২০৩০ সালের মধ্যে মানুষ স্বপ্ন দেখছে ভিনগ্রহ মঙ্গলে পাড়ি দেওয়ার, সেখানে বসতি গড়ার। আর এ নিয়ে তোড়জোড়, প্রস্তুতি ও গবেষণার অন্ত নেই বিজ্ঞানীদের। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফলাফল ‘লাল গ্রহে’ যাওয়ার বিষয়ে একটু হতাশই করবে সবাইকে। স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের স্কুল অব ফিজিক্স ও এস্ট্রোনমির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মঙ্গল আমাদের ধারণার চাইতেও বাস-অযোগ্য।
মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব আছে, বিশেষ করে ভূ-ভাগে ! বিজ্ঞানীদের এমন ধারণা নিয়ে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, লাল গ্রহের লবণাক্ত খনিজের উপস্থিতি ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ‘পার্কলোরেটস’ নামের একটি উপাদান ‘বেসিলাস সাবটিলিস’ নামক ব্যাকিটেরিয়া ধ্বংস করে দেয়। আর এ ব্যাকটেরিয়া জীবন গঠনের অন্যতম মূল জীবনীশক্তি। ‘পার্কলোরেটস’ কক্ষ তাপমাত্রায় স্থির অবস্থায় থাকে, কিন্তু উচ্চ তাপমাত্রায় এটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। মঙ্গল গ্রহ আসলে শীতল।
এছাড়াও নতুন আরেকটি গবেষণায় জেনিফার ওয়াডসোর্থ ও চার্লস ককেল দেখিয়েছেন, মঙ্গলের এ উপাদানটি অতিবেগুনি রশ্মিতে বা তাপমাত্রা ছাড়াও সচল হতে পারে। আর এটি মঙ্গলের ভূপৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্যের বিপরীতেই ঘটছে। গবেষক দলটি বলছে, উপাদানটি নিমেষেই ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দিতে পারে। আর এ অবস্থা আগের ‘বাসযোগ্য মঙ্গল’ ধারণাকেই পাল্টে দিয়েছে।
ওয়াডসোর্থ বার্তাসংস্থার এব্যাপারে মতামত, “যদি আমরা মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব বের করতে চাই তাহলে এর ভূ-গর্ভের সন্ধানে নামার বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে, যা উপরভাগের পরিবেশের সঙ্গে মিলবে না। ‘পার্কলোরেটস’ প্রাকৃতিক ও মানুষ সৃষ্ট দু অবস্থাতেই পৃথিবীতে পাওয়া যায়। কিন্তু মঙ্গলে এটির উপস্থিতি খুব বেশি। ২০০৮ সালে নাসার পোনিক্স ল্যান্ডারের মাধ্যমে প্রথমে এদের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। অতিবেগুনি রশ্মির কারণে ‘পার্কলোরেটস’ ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করলেও এটা দ্বারা প্রমাণ হয় না যে অন্য প্রাণের অস্তিত্বও একই কারণে নাই হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার প্রয়োজন”।
২০১৫ সালে মঙ্গলের তরল পানিতে ‘পার্কলোরেটস’ এর উপস্থিতির প্রমাণ পান বিজ্ঞানীরা। এছাড়াও নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, মঙ্গলের পানিতে খনিজের উপস্থিতি সচরাচর হলেও, যদি ‘পাকলোরেটস’ কোষে বিরাজ করে তবে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে।
শুধু হতাশা নয়, মঙ্গল গ্রহ নিয়ে নতুন এ গবেষণায় উঠে এসেছে কিছু ভালো তথ্যও। মঙ্গলে রোবটিক এক্সপ্লোরেশনের মাধ্যমে যে জৈব উপাদান ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে ‘বেসিলাস সাবটিলিস’ ব্যাকিটেরিয়াও বিদ্যমান !