‘মরার আগে শ্যাষ খাওন খাইতাছস নাকি’ ! বন্ধুবান্ধবদের কাউকে খুব বেশি খেতে দেখলে আমরা প্রায়ই এই কথাটা বলে থাকি। এর কারণ হচ্ছে, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামীদের শেষ ইচ্ছা হিসেবে সে কি খেতে চায় তা জানতে চাওয়া হয়।
প্রচলিত যেকোনো খাবারের ইচ্ছা প্রকাশ করলে তা রক্ষা করা হয়। তবে তার শেষ খাবারের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থও ধার্য করে দেয়া হয়। যার পরিমাণ সচরাচর সবখানেই বাংলাদেশি টাকায় ৭০০ থেকে ১৪০০’র সমপরিমাণ হয়। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে আসামীর এই শেষ ইচ্ছা পূরণের প্রচলনটা এসেছিলো একটা কুসংস্কারের মাধ্যমে। মৃত্যুর পর আসামীর অতৃপ্ত আত্মা যেনো মৃত্যুদণ্ডের সাথে জড়িত ব্যাক্তিদের কোনো ক্ষতি না করে, সেজন্য আসামীর শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করা হত। কালের বিবর্তনে কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলে এই রীতিটা এখন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। অনেক দেশেই আইন করে এই প্রথা যুক্ত করা হয়েছে।
বহুবছর ধরে চলমান এই রীতির মধ্যে এমন অনেক আসামীই আছে যারা মৃত্যুর আগে উদ্ভট কিছু খাবারের আবেদন করে। জীবনে শেষবারের মত বেছে নেয়া খাবারে কেউ আবদার করেছে খুবই সামান্য কিছু, কেউবা মানেননি কোনো বাঁধা। তাদের মধ্যে কয়েকজনের গল্প নিয়েই আজকের এই পোস্ট !
Victor Harry Feguer : ১৯৬৩ সালের ১৫ মার্চ আমেরিকার ওয়াশিংটনে ভিক্টোর সাহেবকে সরকারি আদেশে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর পূর্বে তার শেষ খাবারের ইচ্ছার কথা জানতে চাওয়া হলে সে শুধুমাত্র বীজসহ একটা জলপাই খেতে চায়। একদিন তার মৃতদেহের জলপাই’র বীজ থেকে বড়গাছ হবে আর সেটা হবে শান্তির প্রতিক, এমনটা ভেবেই এই উদ্ভট খাদ্যের আর্জি করেছিলো সে।
Ricky Ray Rector : দুইজন লোককে খুন করেছিলো রিকি মহাশয়, তাদের মধ্যে একজন আবার পুলিশ অফিসার। ১৯৯২ সালে ৪২ বছর বয়সে বিষাক্ত ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে হত্যা করে শাস্তি দেয়া হয় তাকে। মৃত্যুর আগে সে খেতে চায় স্টেক, ফ্রায়েড চিকেন, Cherry Cool-aid নামক পানীয় আর Pecan Pie নামে অামেরিকার ঐতিহ্যবাহী এক মিষ্টান্ন। মজার বিষয় হচ্ছে সেই Pecan pie কিন্তু সে খায়নি, কারারক্ষীদের একজনকে না’কি সে বলেছিলো ওটা সে পরে খাবে!
Jones Owen : ধর্ষণ ও খুনসহ মোট ৩৩ টি মামলার আসামী জোন্স-কে ১৯৯৪ সালে বিষাক্ত ইঞ্জেকশন পুস করে হত্যা করা হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিলো ৫২ বছর। কর্মজীবনে KFC আউটলেটের ম্যানেজার এই ব্যাক্তি শেষ খাবারে চেয়েছিলো KFC এর ফ্রায়েড চিকেন বাকেট, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ১২ টি ভাজা চিংড়ি এবং ১ পাউন্ড স্ট্রবেরী।
Timothy Magpie : ওয়াকুলহামা সিটিতে বোমা-হামলা’র অপরাধে ২০০১ সালে এই লোককে বিষাক্ত ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। ১৬৮ টি খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত তিমোথি সাহেব যখন মারা যান, তখন তার বয়স ৩৩ বছর। মৃত্যুর আগে সে ২ পাউন্ড মিন্ট চকোলেট ফ্লেভারের আইসক্রীম খেয়েছিলো।
Ted Bundy : নৃশংস এই আমেরিকান সিরিয়াল কিলার ধর্ষণ, মৃতদেহের সাথে সঙ্গম, জেল থেকে পালানো ও ৩৫ টিরও বেশি খুনের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পায়। ১৯৮৯ সালের ২৪ জানুয়ারি ফ্লোরিডায় বৈদ্যুতিক চেয়ারের বসিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। ৪২ বছর বয়সের বান্ডি মৃত্যুর পূর্বে স্টেক, ডিম, মাখন ও জেলিসহ ব্রাউন টোস্ট, জুস এবং দুধ খেতে চেয়েছিলো। অথচ তার ইচ্ছানুসারে খাবার পরিবেশন করার পর সে কিছুই খাবেনা বলে জানিয়ে দেয় !
James Edward Smith : এই মহাশয় তো সবাইকে অবাক করে মৃত্যুর আগে এক দলা ময়লা খাবার আকুতি প্রকাশ করেছিলো। তবে ধারণা করা হয়, সে পিশাচতত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলো এবং এ জাতীয় কোনো গোপন চর্চার জন্যই ময়লা খেতে চেয়েছিলো, শখ মেটাতে নয়। প্রসঙ্গত, মৃত্যুর আগে তার শেষ এই আবদার পূরণ করা হয়নি।
এই মূহুর্তে যদি আপনার শেষ ইচ্ছার কথা জানতে চাওয়া হয়, তাহলে কি খেতে চাইবেন?