ফুটবল, এক গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। ফুটবল খেলার প্রচলন ইংল্যান্ডে। আর সব খেলার মত ফুটবল খেলার রয়েছে কিছু নিয়ম-কানুন, যা একজন খেলোয়াড়কে মেনে চলতে হয় বাধ্যতামূলকভাবে। আর যদি সে নিয়ম লংঘন করে তবে সে শাস্তির আওতায় আসবে।
ফুটবল খেলায় অসদাচরণ করলে ম্যাচ পরিচালনাকারী রেফরি ফাউল দিয়ে থাকেন। রেফারির চোখে ফুটবলের নিয়ম বিরোধি কোন ফাউল বা অসদাচারণের জন্য তিনি কার্ডও ব্যবহার করে থাকেন। আমরা যারা এ প্রজন্মে ফুটবল দেখি তারা কার্ড সম্পর্কে জানি কিন্তু এর ইতিহাস কি সবাই জানি?
একবার ভাবুন তো, কোনো ফুটবল ম্যাচে কার্ড ব্যবহার করছেন না রেফারি, তাহলে সেই ম্যাচের দৃশ্য আপনি নিজের কল্পনার মানসপটে আঁকুন। অবাক হওয়ার কিছু নেই। পৃথিবীতে আমরা যা দেখছি সব কিছুরই একটা শুরু আছে। তেমনি জনপ্রিয় ফুটবলে রয়েছে কার্ড প্রচলনের ইতিহাস। আসুন জেনে নেয়া যাক Football Referee Cards এর ইতিহাস সম্পর্কে কিছু তথ্য…
ফুটবলে কার্ড প্রচলনের ইতিহাস
সময়টা ১৯৬৬ সাল। ইংল্যান্ড ফুটবল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি আর্জেন্টিনা ও ইংল্যান্ড। খেলায় বেশ ভয়ংকর একটা ফাউল করলেন অ্যান্তনি রাতিন। রেফারি রুডি ক্রেইটলেন তাকে মাঠ থেকে বের হয়ে যাবার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মাঠ ছাড়তে নারাজ। তাতেই বাধল বিপত্তি। ম্যাচ রেফারি কিন অ্যাস্টন এগিয়ে এলেন অবশেষে। অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে রাতিন কে মাঠের বাইরে পাঠালেন তিনি।
বিষয়টা অবশ্য এখানেই শেষ হল না। রাতিনকে এই শাস্তি দেবার জন্য রুডিকে বেশ বিপাকেই পড়তে হল। কারণ, ইংল্যান্ড দলের দুজন খেলোয়াড় মাঠে রাতিনের মতোই অপরাধ করেছিল। তাদের ফাউল টা রাতিনের মতো বাড়াবাড়ি পর্যায়ের ছিল না – এই দাবি করেও সমালোচনার হাত থেকে রক্ষা পাননি রুডি।
এই বিষয়টি বেশ ভাবিয়ে তোলে কিন অ্যাস্টন কে। বড় ধরণের ফাউলের জন্য একজন খেলোযাড়কে মাঠের বাইরে পাঠানো হল, কিন্তু তারচেয়ে কম ফাউল করেছে যে তাকে কিভাবে সতর্ক করা যায়?
ভাবছিলেন আর গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পথে কিংস্টোন হাই-স্ট্রিটে ট্রাফিক সিন্যালে আটকা পড়ল গাড়ি। সিগনাল বাতি গুলোর দিকে আনমনেই চোখ আটকে গেল তার। দেখলেন বাতিগুলো সবুজ থেকে হলুদ এবং হলুদ থেকে লালে রুপান্তরিত হচ্ছে্ । সবুজ মানে চলতে থাকো। হলুদ মানে সতর্ক হ্ও। আর লাল মানে থেকে যা্ও। এখান থেকেই আইডিয়াটি পান তিনি। খেলার মাঠেও তো এভাবে খেলোয়াড়দের সতর্ক করা যেতে পারে। এরপর তিনি প্রস্তাব দেন ফিফার কাছে।
১৯৭০ এ মেক্সিকো বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে সমস্যা এড়াতে পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতি অবলম্বন করল ফিফা। ফাউল করলে খেলোয়াড়কে সতর্ক করার জন্য হলুদ কার্ড আর সিরিয়াস ধরণের ফাউল করে বসলে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাবার জন্য লাল কার্ড দেখানোর প্রচলন শুরু হল। তবে এই পদ্ধতিতে প্রথম লাল কার্ড দেখানো হয় ১৯৭৬ সালের ২ অক্টোবর। প্রথম লাল কার্ড পান ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের ডেভিড ওয়াগস্টাভ। অ্যাস্টন উদ্ভাবিত লাল ও হলুদ কার্ড আনুষ্ঠানিকভাবে ফুটবল খেলার নিয়মের অংশ হয় ১৯৯৩ সালে।
জানলাম ফুটবল খেলায় লাল ও হলুদ কার্ড এর প্রচলন। কিন্তু গোটা বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে সবুজ কার্ডও ফুটবল মাঠে তার আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা ফিফা কতৃক অনুমোদিত হলেও সবুজ কার্ড এর ব্যবহার করা হয়নি ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত। ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর রোমে ফুটবল ইতিহাসের প্রথম সবুজ কার্ড প্রদর্শন করেন রেফারি মার্কো মেইনারদি।
কেউ যদি খেলার মধ্যে নিজের সততা প্রকাশ করে, তাহলে তাঁকে সবুজ কার্ড দেখিয়ে সম্মান জানানো হয়। ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর ইটালি দ্বিতীয় ডিভিশন লিগের ভিরতাস এনতেলা বনাম ভিসেনজার এর ম্যাচে রেফারি মেইনারদি ভিসেনজারের পক্ষে কর্ণার দেন। তখন ভিসেনজারের স্ট্রাইকার গালানো রেফারিকে বলেন ভিরতাস এনতেলার কোন খেলোয়াড় এর গায়ে বল লাগেনি। এভাবে সততা প্রকাশ করায় এদিন গালানো সৃষ্টি করেন ফুটবল ইতিহাসে কোন খেলোয়াড়ের প্রথম সবুজ কার্ড পাওয়ার রেকর্ড !
কে জানে হয়ত অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বসেরা খেলোয়াড়রাও এই কার্ড দেখার গৌরব অর্জন করবেন !