তরুণ প্রজন্মের কাছে সিগারেট এখন সময়ের সবচেয়ে প্রিয় সঙ্গী। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই সিগারেট জিনিসটা এখন একরকম চকলেট চুইংগামের মত হয়ে গেছে। যতই ভয়াবহ রোগের ভয় দেখানো হোক, যতই ট্যাক্স বাড়ানো হোক, যতই ক্ষতিকর দিক জানানো হোক না কেনো, তরুণ সমাজ দেদারসে সিগারেটের প্রতি আসক্ত হয়েই চলেছে।
কেউ কেউ শখের বসে কিংবা শুধুই আগ্রহ বা কৌতুহল থেকে সিগারেট শুরু করলেও ধীরে ধীরে এমন অবস্থা হয়ে দাঁড়ায় যে দিনে ২০টা বা তার বেশী সিগারেটও দরকার হয় অনেকের। কিন্তু যদি সুস্থ সুন্দর একটা জীবন চান, আপনাকে সিগারেট ছাড়তেই হবে।
সিগারেট ছাড়ার কিছু টিপস শেয়ার করছি। যারা প্রাণঘাতী বিষাক্ত নিকোটনের আসক্তি ছাড়তে চান, আশা করি তারা উপকৃত হবেন !
সিগারেট ছাড়ার কিছু সহজ উপায়
১. সিগারেট খাওয়াটাকে একটা ফ্যাশন বা স্টাইল মনে করে এক শ্রেণীর মানুষ। টাকা খরচ করে নিজের কিডনী, ফুসফুস জ্বালিয়ে দেয়া কিরকম স্মার্টনেস? নিজেকে প্রশ্ন করুন। যারা মনে করেন সিগারেট খেলে আপনার সঙ্গী বেড়ে যাবে, টিনেজ গ্রুপের সাথে খাপ খাওয়াতে পারবেন, তাদের বলছি এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা। আপনার যদি পার্সোনালিটি থাকে তাহলে এমনিতেই আপনার ইম্পর্টেন্স থাকবে। সিগারেট না খেলেও দশজন আপনার সাথে মিশবে। সুতরাং, স্মার্টনেস বা স্টাইল শো করতে গিয়ে নিজের জীবনটা ঝুঁকিতে ফেলে দেবেন না।
২. সিগারেটখোরদের আরেকটা ভ্রান্ত ধারণা, ধূমপান না করলে কেউ নাকি বড় হয় না, শিশুই থেকে যায়। হাউ লেইম ! আপনি কি জানেন যে পৌরুষত্বের অহংকার দেখাতে আপনি সিগারেট সেবন করছেন, সিগারেটের নিকোটিন আপনার সেই পৌরষত্ব তথা প্রজনন তন্ত্রে সরাসরি ইফেক্ট সৃষ্টি করে ! গবেষণায় দেখা ছেলেদের বীর্যের ঘনত্ব ও মান কমে যায় এবং মেয়ে শিশু জন্ম দেয়ার প্রবণতা বাড়ে। সুতরাং সিগারেট আপনাকে মোটেই সিনিয়রিটি দিচ্ছে না বরং আপনাকে তিলে তিলে শেষ করে ফেলবে। তাই নিজের ভালোর কথা ভেবে সিগারেট ছাড়ুন।
৩. আপনি যদি খুব বেশি মাত্রায় সিগারেটের প্রতি আসক্ত হন, তাহলে একদিন সিদ্ধান্ত নিয়ে একেবারে সিগারেট ছাড়াটা আপনার জন্য কিছুটা টাফ। আপনারা ধাপে ধাপে ছাড়তে পারেন। যেমন ধরা যাক, আপনি সপ্তাহে ৫০টা সিগারেট খান। আপনি প্রথম ধাপে কমিয়ে সপ্তাহে ২৫টা তে নিয়ে আসেন সংখ্যাটা। দেখবেন মনে অনেক জোর পাবেন। এবার পরের ধাপে ২০, ১৫, ১০ এভাবে সপ্তাহ প্রতি সিগারেট সংখ্যা কমতে কমতে এক সময় সপ্তাহ প্রতি ১টায় এসে যখন ঠেকবে তখন একদিন মন শক্ত করে সিগারেট ছেড়ে দিন। হ্যা আপনি পারবেন। মানুষের অসাধ্য কি আছে পৃথিবীতে।
৪. আমি একজনকে চিনি, যে কিনা এমন কোনো মাদকদ্রব্য নেই যা সেবন করেনি। ছেলেটা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলো। কিন্তু সে এখন সব নেশা ছেড়ে দিয়েছে, এমনকি সিগারেটও ! সে এখন একটি প্রাইভেট ব্যাংকের ম্যানেজার। মজার ব্যাপার হচ্ছে সে কোনো রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার বা মাদক নিরাময় কোর্সের মধ্য দিয়ে যায়নি। সে যে কাজটা করত, সেটা হচ্ছে সেলফ পানিশমেন্ট। তার কাছে অনেকগুলো কাঁচামরিচ থাকত সবসময়। যখনই তার নেশা করার বা সিগারেট সেবনের ইচ্ছা হত সে কাঁচামরিচ খেত। যাতে ঝালের কারণে মনোযোগটা নেশার দিক থেকে সরে যেত। আর যখনই নেশার চাহিদা তৈরি হত মস্তিষ্কে, তখনই ঝালের কষ্টকর স্বাদ মনে পড়ত। ফলে নেশার চাহিদা আস্তে আস্তে কমতে কমতে একসময় সে নেশা ও সিগারেট থেকে সম্পূর্ণ সরে আসে। আপনিও পারবেন, শুধু ইচ্ছাশক্তি দরকার।
৫. সিগারেটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে খাবার খাওয়ার পর, দুপুরের শেষভাগে এবং মধ্যরাতে। রাত জাগার অভ্যাস পরিহার করুন। খাবার পর পান খেতে পারেন। পান শরীরের জন্য উপকারী। আর কখনোই অলস, বিষন্ন থাকবেন না। সবসময় কর্মময় এবং হাসি খুশি থাকুন।
৬. আপনার যে সঙ্গীরা ধূমপান করে তাদের সাথে থাকলে আপনার সিগারেট ছাড়া কঠিন হবে। তাই তাদের থেকে একটা ডিসটেন্স বজায় রাখতে পারেন। অন্তত: তারা ধূমপান করার সময় সেখানে থাকবেন না। আর যারা আপনাকে সিগারেটে টান দেয়ার জন্য জোর করবে, সিগারেট না সেবন করলে আপনাকে ভ্যালু দেবে না, তাদের সাথে মেশা বাদ দিন পূর্ণরূপে।
৭. ধরুন, আপনি দিনে ৫০ টাকার সিগারেট সেবন করেন। তাহলে মাসে দাঁড়াচ্ছে টোটাল পনেরশ টাকা। এই পনেরশ টাকা জমিয়ে মাস শেষে ৫ টা গরীব পথশিশুর সাথে একবেলা ভালো রেস্টুরেন্টে একটু ভালোমন্দ খেয়ে দেখুন। ট্রাস্ট মি, যে পরিমাণ মানসিক শান্তি আপনি পাবেন প্রতি মাসে সেটার পুনরাবৃত্তির জন্যে হলেও আর সিগারেট সেবন করবেন না।
৮. নিজেকে বোঝান যে সিগারেট কতটা ক্ষতি করছে আপনার। ও খায়, সে খায়, উনি খান জন্য আমিও খাব এটা হয় না। বরং সংকল্প এতবেশী দৃঢ় রাখতে হবে যে নিজের ক্ষতি ও আশপাশের নিরপরাধ মানুষ (হতে পারে আপনার বাবা মা, হতে পারে আপনার স্ত্রী, সন্তান কিংবা বন্ধু স্বজন) দের ক্ষতি চিন্তা করে যত তাড়াতাড়ি পারেন ছেড়ে দিন সিগারেট।
আপনি যদি সত্যিই সিগারেট ছাড়তে চান , তাহলে এই টিপসগুলোই আপনার জন্য যথেষ্ট। এতগুলো টিপস পড়েও আপনি সিগারেট ছাড়তে না পারলে আপনার আর ছাড়ার দরকার নেই। একদিন হয়ত হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক বা বড় কোনো অসুখে জীবনবাতি নিভে যাবে। তখন সিগারেটই আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে। এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি। চেষ্টা করুন, ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগান। সময় না কাটলে আমাদের মত একটা ম্যাগাজিন খুলে বসুন। কিচ্ছা খতম 😜