জাপানে একটি পুরানো কথা প্রচলিত আছে, “ফর্সা সুন্দর ত্বক ঢেকে রাখে সাতটা বয়সের ছাপ” ! অতি প্রাচীনকাল থেকেই সুন্দর ফর্সা ত্বক থাকাটা জাপানিজ মেয়েদের জন্য একটি গর্বের বিষয়। সৌন্দর্য রক্ষার্থে জাপানে এই প্রচলিত ধারাগুলো বহু আগে থেকেই চলে আসছে। বিভিন্ন যুগে জাপানিজ মেয়েদের মেকআপে এই ধারার বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। তা নিয়েই ছারপোকার আজকের এই পোস্ট !
জাপানের মেকআপ ইতিহাস
৮ম শতাব্দীর “নারা” (৭১০-৯৪) যুগে জাপানিজ মেয়েরা তাদের মুখে ‘অসিরি‘ নামক সাদা পাউডার মাখত এবং জাপানের ইতিহাসের ধ্রুপদী পর্যায়ের শেষ যুগ ‘হেইয়ান’ (৭৯৪-১১৮৫) পর্যন্ত মুখ সাদা দেখানোটা তাদের সৌন্দর্য্য চর্চার মুল বিষয় ছিলো। ‘ইডু’ (১৬০৩-১৮৬৮) যুগ চলাকালীন সময়ে ফর্সা সুন্দর ত্বকের জন্য ‘উকিরি‘ নামের একটা ময়েশ্চার ক্রিমের ব্যবহার প্রচলিত হয়। সুন্দর ত্বকের জন্য সেসময় ফেসিয়াল ক্লিঞ্জিং, ফেসিয়াল প্যাক এসব প্রসাধনী প্রাকৃতিক ও খনিজ পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হত।
কথিত আছে জাপানিজ মেয়েরা খুব ভোরে উঠেই তাদের মুখের মেকআপ করে ফেলত এবং ঘুমানোর আগ পর্যন্ত সারাদিন এইরকম মেকআপ নিয়েই থাকত। এমনকি তারা গোসলের সময়েও মুখ বাদে শরীরের অন্যান্য অংশে গোসলের জন্য পানি ব্যবহার করত। মূলত তারা একে অন্যের সামনে মেকআপ ছাড়া আসত না। এবং বাইরের কারো সামনে মেকআপ নষ্ট হয়ে গেলে তা ঠিক করাকে অত্যন্ত লজ্জাজনক বিষয় বলে মনে করত। ভালোভাবে মেকআপ করাকে তারা আভিজ্যতের অংশ বলে মনে করত। তারা মেকআপ ব্যবহারের পূর্বে এক টুকরো রুমাল আর পানি দিয়ে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে নিত। মেয়েরা বিয়ের আগে চুলে কালো রঙ করে নিত এবং দাঁতে কালো রঙ ব্যবহার করত। বাচ্চা হবার পরে তারা আইব্রো প্লাক করে একটু উঁচু আকৃতি দিত।
১৮৭০ সালে দাঁতে কালো রঙ ব্যবহার করা আইন করে নিষেধ করা হয়। পরবর্তীতে মেকআপ এর প্রবর্তনের সাথে আরো কিছু পরিবর্তন আসে। মেয়েরা ফুলেল জামা পরার সাথে সাথে খুব গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করে এবং চোখের কোণেও টেনে লাল রঙ ব্যবহার শুরু করে। তাদের কাছে লাল, সাদা, ও কালো এই তিন রঙ ছিলো শুধুমাত্র মেকআপ ব্যাবহারের জন্য।
‘মেইজি‘ (১৮৬৮-১৯১২) যুগ চলাকালীন সময়ে জাপানিজ কালচারের উপরে পশ্চিমার প্রভাব পরা শুরু করে এবং মহিলারা সেই সুত্র ধরে আরো অন্যান্য রঙ ব্যবহার করা শুরু করেন।
জাপানিজ মেয়েদের মেকআপ এর প্রচলিত ধারায় পরিবর্তন
একসময় জাপানিজ নারীরা আবিষ্কার করেন তারা এই কৃত্রিম রঙের কারণে তাদের নিজেদের সৌন্দর্য্য হারাচ্ছেন। তখন তারা ‘ওশিরি’ তে আরো প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে তাঁদের ত্বকের রঙ এর কাছাকাছি রঙ দেবার চেষ্টা করেন। এবং ‘মেইজি‘ আমলে এইটার ব্যবহার অনেকাংশেই বেড়ে যায়।
২য় মহা বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানে পশ্চিমাদের মেকআপ উপকরণ (যেমন- অয়েল বেইসড ফাউন্ডেশন, আই শ্যাডো, ফলস আইল্যাশ, মাসকারা) এরকম বিভিন্ন প্রোডাক্ট জাপানের মার্কেটে বিক্রি হওয়া শুরু হয়। এই সময় মুখের মেকআপে গোলাপি আভা ফুটিয়ে তোলার একটা প্রবণতা দেখা যায়।
১৯৮০ সালে জাপানের মেকআপের মধ্যে সব থেকে পপুলার থাকে জেট-ব্ল্যাক স্ট্রেইট চুল আর সাথে আমন্ড বাদামের আকৃতির চোখ। ১৯৮০ সালেই জাপানের মেয়েদের মানসিকতার একটি বিরাট পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তারা তাদের ত্বকের ক্ষতি করতে পারে, এমন সকল উপকরণ মেকআপ উপাদান থেকে ফেলে দিয়ে খুব ভালোভাবে নিজেকে প্রকাশ করা যায় এমন প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার শুরু করে। এবং মেকআপ আর্টের ক্ষেত্রেও তারা ন্যাচারাল লুককেই প্রাধান্য দেয়।
সেসময় বিশেষজ্ঞ টমিওয়াজাও তার গবেষণা থেকে জাপানের মেকআপ ইতিহাস সম্পর্কে বলেন, “মেয়েরা এখন কৃত্রিম এবং ক্ষতিকারক দ্রব্য ব্যবহারে সাবধান হয়েছে। কিন্তু এখনো তারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মুখে মেকআপ ব্যবহার করেন এবং অন্যের সামনে মেকআপ করাকে লজ্জাজনক মনে করেন”।
(তথ্যসুত্রঃ Pola Research Institute of Beauty & Culture)