শুনতে অবিশ্বাস্য শোনালেও এটাই সত্য যে, ১৯২৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিদিন টানা ২৪ ঘণ্টা করেই কোরআন তেলাওয়াত হচ্ছে টাঙ্গাইলের এক মসজিদে !
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি অধীনস্ত মোগল আমলের এই মসজিদ নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। এখানে ১৯২৯ সাল থেকে ২৪ ঘণ্টা তেলাওয়াত হচ্ছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এখনো ১ মিনিটের জন্য বন্ধ হয়নি কোরআন তেলাওয়াত। মোগল স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত মসজিদটির আকার অবয়বে বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়েছে। তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদে লাগোয়া সুদৃশ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ একটি মিনার রয়েছে। মসজিদকে কেন্দ্র করে মানত প্রথা প্রচলিত রয়েছে। মসজিদটি প্রায় ১০ কাঠা জমির ওপর অবস্থিত। আদি মসজিদটি ছিল আয়তাকার। তখন এর দৈর্ঘ্য ছিল ১৩ দশমিক ৭২ মিটার (৪৫ ফুট) এবং প্রস্থ ছিল ৪ দশমিক ৫৭ মিটার (১৫ ফুট)। কিন্তু সংস্কারের পর মসজিদটির আকার রীতিমত বদলে যায়।
প্রচলিত নিয়মে এ মসজিদের পূর্ব দিকের তিনটি প্রবেশপথ বরাবর এর অভ্যন্তরে কিবলা দেয়ালে তিনটি মেহরাব নির্মিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় মেহরাবের কুলুঙ্গিটি অষ্টভূজাকার ও বহু খাঁজবিশিষ্ট খিলান সহযোগে ফুলের নকশায় অলংকৃত। উভয় পাশের দুটিও বহু খাঁজবিশিষ্ট খিলানযোগে গঠিত, তবে অলংকারহীন। মসজিদের ভেতরে সর্বত্র চীনামাটির টুকরা দিয়ে মোজাইক নকশায় অলংকৃত। মসজিদ সংলগ্ন আধাবিঘা আয়তনের অনুচ্চ প্রাচীর বেষ্টিত একটি প্রাচীন কবরস্থান রয়েছে। কবরটি নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর মাজার। পাশে সৈয়দ নওয়াব আলীর আত্মীয়দেরও বেশ কয়েকটি কবর রয়েছে, যা মূল কম্পাউন্ডের বাইরে।
বর্তমানে এটি একটি বর্গাকৃতির মসজিদ এবং সাধারণ তিনগম্বুজ বিশিষ্ট আয়তাকৃতির মোগল মসজিদের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। সংস্কারের পর বর্তমানে এর অনেক বৈশিষ্ট্যই ভিন্ন আঙ্গিক গ্রহণ করেছে এবং সেই সাথে এর প্রাচীনত্ব অনেকটাই হারিয়ে গেছে। সুন্দর কারুকার্যময় এ মসজিদের পূর্বদিকে বহু খাঁজবিশিষ্ট খিলানযুক্ত তিনটি প্রবেশপথ, এছাড়া উত্তর ও দক্ষিণে আরো একটি করে সর্বমোট পাঁচটি প্রবেশপথ রয়েছে। মসজিদটি বর্ধিতকরণ ও সংস্কার সাধনের পরেও এর উপরস্থ তিনটি গম্বুজ ও পাঁচটি প্রবেশপথে প্রাচীনত্বের ছাপ লক্ষ করা যায়।
বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, ১৯২৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা করেই একটানা কোরআন তেলাওয়াত হচ্ছে এই মসজিদে। শুনতে হয়ত অবিশ্বাস্য শোনাবে, কিন্তু এটাই বাস্তব ! এখনো পর্যন্ত একটা মিনিটের জন্যও বন্ধ হয়নি এই মসজিদের কোরআন তেলাওয়াত। বর্তমানে এখানে সাতজন ক্বারী নিযুক্ত রয়েছেন। ২ ঘণ্টা পর পর একেকজন কোরআন তেলাওয়াত করে থাকেন। ৮৬ বছর ধরে অবিরত এটা চলছে। যা কিনা বিশ্বের বুকে এক বিরল ঘটনা। এ মসজিদটিতে একসঙ্গে মাত্র ২০০ জন মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন।