আধুনিক বিশ্বে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামীদের ফাঁসি দিয়েই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। কিন্তু প্রাচীন ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, তারা আসামীকে যথাসম্ভব কষ্টদায়ক মৃত্যু দেয়ার চেষ্টা করতো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তারা আবিষ্কার করেছিলো মানুষ হত্যার ভয়ঙ্কর ও নৃশংস সব উপায়। টিম ছারপোকা আজ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবে সেরকমই কয়েকটি অমানবিক মৃত্যুদণ্ডের পদ্ধতি !
চলুন জেনে নেয়া যাক প্রাচীন যুগের ভয়ংকর কয়েকটি মৃত্যুদণ্ড পদ্ধতি !
১. ব্রাজেন বুল (Brazen Bull) – প্রাচীন গ্রীসের আবিষ্কার ছিলো এই ব্রাজেন বুল। এটি আসলে পিতলের তৈরী একটা ষাড়। যার ভেতরটা ফাঁপা এবং পিঠের কাছে একটি ঢাকনাযুক্ত। এই ঢাকনা খুলে আসামীকে ষাড়ের পেটের মধ্যে বদ্ধ করা হতো। তারপর ষাড়টির নিচে আগুণ জ্বালিয়ে দেয়া হতো। আগুণের তাপে সিদ্ধ হয়ে মারা যেতো মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামী। ব্রাজেন বুলের ভিতরের কাঠামো এমনভাবে তৈরী করা হতো, যাতে করে ভিতরে থাকা ভিক্টিমের আর্তনাদ বাইরে থেকে অনেকটা ষাড়ের ডাকের মতো শোনা যেত। প্রাচীন গ্রিসে খোলা ময়দানে ভিক্টিমকে ব্রাজেন বুলে শাস্তি দেয়া হতো। এসময় ভিক্টিমের আর্তনাদ শুনতে শুনতে রাজকীয় ভোজসভায় অংশ নিতেন গণ্যমান্য অতিথীরা।
২. ইঁদুর দিয়ে মৃত্যুদণ্ড – ষোড়শ শতকের ডাচ্ বিদ্রোহের সময় এই পদ্ধতি কার্যকরভাবে ব্যাবহার করা শুরু হয়েছিলো। এই পদ্ধতিতে আসামীকে একটা বদ্ধ কুটিরের ভেতর শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। তারপর সেই কুটিরের ভেতর ছেড়ে দেয়া হতো অসংখ্য ক্ষুধার্ত এবং রুগ্ন ইঁদুর। এক পর্যায়ে ইঁদুরগুলো আসামীর শরীরের মাংস কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে শুরু করতো। যার ফলে মাংসে পঁচন ধরে কিংবা রক্তপাতের কারনে মারা যেত আসামী। এই পদ্ধিতে আসামীর মৃত্যু হতে প্রায় ১০ থেকে ১৪ দিন সময় লাগতো।
৩. বাঁশ দিয়ে মৃত্যুদণ্ড – শুনতে আশ্চর্য লাগলেও প্রাচীন এশিয়ায় বাঁশ ঢুকিয়ে মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো। পদ্ধতিটা বেশ সরল কিন্তু ভয়ঙ্কর। বাঁশ খুব দ্রুত বর্ধনশীল গাছ। দিনে এদের প্রায় এক ফুটের মতো উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। মৃত্যুদণ্ডের নিয়ম অনুযায়ী আসামীকে একটা বর্ধনশীল বাঁশ গাছের উপর বেঁধে রাখা হতো। বাঁশ বৃদ্ধি পেতে পেতে একসময় ভিক্টিমের শরীর ভেদ করে ভিতরে ঢুকে যায়। যার ফলে অতিরিক্ত রক্তপাতের কারনেই একসময় আসামী মারা যায়।
৪. লিং চি – মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অন্যতম ভয়াবহ পদ্ধতি হলো এই লিং চি। প্রাচীন চীনে এই পদ্ধতি খুব জনপ্রিয় ছিলো। ১৯০৫ সালে এই পদ্ধতি নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। লিং চি পদ্ধতির প্রথমেই খোলা ময়দানে একটা খুটির সাথে উলঙ্গ অবস্থায় ভিক্টিমের হাত-পা বাঁধা হতো। তারপর একজন জল্লাদ ছুঁড়ি দিয়ে প্রথমে তার বাম স্তন ও পরে ডান স্তন কেটে নিতো। কিছুসময় বিরতি দিয়ে একসময় অাসামীর হাত ও পায়ের মাংসপিণ্ড কেটে ফেলা হতো। যন্ত্রনা বাড়ানোর জন্যে বিরতি দিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মাংস কেটে নেয়া হতো। যার ফলে রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যেত আসামী। মৃত্যুর পরে আসামীর লাশ জনসম্মুখে ফেলে রাখা হতো।
৫. দ্যা র্যাগ – সর্বপ্রথম প্রাচীন গ্রীসে এই পদ্ধতি চালু হয়। পরবর্তিতে দাস প্রথা প্রচলিত হওয়ার পরে দাস ও নিগ্রো হত্যার দায়ে ইওরোপেও এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতো। দ্যা র্যাগ আসলে একটি কপিকল সিস্টেম। প্রথমেই ভিক্টিমের চার হাত-পা বাঁধা হতো একটা কাঠামোর সাথে। তারপর আসামীর পেটের কাছে এমন একটা রশি দিয়ে বাঁধা হতো, যার অপর প্রান্ত সংযুক্ত থাকতো একটা কপিকলের সাথে। জল্লাদ সেই রশির অপর প্রান্ত টানতে থাকতো, দুই দিকের টানের কারনে একসময় হাত-পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়ে মৃত্যু হতো ভিক্টিমের।
৬. চিরে ফেলা – এই পদ্ধতিতে আসামীকে প্রথমে উল্টো করে ঝুলানো হতো। তারপর একটা কড়াত দিয়ে তার দুই পায়ের মাঝখান থেকে ধীরে ধীরে কেটে দুইভাগ করে ফেলা হতো। রক্তক্ষরণের ফলে আসামীর মৃত্যুর পরেও সম্পূর্ন শরীরটা দুইভাগ করার আগ পর্যন্ত থামতো না জল্লাদরা।
৭. চামড়া ছিলে মৃত্যুদণ্ড – প্রাচীন ইওরোপে ভুডো চর্চা বা কালাজাদুর অভিযোগে এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো। ভিক্টিমের পা থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে মাথা পর্যন্ত সমগ্র শরীরের চামড়া ছিলে নেয়া হতো। যন্ত্রনায় অার্তনাদ করতে করতে মৃত্যু হতো আসামীর। আর মৃত্যুর পরে আসামীর লাশ নিয়ে সারা শহরে ঘুরে ঘুরে সাধারন জনগনকে দেখানো হতো, যাতে সবাই রাজা কে ভয় পায়।
কালের পরিক্রমায় এই ধরনের অমানবিক মৃত্যুদণ্ডের পদ্ধতিগুলো আইন করে নিষিদ্ধ করা হলেও এই যুগে ধর্ষনের অভিযোগে এরকম নির্মম মৃত্যুদণ্ড পদ্ধতি ব্যাবহার করলে বোধহয় খুব একটা মন্দ হবে না।