয়রাত করেন মুসা। মিশরের কায়রোতে তিনি এতো বেশি স্বর্ন বিতরন করেছিলেন যে তার পরবর্তী কয়েকবছর ওই অঞ্চলে স্বর্ণের দাম কমে গিয়ে প্রায় রূপার দামের কাছাকাছি চলে এসেছিলো। ওই ঐতিহাসিক হজ্জ্বে প্রায় দেড় লাখ পাউন্ড স্বর্ন খরচ করেছিলেন মুসা।
হজ্জ্ব থেকে ফেরার পথে মুসা সৌদি আর মিশর থেকে নিয়ে আসেন সেখানকার নামী দামী সব স্থাপত্যশিল্পীদের। তাদের মাধ্যমে মুসা মালি সাম্রাজ্যের প্রায় ৪০০টি শহরকে অাধুনিক করে গড়ে তোলেন। তার তৈরী স্থাপত্যের মধ্যে বিখ্যাত হচ্ছে শঙ্কর মাদ্রাসা বা ইউনিভার্সিটি অফ শঙ্কর, হল অফ অডিয়েন্স এবং গ্র্যান্ড প্যালেস। শঙ্কর মাদ্রাসা তৎকালীন সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় জ্ঞানী-গুণীদের আখড়ায় পরিনত হয়। প্রায় ২৫,০০০ শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যাবস্থা ছিলো এখানে।
বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী মুসা’র মৃত্যুর বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট দলিল পাওয়া যায়নি। তবে কোনো কোনো ইতিহাসবিদদের মতে তিনি ২৫ বছর রাজত্ব করার পর ১৯৩৭ সালে তার ছেলের হাতে সিংহাসন তুলে দেন, এবং ওই বছরেই মৃত্যুবরণ করেন।