কেউই তাকে চিনেনা, কেউ কোনোদিন দেখেনি, তবুও তার নামেই কেঁপে ওঠে গোটা ঢাকা শহর ! হ্যাঁ, সেই কালা জাহাঙ্গীরের কথাই বলছি। যদি তার সম্পর্কে এখন পর্যন্ত জানা না থাকে, তাহলে আগের লেখাটি পড়ে জেনে নিতে পারেন কালা জাহাঙ্গীরের উত্থান সম্পর্কে – কালা জাহাঙ্গীর, মেধাবী ছাত্র থেকে ঢাকার শহরের আতংক !
ঘটনাটা ২০০২ বা ০৩ সালের । তৎকালীন বিডিআরকে (বর্তমান বিজিবি) অপারেশন ক্লিনহার্ট এর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত সরকার নীতি নিয়েছে সন্ত্রাসী ‘ধরো-মারো’। এখনকার মত ক্রসফায়ার বা বন্দুক যুদ্ধে নয়, মারা যেত ‘হার্ট অ্যাটাকে’।
বিডিআর অনেকগুলো দল গঠন করে সন্ত্রাসী ধরায় মাঠে নেমে পড়েছে। দিন-রাত তারা অভিযানে ব্যস্ত। লালবাগ এলাকা থেকে একজন সন্ত্রাসী ধরল বিডিআর। একেবারেই নাম-পরিচয়হীন ছোট সন্ত্রাসী। ‘ধরো-মারো’ নীতিতে নির্যাতন করে প্রায় মেরে ফেলা হলো তাকে। মুমূর্ষু অবস্থায় লালবাগ থানায় তাকে হস্তান্তর করতে গেল বিডিআর। থানা মুমূর্ষু সন্ত্রাসীকে রাখল না। বুদ্ধি দিল ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে রেখে আসেন।
সেনাবাহিনী থেকে আসা অফিসার এবং সীমান্তে দায়িত্ব পালন করা বিডিআর সদস্যরা সন্ত্রাসীকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে গেলেন। লালবাগ থানা থেকে ফোন এলো, ঢাকা মেডিকেলে যান, অপারেশন ক্লিনহার্টে একজনকে মেরে ফেলা হয়েছে। পুলিশ প্রায় মৃত সন্ত্রাসীকে রাখেনি, মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলেছে।
পুলিশ বুঝতে পেরেছে যে, সন্ত্রাসী অল্প সময়ের মধ্যেই মারা যাবে। মারা যাওয়ার আগেই গণমাধ্যমকে সংবাদটি জানিয়েও দিল। তখন নিজেদেরকে অসীম ক্ষমতাবান হিসেবে ভাবা বিডিআর সদস্যরা ঢাকা মেডিকেলের বারান্দায় মুমূর্ষু সন্ত্রাসীকে রেখে চলে এলো। সেখানে কয়েকজন পুলিশ আগে থেকেই ছিল। তারা সন্ত্রাসীর চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে, মারা না যাওয়া পর্যন্ত ‘দেখে-শুনে’ রাখল। এবং মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যমকে আরেকবার জানিয়ে দেয়া হলো, অপারেশন ক্লিনহার্টে একজন মারা গেছে।
জানানো হলো, সে বড় কোনো সন্ত্রাসী নয়। কীভাবে মারা হয়েছে, তাও বিস্তারিতভাবে জানিয়ে দিল পুলিশ। অবশ্যই প্রকাশ্যে নয। বিডিআরও ঘটনা বলল। পুলিশ আর বিডিআর’র বক্তব্য সম্পূর্ণ দুই রকম। পুলিশের সঙ্গে গণমাধ্যমের যোগাযোগ আছে, বিডিআরের সঙ্গে নেই। সত্য হলো, সন্ত্রাসী ধরে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছে। মূলত নির্যাতনেই সে মারা গেছে। প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়ে গেল বিডিআরের ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’।
‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ বিষয়ে পুলিশের মনোভাব পরিষ্কারভাবে বুঝে গেল বিডিআর। বুঝলেও মুখে আবার কিছু বলতে পারল না।
পুলিশের কৌশলের কাছে তারা নাস্তানাবুদ । বিব্রতকর অবস্থা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে, বড় সন্ত্রাসী ধরার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠল অপারেশন ক্লিনহার্ট’র নেতৃত্বে থাকা বিডিআর’র কর্তারা। অপারেশন ক্লিনহার্টের শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল, পুলিশের কাছ থেকে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে। বাস্তবে দেখা গেল কিছু নাম ছাড়া আর তেমন কোনো তথ্য পাওয়া গেল না। সেসব সন্ত্রাসীদের নাম সবাই জানে। তার মধ্যে অন্যতম কালা জাহাঙ্গীর।
সিদ্ধান্ত হলো অপারেশন ক্লিনহার্ট’র ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির জন্যে বড় সন্ত্রাসী ধরতে হবে। টার্গেট করা হলো কালা জাহাঙ্গীরকে। পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার উপর নির্ভর করে মোহম্মদপুর, আগারগাঁও, মিরপুর, ইব্রাহীমপুর প্রভৃতি এলাকায় টানা কয়েকটি অপারেশন চালানো হলো।
প্রায় প্রতিটি অপারেশন থেকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গেল যে, একটু আগে কালা জাহাঙ্গীর এখানে ছিল, অপারেশনের আলামত বুঝতে পেরে পালিয়েছে। বিডিআরের ধারণা অপারেশনের কথা আগে থেকে কালা জাহাঙ্গীরকে হয়তো পুলিশই জানিয়ে দিচ্ছে। তা না হলে, ঠিক ধরে ফেলা যেত। ঘটনা সত্য-অর্ধ সত্য বা মিথ্যা যাই হোক, পুলিশ-বিডিআর সম্পর্কটা বেশ তিক্ত হয়ে উঠল।
নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থাকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হলো। ঢাকা ও বড় শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিজস্ব সোর্স নিয়োগ দেয়া হলো। এক দিন সংবাদও এলো।
কালা জাহাঙ্গীরের সন্ধান পাওয়া গেছে, খবর জানালো সোর্স। ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’ পরিচালনায় নিয়োজিত অফিসাররা মহা উত্তেজিত। অপারেশনের পরিকল্পনা করা হলো। দু’জন লে. কর্নেল এবং একজন বা দু’জন মেজর ছাড়া কাউকে পুরো বিষয়টি বলা হলো না। অপারেশনের প্রস্তুতি নেয়া হলো।
একজন লে. কর্নেলের নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক সদস্য প্রস্তুত। জানা গেল, কালা জাহাঙ্গীর রাতে সেখানে আসে। অন্য সন্ত্রাসীদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে। তারপর রাতে ঠিক কোথায় ঘুমায়, তার সঙ্গের অন্য সন্ত্রাসীরাও জানে না। একটি এলাকায় তার কয়েকটি থাকার জায়গা আছে। রাত এগারোটা বারোটার দিকে সে ঘুমাতে যায়। তার আগে মদ পান করে। আজ সে এই আস্তানাতেই রাতে থাকবে, সোর্স তথ্য দিল।
অপারেশনের সময় ঠিক করা হলো রাত বারোটা। পিলখানা থেকে বের হয়ে যাওয়া হবে রাত এগারোটায়। অপারেশন ক্লিনহার্ট দলের সদস্যরা সন্ত্রাসীকে ধরতে যাচ্ছেন। কোথায় যাচ্ছেন, কোন সন্ত্রাসীকে ধরতে যাচ্ছেন, তা দু’তিনজন অফিসার ছাড়া কেউ জানেন না।
পুরো এলাকার ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। কোন কোন পথ দিয়ে সেখানে পৌঁছানো যায়, দু’তিন রকমের বিকল্প মাথায় রেখে অপারেশনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হলো।
ঠিক রাত এগারোটায় বাইশটি বা পঁচিশটি জিপ সারি বেঁধে বেরিয়ে গেল পিলখানা থেকে। টানটান উত্তেজনা। জিপগুলো গাবতলি-আমিন বাজার পার হয়ে এসে ঢাকা-আরিচা রোডে থামল। সে রাতটা খুব অন্ধকার ছিল না। যদিও বর্ষাকাল। আকাশে মেঘ আছে, চাঁদেরও দেখা মিলছে মাঝেমধ্যে। ঘাটে বাঁধা পাঁচ ছয়টি বেশ বড় আকারের ইঞ্জিনচালিত নৌকা।
এখানে বলে রাখা দরকার ঘটনার সময় কাল আজ থেকে প্রায় পনেরো বছর আগের। সেই সময়ের ঢাকার আশপাশটা যাদের দেখা আছে, তাদের জন্যে বুঝতে সুবিধা হবে। তখনকার ঢাকায় গাবতলি পার হওয়ার পর রাস্তার দু’পাশ বিশাল নদী বা বিলের মতো দেখাতো। নৌকা চলত। অনেক দূরে দূরে পানির মাঝখানে দু’একটি বাড়ি চোখে পড়ত। সেসব বাড়িতে নৌকা ছাড়া যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল না। অনেকটা দ্বীপের মাঝে বাড়ি। একটি দ্বীপ, একটি বা দু’টি বাড়ি। বহুদূরে আরেকটি বাড়ি। এখন সেই দৃশ্য হারিয়ে গেছে। নদী বা বিলের মতো অংশ কমে গেছে। বসতবাড়ি আর ইটের ভাটায় ভরে গেছে সেই জলাভূমি।
সোর্স নিশ্চিত করেছে, এরকম একটি জলাভূমির মাঝে টিনের দোতলা একটি বাড়ি। সেই দোতলা বাড়ির পেছনের দিকে দোতলা সংলগ্ন একটি চিলেকোঠা আছে। সেই চিলেকোঠা কালা জাহাঙ্গীরের মদ্য পানের আস্তানা। সামনে দিয়ে হেঁটে বাড়িটির ভেতরে ঢুকতে হয়। শক্ত গ্রিলের গেট আছে। একজন দারোয়ান সব সময় থাকে। কালা জাহাঙ্গীর কখনো সামনের গেট ব্যবহার করে না।
রাতের অন্ধকারে পেছন দিক দিয়ে এসে সোজা চিলেকোঠায় উঠে যায়। সঙ্গে চার-পাঁচজন বডিগার্ড থাকে। এখানে আসা-যাওয়ার জন্যে কালা জাহাঙ্গীর ছোট্ট একটি নৌকা ব্যবহার করে। যে নৌকাটি অনেকটা স্পিডবোটের মতো। ইঞ্জিনচালিত। যদিও সে ইঞ্জিন ব্যবহার করে না। বিশ্বস্ত মাঝি নৌকা চালায়। চার-পাঁচজন সঙ্গী নিয়ে চিলেকোঠায় আসে রাত আটটা-নয়টার দিকে। দু’তিন ঘণ্টা সময় কাটিয়ে চলে যায়। মদ্যপানের সঙ্গে সেখানে নারীরও উপস্থিতি থাকে বলে সোর্স নিশ্চিত করে।
তবে নারী প্রতি রাতে থাকে না। আজ রাতে সে এখান থেকে বের হবে না। ছোট্ট নৌকাটি সব সময় ঘরের সঙ্গে বাঁধা থাকে। নৌকা যেখানে রাখা হয়, সেখানে ছোট্ট ঝোপমতো আছে। বোঝা যায় না যে, এখানে নৌকা আছে। এই বাড়িতে যাওয়ার পথ, বাড়ির খুঁটিনাটি ম্যাপে এঁকে নিয়েছে অপারেশন কমান্ডাররা।
কালা জাহাঙ্গীরের এই আস্তানায় পৌঁছাতে হলে প্রথমে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিট যেতে হবে। গিয়ে নামতে হবে একটা গ্রাম মতো জায়গায়। সেখান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার হাঁটা পথ। আঁকাবাঁকা মাটির কাঁচা রাস্তা, ক্ষেতের আইল। কোথাও কোথাও ছোট খাল, কাদা-পানি। নৌকা নিয়ে সরাসরিও কালা জাহাঙ্গীরের আস্তানায় যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে অপারেশন পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যেতে পারে।
সোর্স নিশ্চিত করেছে, কালা জাহাঙ্গীরের লোকজন সব সময় খেয়াল রাখে। এতগুলো নৌকা অনেক দূর থেকে দেখা যাবে। সতর্ক হয়ে পালিয়ে যেতে পারে কালা জাহাঙ্গীর। আর তিন কিলোমিটার হেঁটে গেলে কিছু বুঝতে পারে না। ধরে ফেলা যাবে টার্গেট।
পিনপতন নিরবতা। আমিন বাজারের কাছ থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলতে শুরু করল। মিনিট দশেক চলার পর নেতৃত্বে থাকা লে. কর্নেলের মনে হলো, নৌকার ইঞ্জিন থেকে অনেক বেশি শব্দ হচ্ছে। এই শব্দ অনেক দূর থেকেও শোনা যেতে পারে। সুতরাং ইঞ্জিন বন্ধ। বৈঠা দিয়ে মাঝিরা নৌকা চালাতে শুরু করল। স্রোতহীন পানিতে বৈঠা দিয়ে নৌকা চালানো খুব কঠিন না হলেও, চল্লিশ মিনিটের নৌপথ পাড়ি দিতে প্রায় দুই ঘণ্টা লেগে গেল। রাত দেড়টা বা পৌনে দু’টার দিকে গ্রামের পাড়ে এসে নৌকাগুলো ভিড়ল।
এতক্ষণ চাঁদের দেখা কিছুটা মিললেও, এখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। আরেকবার ম্যাপ দেখে নিয়ে কাদা-পানি মাড়িয়ে নৌকা থেকে লাফিয়ে নামলেন শতাধিক বিডিআর সদস্য। হাতে অস্ত্র, মাথায় ক্যাপ, পিঠে ব্যাগ। যুদ্ধের প্রস্তুতি। চারদিকে কোনো জনমানব নেই। গ্রামের লোকজন গভীর ঘুমে। সম্ভবত গ্রামে বিদ্যুৎও নেই। হেঁটে নয়, দৌড়ে পৌঁছানো হবে কালা জাহাঙ্গীরের আস্তানায়। গেটে তালা থাকলে গুলি করে ভাঙা হবে। চিলেকোঠা পর্যন্ত পৌঁছাতে কোনো সময় নষ্ট করা যাবে না।
লে. কর্নেলের নেতৃত্বে শুরু হলো অপারেশন। সারিবদ্ধ হয়ে দৌড়াচ্ছেন শতাধিক বিডিআর সদস্য। তিন কিলোমিটার মতো পথ বিশ থেকে বাইশ মিনিটে পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হবে গন্তব্যস্থলে। যা ধারণা করা হয়েছিল, রাস্তা তার চেয়ে বেশি খারাপ। বেশ কিছু জায়গায় কাদা। দু’জায়গায় হাঁটু সমান পানির ছোট খাল। যুদ্ধের ট্রেনিংপ্রাপ্ত লে. কর্নেল ও বিডিআর সদস্য সবকিছুকে তুচ্ছ করে দৌড়াচ্ছেন। কোনো কোনো বাড়ি থেকে টুকটাক কথার আওয়াজ কানে ভেসে এলো। বুটের শব্দে হয়তো কারও ঘুম ভেঙেছে। সেদিকে খেয়াল না করে বিরতিহীনভাবে দৌড়াচ্ছেন বিডিআর সদস্যরা।
প্রায় বিশ মিনিট পরে দেখা মিলল কাঙ্ক্ষিত আস্তানার। সোর্স দৌড়ে একটু পেছনে পড়ে গিয়েছিল। চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যে এসে যোগ দিল। নিশ্চিত হওয়ার জন্যে সোর্সের অপেক্ষা করছিলেন লে. কর্নেল। নিশ্চিত করল সোর্স, এই সেই বাড়ি। সম্পূর্ণ যুদ্ধের প্রস্তুতিতে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলেন বিডিআর সদস্যরা। গেটে কোনো তালা ছিল না। ঘরের দরজা বন্ধ। লাথি দিয়ে দরজা ভেঙে ফেলা হলো। অস্ত্র তাঁক করে ছোট্ট ঘরে ছড়িয়ে পড়ল বিডিআর সদস্যরা।
৬ জনের একটা দল উঠে গেল উপরে চিলেকোঠায়। পুরো বাড়ি অন্ধকার। কোনো জনমানব নেই। বাড়ির পেছনে ঝোপ আছে, নৌকা নেই। চিলোকোঠায় কয়েকটি কাঠের চেয়ার, একটি টেবিল একটি চকি। বিছানা এলোমেলো। দু’টি অ্যাস্ট্রেতে অনেকগুলো সিগারেটের মুখ। এঁটো কয়েকটি প্লেট গ্লাস। দু’তিনটি খালি মদের বোতল। চিলেকোঠা জুড়ে মদ-সিগারেটের দুর্গন্ধ। চিলেকোঠা থেকে একটি চিকন সিঁড়ি সোজা নিচে নেমে গেছে। ঠিক সিঁড়ি নয়, মইয়ের মতো। সরিয়ে ফেলা যায়।
তন্ন তন্ন করে খুঁজে পুরো বাড়িতে আর কিছু পাওয়া গেল না। পানিতে লাইট মেরে যতদূর দেখা গেল, নৌকা-মানুষ কিছু চোখে পড়ল না। হতোদ্যম অপারেশন ক্লিনহার্ট দলের বিডিআর সদস্যরা। সবারই বক্তব্য ‘ইশ একটুর জন্যে কালা জাহাঙ্গীরকে ধরতে পারলাম না’!
অপারেশনের নেতৃত্বে থাকা লে. কর্নেল যে সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন- তারা যখন আস্তানার সামনে এসে দাঁড়ায়, তখনও কালা জাহাঙ্গীর তার দল নিয়ে চিলেকোঠায় অবস্থান করছিল। আস্তানার সামনে এসে যে চার-পাঁচ মিনিট সময় নষ্ট করেছে সোর্সের অপেক্ষায়, ভুলটা হয়েছে সেখানেই।
কালা জাহাঙ্গীর বুঝতে পেরে, ওই সময় পেছন দিক দিয়ে নৌকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। এই বাড়িতে যে কয়েকজন ছিল, তা নিশ্চিত। লে. কর্নেলের ধারণা কালা জাহাঙ্গীরই ছিল।
লে. কর্নেলের ভেতরে দুঃখ-কষ্ট-বেদনা বোধ জেগে উঠলেও, পেশাগত শিক্ষায় তা প্রকাশ করলেন না। গ্রামের ঘাটে বাঁধা নৌকাগুলোকে আসতে বলা হলো। অপারেশন ক্লিনহার্ট সদস্যরা একে একে নৌকায় উঠলেন। ইঞ্জিনচালিত নৌকা অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে যেতে থাকল আমিন বাজারের দিকে।
অপারেশন ব্যর্থ, মন খারাপ। মাথার উপরে চাঁদ আর মেঘের লুকোচুরি চলছে। ভোর রাতে তারা এসে পৌঁছালেন পিলখানায়।
(পূর্ব পরিচিত লে. কর্নেলের থেকে গল্পটি সেই সময়ই শুনেছিলাম। আমার জানা মতে, কোনো সন্ত্রাসী ধরার ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে বড় অপারেশন। নোট রাখিনি। জায়গার নাম ভুলে গেছি। ম্যাপ দেখে বোঝার চেষ্টা করলাম, মনে হলো তা করতে গিয়ে ভুল হতে পারে। ফলে জায়গার নাম উল্লেখ না করে, ঘটনাটি বলার চেষ্টা করলাম)
<span style=”color: #000000;”>গোলাম মোর্তোজা</span>
<span style=”color: #000000;”> সম্পাদক, সাপ্তাহিক</span>