ক্যাসানোভা শব্দটি ‘বিশ্বপ্রেমিক’ হিসেবে দুনিয়া জুড়ে পরিচিত। ভেনিসের খুব সাধারণ এক পরিবারে তাঁর জন্ম। পুরো নাম গিয়াকোমো জিরোলামো ক্যাসানোভা (Giacomo Girolamo Casanova)।
বাবা-মা অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাদের ইচ্ছা ছিলো ছেলেকে যাজক বানাবেন। তবে যাজক না হয়ে ক্যাসানোভা সাধারণ শিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং ১৭৪২ সালে তিনি পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে গ্রাজুয়েট হন। এছাড়াও তিনি নৈতিক দর্শন, রসায়ন, অংক এবং চিকিৎসা শাস্ত্র নিয়েও পড়াশোনা করেন।
তিনি তাঁর ৭৩ বছরের দীর্ঘ জীবনে ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, রাশিয়া সহ বেশ কয়েকটি দেশে ভ্রমন করেছেন। দেখা করেছেন সমসাময়িক সব খ্যাতনামা ব্যক্তিদের সাথে। এদের মধ্যে ছিলেন ভলতিয়ার, রুশো, রাশিয়ার রাণী ক্যাথিরিন, ভ্যানগগ, পোপ দ্বাদশ বেনেডিক্ট ও সুরকার মোজার্ট এর মত ব্যক্তিত্ব।
ডাক্স শহরের দূর্গে বসে ১৭৮৮ সালে ক্যাসানোভা আত্মজীবনী রচনা শুরু করেন, এটি ১৭৯২ সালে শেষ হয়।
ক্যাসানোভা আত্মজীবনী শুরু করেছেন এভাবে –
“আমার সারা জীবনের ভাল এবং মন্দ সবকিছু প্রকাশ করার জন্যই এটি আমি রচনা করছি।”
আত্মজীবনীতে সমসাময়িক সাহিত্য, শিল্প ও দর্শন আলোচিত হয়েছে। রয়েছে পর্যটন ও পরিব্রাজক হিসেবে ক্যাসানোভার ভ্রমণ বৃত্তান্ত।
কিন্তু এ গ্রন্থ যে বিষয়ের জন্য বিশ্বের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, তা হলো ‘প্রেম’। অসংখ্য নারীর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোনো নারীর সাথে তাঁর সম্পর্ক স্থায়ী হয়নি। নিজের অসংখ্য বৈধ, অবৈধ এবং পরকীয়া প্রেমের অকপট স্বীকারোক্তি স্থান পেয়েছে তাঁর আত্মজীবনীতে।
এ গ্রন্থের তথ্যের সত্যতা নিয়ে ইউরোপের পন্ডিত ব্যক্তিদের সংশয় থাকলেও পরে তা দূর হয়ে যায় !
১৭৫৫ সালে ভেনিস নগর কর্তৃপক্ষ ধর্মদ্রোহিতা ও জাদুবিদ্যা অনুশীলনের দায়ে ক্যাসানোভাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।
তাঁর জীবনের শেষ ১২ বছর কেটেছে বর্তমান চেক রিপাবলিকের ডাক্স শহরের সেই দুর্গে। সেখানেই গ্রন্থাগার হিসেবে কমর্রত অবস্থায় ১৭৯৮ সালের ৪ জুন ক্যাসানোভা মৃত্যুবরণ করেন।