ইতিহাস তৈরী করা কোনো সহজ কথা নয়। ভালো কাজ করে যেমন পৃথিবীর ইতিহাসে জায়গা করে নেয়া যায়, তেমনি মন্দ কাজের মাধ্যমেও অনেক মানুষের মাঝে পরিচিতি লাভ করা যায়।
গ্যাংস্টার কথাটা শুনলেই হয়ত আমাদের চোখে ভেসে উঠে স্যুটেড-বুটেড লম্বা-চওড়া ভারিক্কি চালে কথা বলা কোনো সুপুরুষ, যার নাকের নিচে মোটা গোঁফ অথবা কপালের উপর চকচকে টেকো মাথা। কিন্তু না, সবসময় আমাদের ধারণা সত্যি নাও হতে পারে। যেমন, নারী মাফিয়া বা লেডি গ্যাংস্টার। শুনে হয়ত অবাক লাগতে পারে, তবে সত্যি সত্যিই পৃথিবীর ইতিহাসে বেশ কয়েকজন ভয়ংকর ও কুখ্যাত লেডি গ্যাংস্টার বা নারী মাফিয়ার অস্তিত্ব ছিলো, এবং এখনো আছে। যারা নৃশংসতায় হার মানাতে পারে হায়েনাকেও। কঠোর হতে পারে পর্বতের চেয়েও বেশি। নিজেদের স্থির বুদ্ধি, তীক্ষ্ণ মনন, প্রচন্ড সাহস আর সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তারা পরিচিতি পেয়েছে আন্ডারওয়ার্ল্ড তথা সমগ্র বিশ্বে। আজ এমনই কয়েকজন নারীর গল্প শোনাবো…
ঐতিহাসিক খলনায়িকাদের গল্প
Claudia Ochoa Félix : জনসম্মুখে ক্লডিয়া একজন মেক্সিকান অ্যাক্ট্রেস ও মডেল। কিন্তু সবার অগোচরে সে ড্রাগ ডিলিং এবং একটা কন্ট্রাক্ট কিলিং সংগঠন Los Ántrax এর প্রধান হর্তাকর্তা। আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এর মতে, Los Ántrax হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ এবং নৃশংস গ্যাং। ক্লডিয়া এতোটাই ক্ষমতাধর যে তার নামে প্রচুর খুন গুম হত্যা চোরাচালান ও অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগ থাকলেও আজ অব্দি তা কেউ প্রমান করতে পারেনি। সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়মিত এই অপরূপা নারী পারিবারিক জীবনে দুই সন্তানের জননী।
Samantha Louise Lewthwaite : হোয়াইট উইডো বা সাদা বিধবা নামে পরিচিত এই ব্রিটিশ নারী বর্তমান পশ্চিমা বিশ্বের মোস্ট ওয়ান্টেড টেরোরিস্টদের একজন। “আল-শাবাব” নামক জঙ্গী সংগঠনের প্রধান এই নারীর বিরুদ্ধে প্রায় ৪০০ মানুষ হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
সর্বপ্রথম ২০১২ সালে কেনিয়ার পুলিশ তার বিরুদ্ধে নকল পাসপোর্ট ব্যবহার করার অভিযোগ আনে। সেখান থেকে পালিয়ে যাবার পর বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্র মতে এই ভদ্র মহিলাকে বিভিন্ন সময় স্কটল্যান্ড, জার্মানি ও সাউথ অাফ্রিকায় দেখা গেসে। ২০১৪ সালের নভেম্বরে রাশিয়ান পুলিশ জানায় একদল ইউক্রেনিয়ান বন্দুকধারীর সাথে গোলাগুলির এক পর্যায়ে একজন মহিলা মারা যান, যাকে তারা সামান্থা বলে সন্দেহ করছে। তবে ওই মৃত মহিলাই যে সামান্থা সে ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত হতে পারেনি।
Sandra Ávila Beltrán : দ্য কুইন অফ দ্য প্যাসিফিক খেতাব প্রাপ্ত এই নারী বংশ পরম্পরায় একজন মাফিয়া লিডার হয়েছিলেন। শখের এই লেখিকার জন্ম, বেড়ে ওঠা মেক্সিকো-তে। কন্ট্রাক্ট কিলিং, ড্রাগ ডিলিং, অবৈধ অস্ত্রের ব্যাবসাসহ হেন কোনো অপরাধ কার্যক্রম নেই যা সে করায়নি তার অধীনস্থদের মাধ্যমে।
তবে ২০০৭ সালে গ্রেফতার করার পর তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং ও অবৈধ অস্ত্র রাখা ছাড়া অন্য কোনো অপরাধ প্রমান করতে পারেনি পুলিশ। প্রায় ৭ বছর কারাভোগের পর ২০১৫ সালে মুক্তি পান ভয়ঙ্কর নারী। জেলে থাকা অবস্থায় তিনি প্রকাশ করেন নিজের লিখিত আত্মজীবনিমূলক বই The Queen of the Pacific: Time to Talk
Enedina Arellano Félix : তিজুয়ানা কার্টেল নামক আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রধান এই নারী তার পারিবারিক সূত্রে মাফিয়া রাজত্বে অধিস্থ হন। তার ছয় ভায়ের প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো এই অপরাধ সংগঠনটি, কিন্তু তাদের ছয় জনই গ্রেফতার কিংবা নিহত হওয়ার পর এ্যনেডিনা নিজের হাতে সংগঠনটির দায়িত্ব তুলে নেন এবং তার ভাইদের চে’ বেশি দক্ষতার সাথে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিজেদের অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যান। ২০১৪ সালে এ্যনেডিনা মানি লন্ডারিং ও ড্রাগ ডিলিং এর অপরাধে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাবাসে আছেন।
Melissa Calderon : “লা-চায়না” নামে খ্যাত এই মহিলা তার অপরাধ কার্যক্রম শুরু করেন ২০০৫ সালে। এ পর্যন্ত তার নামে দেড়শ’রও বেশি খুন এবং বিভিন্ন সময়ে অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানের অভিযোগ রয়েছে। মেক্সিকান অপরাধ চক্র “Las Fuerzas Especiales de Los Dámaso” এর প্রধান এই নারী ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাভোগ করছেন।