পুরো পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে আছে প্রায় ৯ মিলিয়নের মত প্রাণী। প্রতিনিয়ত আমরা যেসব প্রাণী দেখে আসছি, সেগুলো কোনোভাবেই আমাদের কাছে অদ্ভুত বলে মনে হয় না। হয়ত দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি তাই। কিন্তু এর বাইরে অদেখা যত প্রাণীকুল রয়েছে তার অধিকাংশই আমাদের কাছে বিস্ময় সৃষ্টিকারী, অনেক ক্ষেত্রে ভয়ংকর ও হতে পারে।
আমাদের না দেখা যত অদ্ভুতুড়ে প্রাণী রয়েছে তাদের অধিকাংশেরই বসবাস সমুদ্রে। এরা ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী নয় কিন্তু দেখতে ভিনগ্রহের প্রাণীর মতই রহস্যময় এবং বৈচিত্রময়। আজকের আর্টিকেলটি এরকমই কিছু অদ্ভুত সামুদ্রিক প্রাণি নিয়ে লেখা। চলুন জেনে আসি সেই সব অদ্ভুত প্রাণিদের অদ্ভুত সব জীবনপ্রণালী সম্পর্কে।
গভীর সমুদ্রের যত অদ্ভুতুড়ে প্রাণী
১. The Narwhal : কমবেশি সবারই Unicorn সম্পর্কে ধারণা আছে, কল্প কাহিনী বা রুপকথার উড়ন্ত ঘোড়া। যার মাথায় বড় এবং লম্বা একটি শিং আছে। কে জানত! এই রুপকথার ইউনিকর্ন সমুদ্রের নিচে ঘুরে বেড়াবে।

The Narwhal (Photo credit: Criquetshirts.com)
Narwhal নামক তিমি মাছ, যার মাথায় ইউনিকর্নদের মতই রয়েছে বিরাট বড় এক শিং। কিছু সংখ্যক লোক এটা বিশ্বাস করে যে ইউনিকর্ন আর তিমি মাছ শংকর প্রজাতি। যদিও তা সম্ভব না। ইউনিকর্নদের অস্তিত্ব শুধু কল্পনা অব্ধিই সীমাবদ্ধ। তবে সমুদ্রের নিচে The Narwhal নামক ইউনিকর্নদের অস্তিত্ব ঠিকই আছে। প্রাণি হিসেবে এরা বেশ অদ্ভুত!
২. Glaucus Atlanticus : নীল ড্রাগন, ব্যক্তিগত ভাবে এই প্রাণীটিকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। নীল রঙা এই প্রাণীগুলা আকার আকৃতির দিক থেকে অনেকটা কাল্পনিক ড্রাগনদের মত। এরা সাধারণত খোলস ছাড়া হয়।

Glaucus Atlanticus
মলাস্কা পর্বের এই প্রাণী গুলো আকারে হয় মাত্র ১.২ ইঞ্চি। এদের বাসস্তান মূলত আটলান্টিকে। দেখতে সুন্দর হলেও এদের শরীরে রয়েছে বিষাক্ত রকমের কাটা, ধরতে গেলে হাতে বিধে যেতে পারে। তাই এদেরকে ধরা যায় না।
৩. Ogcocephalus Darwinia : লাল ঠোঁটওয়ালা ব্যাটফিশ ! এই টুকটুকে লাল ঠোঁটওয়ালা ব্যাটফিশদের বাসস্থান মূলত আমেরিকা মহাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে।

Ogcocephalus Darwinia
প্রথম দেখলে এই মাছটাকে আপনার কাছে কোনো রাগি মহিলা বলে মনে হতে পারে যে ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক দিয়ে রাগান্বিত দৃষ্টিতে আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। যদিও প্রথম দেখায় আমার কাছে মাছটাকে মাজেদা খালার প্রতিবিম্ব বলে মনে হয়েছে 😁। এরা মৎস্য প্রজাতির মধ্যে থেকেও সাতার কাটতে জানে না। সারা জীবন সমুদ্রের নিচে হেটে এবং ছোটকাট চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ খেয়ে জীবন ধারণ করে।
৪. The blue Parrot Fish : সমুদ্রের নিচের টিয়া পাখি। দেখতে হুবুহু টিয়া পাখির মত,শুধু গায়ের রঙ নীল। টিয়া পাখির ঠোটের মত হুবুহু ঠোট নিয়ে এরা ঘুরে বেড়ায় সমুদ্রের তলদেশে। সমুদ্রের প্রাণীদের মধ্যে এরা অত্যন্ত বৈচিত্রময়।

The blue Parrot Fish
আর আরেকটি আলাদা বৈশিষ্ট্য এদের অন্যান্য সামুদ্রিক জীব থেকে আলাদা করে রেখেছে, আর তা হলো এদের গায়ের রঙ। এদের মত নীল রঙা প্রাণী সমুদ্রে আর একটি নেই। এরা সাধারণত ৩০ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। তবে কিছু সংখ্যক মাছ প্রায় ১.২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।
৫. Mitsukurina Owstoni : গাবলিন হাঙর, মাছটা আমার কাছে বেশ ভয়ংকর এবং ইন্টারেস্টিং। গভীর সমুদ্রের অন্ধকার জগতেই এদের বসবাস। বাচ্চা-বুড়ো যেকোনো কেউই এর চেহারা দেখে ভয় পেয়ে যেতে পারে।

Mitsukurina Owstoni
লিভিং ফসিল নামক পরিচিত প্রাণীটি কোনো এলিয়েন না হলেও অতি ভয়ংকর কোনো এলিয়েনের নামে চালিয়ে দেয়া যায়। গাবলিন হাঙর নামক এই প্রজাতি Mitsukurindae পরিবারের বেচে থাকা সর্ব শেষ প্রজাতি। এদের উচ্চতা প্রায় ১০ থেকে ১৩ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। দেখতে অতিমাত্রিক ভয়ংকর হলেও এরা সাধারণত আক্রমণাত্মক হয় না।
৬. Lybia : বক্সার কাঁকড়া, এই ক্ষুদ্র আকৃতি বিশিষ্ট বক্সার কাঁকড়া দল লিবিয়া গণের প্রায় ১০ রকম প্রজাতি নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছে।

Lybia Crab
এদের আরো বিভিন্ন নাম রয়েছে যেমন – বক্সিং কাঁকড়া এবং পম পম কাঁকড়া। এরা সামুদ্রিক আ্যনোমোনদের সাথে মিথোজীবী হিসেবে বাস করে। নিজেদের মাধ্যমে এরা আ্যনোমোনদের বিভিন্ন বিপদ হতে রক্ষা করে, যার পরিবর্তে আ্যনোমোনরা তাদের খাবার সংগ্রহ করে দেয়।
৭. The Flying Fish: ফ্লাইং ফিশ সম্পর্কে কমবেশ সবারই ধারণা আছে, সাতার কাটার এক পর্যায়ে যারা সমুদ্রের পানির উপর দিয়ে উড়তে শুরু করে। এরা ঘন্টায় প্রায় ৭০ কিলোমিটারের ও অধিক গতিতে উড়তে পারে। প্রায় ৪৫ সেকেন্ডের মত সময় শুন্যে ভেসে থাকতে পারে এরা। অধিকাংশ ফ্লাইং ফিশই দেখতে রুপালি রঙের হয়, আবার অনেক ক্ষেত্রে কিছু কিছু ফ্লাইং ফিশদের ডানা হয় বাদামী রঙের। প্রকৃতিতে প্রায় ৬৪ প্রজাতির ফ্লাইং ফিশ রয়েছে। এদের মধ্যে দুটি প্রজাতির ফ্লাইং ফিশ বাস করে আমাদের বঙ্গোপসাগরে।
৮. Scotoplanes Globosa : স্কোটোপ্লেনস, এরা আয়তনের দিক দিয়ে অতি ক্ষুদ্র প্রাণী। সমুদ্রের তল দেশেই এদের বসবাস, স্কোটোপ্লেনস সায়েন্টিফিক নাম হলেও এদের অন্য আরেকটি নাম আছে, সী পিগ বা সমুদ্রের শূয়র।

Scotoplanes Globosa (Photo Credit: Neptune Canada)
এই নাম হওয়ার পেছনের মূল কারণ এরা দেখতে প্রায় ৫০ শতাংশ শূয়রের মত। মূলত আটলান্টিক,প্যাসিফিক ও ভারত মহাসাগরের প্রায় ৫ কি.মি নিচের দিকে এদের দেখা পাওয়া যায়।