পেন্ডিং কফি (Pending Coffee) বা সাসপেন্ডেড কফি হচ্ছে বিশ্বের বহুল প্রচলিত একটি দাতব্য খাদ্য প্রদান রীতি। ফুডকোর্টে নিজের খাবারের বিলের সাথে একজন দরিদ্র ব্যক্তির জন্য সাধ্যমত কোনো একটি খাবারের বিল অগ্রিম দিয়ে আসার একটা ধারা বা রীতি প্রচলিত রয়েছে। সাসপেন্ডেড কফি শব্দটির মাধ্যমে এই ধারাটিকেই বুঝানো হয়।
আগেই বলে রাখছি, সাসপেন্ডেড কফি নাম শুনেই এমনটা ভাববেন না যে, অনুদান হিসেবে শুধু কফি খেতে দেয়া হয় ! এখানে আপনি ইচ্ছা করলে এক কাপ কফি, একটি স্যান্ডউইচ বা পুরো এক প্যাকেজ খাবার অর্ডার করে দিতে পারেন একজন দরিদ্র মানুষের জন্য। আপনি এখানে নিজের খাবারের বিলের সাথে অতিরিক্ত যে খাবারের মূল্য পরিশোধ করবেন, তা চলে যাবে একজন দুস্থ মানুষের কাছে।
উন্নত বিশ্বের কফিশপ গুলোতে মানুষের মধ্যে উদারতা এবং সহানুভূতি স্থাপনের জন্য সুন্দর এই নিয়মটি প্রচলন করা হচ্ছে।
সাসপেন্ডেড কফি আবির্ভাবের ইতিহাস
সাসপেন্ডেড কফি (Suspended coffee) শব্দটি ইটালিতে ‘Caffe Sospeso’ নামে পরিচিত। আবার অনেক জায়গায় পেন্ডিং কফি (Pending Coffe) নামেও পরিচিত। এর প্রচলন শুরু হয় নেপাল থেকে। ২০১০ সালে একটি জরিপে নেপালীরা দাবী করে, এটা তাদের ১০০ বছরের পুরানো ঐতিহ্য !
মূলত এটি হচ্ছে একটি নগদ অনুদান। সমাজের বিত্তবান, সৌভাগ্যবান সহ যাদের সামর্থ্য রয়েছে, তারা নিজেদের খাবার ছাড়াও অতিরিক্ত আরেকটি খাবারের মূল্য পরিশোধ করে থাকেন। এই খাবারটি সংরক্ষণ করা হয় ভিক্ষুক বা শ্রমিক শ্রেণীর লোকেদের জন্য, যাদের পক্ষে এই খাবারটি একবারেই কিনে খাওয়া সম্ভব নয় ! তারা পরবর্তীতে খাবারের দোকানে এসে এই খাবারটি খেয়ে যেতে পারে। এরজন্য আর তাকে আলাদাভাবে বিল পে করতে হয়না।
পরবর্তীতে এ প্রচলন একসময় ইতালিতেও শুরু করা হয় । ইতালিতে অর্থনৈতিক অবস্থান খারাপের দিকে গেলে তুলনামূলক ধনী শ্রেণীর লোকেরা সেখানে এই প্রথাটি চালু করেন। পেন্ডিং কফি নিয়ে ইতালিতে প্রচলিত একটি গল্প আছে –
“একজন ইংরেজ একটি কফিশপে তার বন্ধুকে নিয়ে আসলেন। তিনি তাদের খাবার অর্ডার করে অপেক্ষা করতে থাকলেন। এমন সময় কফিশপে একজন মধ্যবয়স্ক লোক আসলেন। তিনি একটি কফি এবং একটি Caffe Sospeso বা Suspended Coffee অর্ডার করলেন। এরপর শুধু নিজের কফিটা খেয়ে চলে গেলেন। পরবর্তীতে ২ জন তরুণী আসলেন, তারা ২টি কফি এবং ২টি Caffe Sospeso অর্ডার করলেন। ইংরেজ লোকটি অবাক হয়ে তার বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলো, এই Caffe Saspeso টা কি? এরইমধ্যে আরো ৫ জন উকিল আসলেন। তারা ৫টি কফি এবং ৩টি Caffe Saspeso অর্ডার করলেন। তারা চলে যাবার পর এক ভিক্ষুক এসে কফি বারের কাউন্টারে গিয়ে জানতে চাইলো, কোনো Caffe Saspeso আছে কিনা? ভিক্ষুক যখন নরমাল কফি অর্ডার না করে শুধু Caffee Saspeso এর কথা জিজ্ঞেস করলো, ওই ভদ্রলোক তখনই মুল ব্যাপারটি বুঝতে পারেন।”
এটা আসলে গল্প নয়। সত্যিকারেরই একটা ঘটনা। ব্যাপারটা এত প্রসারিত হবার কারণ হচ্ছে, ইংল্যান্ড সহ আরো কয়েকটি দেশের লোকেরা অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ ও আকর্ষণীয়ভাবে এই প্রথাটি পালন করে। এখন বিশ্বজুড়ে এই ‘অজ্ঞাত থেকে’ দাতব্যভাবে খাবার দান করাটা বলতে গেলে একটা ট্রেন্ড হয়ে গেছে।”
অনুদানের প্রতীক পেন্ডিং কফি
পেন্ডিং কফি বা সাসপেন্ডেড কফি বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ও সবচেয়ে বেশি প্রচলিত একটি অনুদান। নিজে ‘অজ্ঞাতনামা’ থেকে একজন মানুষকে সাহায্য করা এবং খাবারের বিনিময়ে একটি প্রাণ রক্ষা করাকে সবচেয়ে উত্তম সেবা হিসাবে গণ্য করা হয়। শুধুমাত্র দরিদ্র বা শ্রমিক শ্রেণী নয়, ছাত্র থেকে শুরু করে সুস্থ অসুস্থ সকল মানুষ, যাদের পক্ষে এই খাবার মূল্য দেয়া সম্ভব নয়, সকলেই এই খাবার গ্রহণ করতে পারে। শুধু মাত্র এক কাপ কফি নয়, ইচ্ছা হলে পুরো এক প্যাকেজ খাবার অনুদান হিসাবে দেয়া যেতে পারে। এই দাতব্য সেবাটি উদারতা এবং বৈষম্যহীন সেবা বলে উল্লেখিত।
শেষ কথায় আসি,
বলুন তো এবার, আমাদের দেশে এরকম একটা প্রথা শুরু হলে কেমন হয়? আপনি কি আপনার সিগারেটের টাকা বাঁচিয়ে একজন ভিক্ষুক বা একটি পথশিশুকে একবেলা নাস্তা করাবেন? নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারবেন? আমরা শুনতে চাই…