বিগত ৫টা সিজন একরকম দুঃস্বপ্নের মত কেটেছে ইতালিয়ান জায়ান্ট এসি মিলান এর। দলে এতটাই নিম্নমানের খেলোয়াড় ছিল এবং দুর্বলতা ছিল যে ইউরোপিয়ান ইভেন্ট তো দূরে থাক, সিরি আর শীর্ষ ১০ এ টিকে থাকা মুশকিল হয়ে যাচ্ছিলো। সমর্থকদের জন্য একেকটা সিজন বিভীষিকার মত যাচ্ছিলো। শেষমেশ হতাশার দায় নিয়ে সরে দাঁড়ান ক্লাবের মালিক সিল্ভিও বারলুস্কোনি। ৩১ বছর পর হয় মালিকানায় দলবদল। চীনা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রসোনেরি স্পোর্ট ইনভেস্টমেন্ট লাক্স ৭৪ কোটি ইউরোতে মিলানের নতুন মালিকানা পান। মূলত সেখান থেকেই উত্থানের শুরু…
আগের ৮ টি ট্রান্সফার উইন্ডোতে যেখানে তাদের সর্বোসাকুল্যে খরচ ছিল ৬ মিলিয়ন, সেখানে এই উইন্ডোতেই তারা খরচ করে ফেলেছে প্রায় ২১৭ মিলিয়ন। এত খরচ করা স্বত্তেও কাউকে খুব বেশি দাম দিয়ে কিনেনি তারা। ১১ জন প্লেয়ারের পেছনে গড়ে মাত্র ১৯.৭৩ মিলিয়ন খরচ করেছে। আর মাত্র ৪০ মিলিয়নে সবচেয়ে সেরা ট্রান্সফার লিওনার্দো বোনুচ্চিকে দলে ভিড়িয়ে ইউরোপিয়ান দলগুলোকে প্রায় চমকে দিয়েছে। আসুন একনজরে ২০১৭-১৮ সামার ট্রান্সফার উইন্ডোতে এসি মিলানের সাইনিংগুলো দেখে নিই –
নতুন যারা এসেছেন :
- মাতেও মুসাচ্চিও (আর্জেন্টিনা, ভিয়ারিয়াল)
- রিকার্ডো রড্রিগেজ (সুইজারল্যান্ড, ওল্ফসবার্গ)
- আন্দ্রে সিলভা (পর্তুগাল, এফসি পোর্তো)
- হাকান চালহানোলু (তুর্কি, লেভারকুসেন)
- বারগিয়েল (পোলান্ড)
- আন্দ্রেয়া কন্তি (ইতালি, আটালান্টা)
- এন্তোনিও দোনারুমা (ইতালি,ত্রিপোলি)
- লিওনার্দো বোনুচ্চি (ইতালি,জুভেন্টাস)
- লুকাস বিগলিয়া (আর্জেন্টিনা, ল্যাজিও)
- ফ্রাংক কেসি (আইভরি কোস্ট, আটালান্টা)
- ফাবিও বোরিনি (ইতালি,সান্ডারল্যান্ড)
যারা চলে গেছেন :
ডিয়েগো লোপেজ (এস্পানিওল), রাউল জুচিয়েত্তি (ভিলেন্তেল), কেইসুকে হোন্ডা (পাছুকো), আন্দ্রেয়া পোলি (বোলোনিয়া), ক্রিসচিয়ান হাডজিওসমানোভিচ (সাম্পাদোরিয়া), লুকা ভিডো (আটালান্টা), মার্কো কুর্তো, আন্দ্রেয়া বিয়ানচিমানো (রেগিন), মাতেও পেসিনা (আটালান্টা), ফেডেরেসিও (পেসারো), জুরাজ কুচকা (ত্রাবজনস্পর), ডি সিলিও (জুভেন্টাস), লিওনেল ভানজিওনি (মন্তে), জিয়াকোমো বেরেটা, লরেঞ্জো, আমান্থ লো, ওদুয়ামাদি,হাকিম মাস্তুর।
মিলান এর সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত ছিলো পুরনো কোচ ভিন্সেনজো মন্তেয়ার উপর এই সিজনেও ভরসা রাখা। রিবিল্ডিং প্রসেসে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছে তারা ডিফেন্সে। কথায় আছে “ফরোয়ার্ডরা ম্যাচ জেতায়, কিন্তু ডিফেন্ডাররা ট্রফি জেতায়। আগে থেকেই ছিলো রোমানিওলি, গুস্তাভো গোমেজ। তাদের সাথে নতুন যোগ দিয়েছে ভিয়ারিয়ালের আর্জেন্টাইন সেন্টারব্যাক মুসাচ্চিও এবং ইতালিয়ান সুপারস্টার বোনুচ্চি। দুই ফুলব্যাক পজিশনে এসেছে গত সিজনের ডিফেন্ডারদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোল ও এসিস্টদাতা কন্তি এবং উলফসবার্গের রড্রিগেজ। অতএব দুর্বলতা কাটিয়ে কাগজে কলমে মিলানের ডিফেন্স লাইন যে এখন ইতালির অন্যতম সেরা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মিডফিল্ডেও এসেছে স্বস্তি। ডিফেন্সিভ মিডে এসেছেন ল্যাজিও দলপতি লুকাস বিগলিয়া। আর এটাকিং মিডে এসেছেন তুর্কির তুরুপের তাস হাকান চালহানৌলু। লং রেঞ্জ শুটিং এবং সেট পিসে তিনি বিশ্বসেরা। প্রায় বিগত ৩ সিজন ধরে মেসি রোনালদোদের ফ্রিকিক থেকে করা গোলের সংখ্যায় পেছনে ফেলছেন তিনি। তাছাড়া তাদের চোখ রয়েছে বায়ার্নের পর্তুগিজ মিডফিল্ডার রেনাটো সানচেজ এর উপর। সেখানে সে পরিপূর্ন প্লেইং টাইম পাচ্ছে না। এই উইন্ডোতে সেও মিলানে যোগ দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। অতএব মন্তেয়ার মিডফিল্ড দুশ্চিন্তার অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
ফরোয়ার্ড পজিশনে যোগ দিয়েছেন পোর্তোর হয়ে গোলের পর গোল উপহার দেওয়া স্ট্রাইকার আন্দ্রে সিলভা। পর্তুগিজ এই তারকা গত চ্যাম্পিয়নস লীগের অন্যতম বেস্ট পারফর্মার ছিলেন। ডেলাফিউ চলে গেলেও থেকে গেছেন গত সিজনের সেরা পারফর্মার সুসো। এদিকে সান্ডারল্যান্ড এর ব্যর্থ পারফর্মার বোরিনিকে দলে ভিড়িয়েছে মিলান। যদিও কম মূল্যে তবুও সিদ্ধান্তটা কতটা সঠিক তা সময়ই বলে দিবে। তবে আন্দ্রে সিলভার সাথে ভাল জুটি গড়ানোর জন্য এখনো বড় বড় স্ট্রাইকারের পেছনে ছুটছে ম্যানেজমেন্ট। রিবিল্ডিং প্রসেসে বর্ত্তমান স্ট্রাইক ফোর্স নিয়ে ১০০% সন্তুষ্ট নয় তারা। ডর্টমুন্ডের অবামেয়ং, চেলসির কস্তা, তুরিনের বেলোত্তিকে সান সিরোতে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
সবকিছু পেছনে ফেলে এবার নতুন করে শুরু করার পালা। নতুন সিজনে মন্তেয়ার পছন্দের ৪-৩-৩ ফরমেশনের পাশাপাশি ৩-৫-২, ৪-১-২-১-২ বা ৩-৫-২ ফরমেশনে দেখা যেতে পারে মিলানকে। নতুন কোনো তারকা ফরোয়ার্ড না আসলে আন্দ্রে সিলভার সাথে প্রতিটি ফরমেশনে জুটি বাঁধতে পারেন প্রি সিজনে ভাল পারফর্ম করা কুত্রোন।
বর্তমানে দলটি এতটাই ব্যালেন্সড যে ইতোমধ্যেই রোজোনেরি সমর্থকরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। নিখুঁত সমন্বয়, পারফেক্ট কম্বিনেশন এবং একতাবদ্ধ পারফরমেন্স এর মাধ্যমে ৭ বারের ইউরোপসেরা এসি মিলান এর রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় ফুটবল ভক্তরা !
[ প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিশাত রায়হান । ছারপোকা ম্যাগাজিনে এই লেখকের এটাই প্রথম প্রতিবেদন ]