পশ্চিমবঙ্গ থেকে সবেমাত্র ঢাকায় এসেছেন জীবন গড়ার লক্ষ্যে চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। এরমধ্যে ১৯৬৪ সালে নজরুল ইসলামের ‘কার বউ’ চলচ্চিত্রে স্বল্প চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। এক বছর বিরতি দিয়ে ১৯৬৬ সালে তেরো নং ফেস্তু ওস্তাগার লেইন, উর্দু ছবি আখেরী স্টেশন ও উজালায় পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন। একই বছর জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্র দিয়ে নায়ক রুপে প্রথম দর্শকদের সামনে আসেন। প্রথম ছবিতেই তিনি সাফল্য পান, এরপর এগিয়ে চলা। ষাটের দশক ছিল নায়ক রাজের উত্থানের বছর, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার বছর। এই সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত অন্যতম সেরা পাঁচটি চলচ্চিত্র নিয়ে আমাদের আজকের এই আয়োজন !
আমাদের নায়করাজ (১৯৬৪-১৯৬৯)
১. নীল আকাশের নীচে (১৯৬৯) : ‘নীল আকাশের নীচে আমি রাস্তায় চলেছি একা’ নায়ক রাজ অভিনীত গানের কথা মনে পড়লে প্রথমে এই গানটিই মনে পড়ে। গানটি ব্যবহৃত হয় নারায়ন ঘোষ মিতার জনপ্রিয় ছবি ‘নীল আকাশের নীচে’ তে।এই ছবিতে নায়ক রাজ রাজ্জাকের বিপরীতে ছিলেন মিষ্টি মেয়ে খ্যাত কবরী। এছাড়া আরো ছিলেন আনোয়ার হোসেন, রোজি আফসারী। সেই সময়ে উর্দু ছবির ভিড়ে এই ছবিটি বেশ ব্যবসাসফল হয়েছিল। রাজ্জাক-কবরী জুটি স্থান করে নেয় দর্শকদের হৃদয়ে। ছবিটিতে উঠে আসে তারুণ্যের প্রেম এবং তৎকালীন শ্রেনী বৈষম্য। গাজী মাজহারুল আনোয়ার, মনিরুজ্জামান মনিরের লিখায় ও সত্য সাহার সঙ্গীতে গানগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল, যা এখনো সমান দর্শকপ্রিয়তা ধরে রেখেছে।
২. ময়নামতি (১৯৬৯) : গ্রামীন প্রেক্ষাপটে দুই তরুণ-তরুণীর ব্যর্থ প্রেমের গল্প নিয়ে নির্মিত কাজী জহিরের জনপ্রিয় ছবি ‘ময়না মতি’। এই ছবিতে ব্যর্থ প্রেমিক মতির চরিত্রে অভিনয় করেন রাজ্জাক, আর ময়না চরিত্রে অভিনয় করেন কবরী। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন আনোয়ার হোসেন। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ভালোবাসার সিনেমা হিসেবে এটি বেশ সমাদৃত। বশির আহমেদের কন্ঠে ‘অনেক সাধের ময়না আমার’ গানটি ছবিটিকে আলাদা মাত্রা দিয়েছিল।
৩. মনের মত বউ (১৯৬৯) : ‘আমাকে পোড়াতে যদি এত লাগে ভালো’ এই গানটিকে বলা হয় বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম ক্লাসিক গান। খান আতাউর রহমানের কথা ও সুরে গানটি গেয়েছিলেন বশির আহমেদ। এই গানটি ব্যবহৃত হয় রহিম নেওয়াজ পরিচালিত দর্শকপ্রিয় ‘মনের মত বউ’ ছবিতে। এই ছবিতে একজন গায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন রাজ্জাক, আরো ছিলেন সুচন্দা, খান আতাউর রহমান, সুলতানা জামান সহ আরো অনেকে। দুই প্রজন্মের গল্প বলা এই ছবিতেই ব্যবহৃত হয় জনপ্রিয় গান ‘একি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে’, কোকিলকন্ঠী গায়িকা সাবিনা ইয়াসমিনের ক্যারিয়ারে অন্যতম সেরা কালজয়ী গান।
৪. বেহুলা (১৯৬৬) : বিখ্যাত পৌরানিক কাহিনী ‘মনসা মঙ্গল’ থেকে অনুপ্রানিত হয়ে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান নির্মান করেন জনপ্রিয় ছবি ‘বেহুলা’। নায়ক হিসেবে রাজ্জাকের এটিই প্রথম ছবি, লক্ষ্মীন্দরের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি, নাম ভূমিকায় ছিলেন সুচন্দা। এছাড়া অভিনয়ে আরো ছিলেন সুমিতা দেবী, ফতেহ লোহানী, আমজাদ হোসেন সহ আরো অনেকে। আলতাফ মাহমুদের সুরে গানগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল, পরবর্তীতে এটি আবার রিমেক হয়।
৫. আবির্ভাব (১৯৬৮) : বাংলা চলচ্চিত্রে অন্যতম জনপ্রিয় জুটি রাজ্জাক-কবরী।আর এই জুটি প্রথম একসঙ্গে সেলুলয়েডের পর্দায় আসেন সুভাষ দত্তের ব্যবসা সফল ছবি ‘আবির্ভাব’ দিয়ে। পারিবারিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই ছবিতে আরো অভিনয় করেছিলেন আজিম, শর্মিলী আহমেদ, নারায়ণ চক্রবর্তী, মাস্টার ছোটু। সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সত্য সাহা।
এছাড়া এই সময়ে নায়ক রাজ অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোর মধ্যে আগুন নিয়ে খেলা, দুই ভাই, কাগজের নৌকা, আনোয়ারা, সংসার, আগুন্তক অন্যতম।