সুখী হওয়ার জন্য আমরা কত কিছুই না করি। সুখ খোঁজার জন্য প্রতিনিয়ত আমরা জীবনের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। তারপরেও কি আমরা সুখী হতে পারছি? মান্না দে’র একটা গানের কথা মনে পড়ে গেলো –
“সবাই তো সুখী হতে চায়
তবু কেউ সুখী হয়, কেউ হয়না
জানিনা বলে যা লোকে সত্যি কিনা?
কপালে সবার নাকি সুখ সয় না।”
মানুষ জন্মের সময় অন্ধ হয়ে জন্মাতে পারে, বা বধির হয়ে জন্মাতে পারে অথবা বিকলাঙ্গ হয়ে জান্মাতে পারে। কিন্তু কখনো কি শুনেছেন যে, কোন মানুষ “অসুখী” হয়ে জন্ম নিয়েছে? মানে জন্ম থেকেই সে অসুখী। তার সুখী হবার ক্ষমতা নেই ।
হ্যাঁ, কথা বলছিলাম ২০১১ সালে রিলিজ পাওয়া ‘জাওম বালাগুয়েরো’ এর পরিচালনায় এবং ‘লুইস তসার’ অভিনিত স্পেনিশ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার সিনেমা “Sleep Tight (mientras duermes)” নিয়ে।
সিনেমার মূল চরিত্র সিজার। সে একটি অ্যাপার্টমেন্টের কেয়ারটেকার এর কাজ করত। সিজার বিশ্বাস করতো জন্ম থেকেই সে অসুখী এবং জীবনে কখনো সে সুখী হতে পারবে না। প্রকৃতি তাকে এভাবেই সৃষ্টি করেছে। একজন অসুখী ব্যক্তির জীবনের কোন উদ্দেশ্য থাকে না, থাকে না কোন অনুপ্রেরণা। মোট কথা সে কেন বেঁচে আছে সেটাই সে জানে না। সিজারের জীবনেও কোন উদ্দেশ্য নেই। নেই কোন বৈচিত্র্য। এরকম উদ্দেশ্যহীন এবং বৈচিত্র্যহীন জীবন যাপন করাটা যে কি পরিমাণ কষ্টদায়ক তা সিজার ছাড়া কেও বুঝতে পারবে না। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো তার আশেপাশের সবার জীবন সে দুর্বিষহ করে তুলবে। কারণ সিজার নিজে একজন অসুখী মানুষ। তাই সে তার আশেপাশের মানুষদেরকেও অসুখী করতে চায়। তাদেরকে কষ্ট দিয়ে, অশান্তিতে রেখে সে নিজে আত্নতৃপ্তি পেতে চায়।
অ্যাপার্টমেন্টের সবাইকে সে খুব সহজেই উত্তেজিত এবং রাগিয়ে তুলতে পারত। শুধুমাত্র ‘ক্লারা’ নামের একজন মেয়ে ছিলো যার মুখে সবসময় হাসি থাকত। সিজারের শত চেষ্টাতেও ক্লারা বিরক্ত হতো না। ক্লারার মুখের হাঁসি কেড়ে নিতে সিজার এবার এক ভয়াবহ পন্থা বেছে নিল! রাতে ঘুমানোর পর ক্লারার সাথে ঘটতে থাকে অদ্ভুত সব ঘটনা। কিন্তু বেচারি ক্লারা জানতেও পারে নি তার সাথে কি সব ঘটে চলছে। রাতে ক্লারার সাথে কি হত? কতটা ভয়ানক ছিল? এবং ক্লারার শেষ পরিণতি কি হয় তা জানতে চাইলে আপনাকে সিনেমাটি দেখতে হবে।
এককথায় বলতে গেলে একদম শ্বাসরুদ্ধকর সিনেমা। পুরো সিনেমাতে আপনি সিজারের অদ্ভুত এবং ভয়ানক সব কাজকর্ম দেখতে পারবেন। একজন দর্শক হিসেবে সিজারের কাজকর্মকে আপনি বিভিন্ন ভাবে বিচার করতে পারেন। তবে আখ্যরিক ভাবে সিজার একজন সাইকোপ্যাথ। কারণ মানুষকে অশান্তিতে রাখতে অসুখী রাখতে সে যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত। তার কোন আফসোস বা রিগ্রেট নেই।
অভিনয়ের কথা বললে সিজার চরিত্রে লুইস তসার অসাধারন অভিনয় করেছেন। একজন অসুখী মানুষের ঠিক যেমন হওয়ার কথা, ঠিক তেমনই ছিলো লুইস তসারের এক্সপ্রেশন। একজন ভাবলেশহীন, নির্লিপ্ত মানুষ থেকে হঠাত করেই একজন সাইকোপ্যাথ হওয়া। একদম সিনেমার শেষ পর্যন্ত প্রশংসনীয় অভিনয় করেছেন লুইস তসার। মোট কথা সিজার চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে লুইস তসার পুরোপুরি সফল হয়েছেন। ক্লারা চরিত্রে মারথা ইটোরাও যথেষ্ট ভালো অভিনয় করেছেন। এছাড়া বাকি সবাই যার যার অবস্থান থেকে ভাল অভিনয় করেছেন।
সাধারণত স্পেনিশ থ্রিলার গুলো হয় দুর্দান্ত সাসপেন্সের। সিনেমার প্রতি পরতে পরতে উত্তেজনা বিরাজ করে। কিন্তু এক্ষেত্রে Sleep Tight সিনেমাটি একটু স্লো হলেও পরিচালক জাওম বালাগুয়েরোর দারুণ স্ক্রিনপ্লের জন্যে সিনেমাটি বোরিং লাগার কোন সুযোগ নেই। সিনেমার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলো অসাধারণ স্ক্রিনপ্লে। স্টোরি টেলিং, ক্যারেক্টার বিল্ড আপ, সাসপেন্স মিউজিক সবকিছুই খুব ভালো ছিলো। এককথায় অসাধারন মেকিং।
ব্যক্তিগতভাবে Sleep Tight সিনেমাটি আমার খুবই পছন্দের একটি সাইকো–থ্রিলার সিনেমা। এরকম ক্রিপি সাইকো-থ্রিলার সিনেমা খুবই কম দেখেছি। ইনফ্যাক্ট আমার পছন্দের সেরা সাইকো-থ্রিলারের লিস্ট করলে Sleep Tight সেখানে ভাল অবস্থানেই থাকবে।
1200