ঈশ্বর অাছে কি নেই, এই একটা প্রশ্ন শুনতে শুনতে বিরক্তি এসে গেছে। একবার ভেবে দেখুন, একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে এসে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে –
– হ্যালো ভাই, ঈশ্বর আছে?
– জ্বি আছে।
– কেমনে বুঝলেন আছে?
– বুঝি নাই আন্দাজ করছি
এখন বুঝেন অবস্থা ! আমরা কিভাবে সিদ্ধান্তে যাবো সৃষ্টিকর্তা আছেন কি নেই? আমরা বড়জোর ভাবতে পারি। বিভিন্ন যুক্তি দাঁড় করাতে পারি। এর বাইরে আর একটা কাজই করার আছে। সেটা হচ্ছে, বিশ্বাস ! যেহেতু কিছু একটা করতেই হবে, সেহেতু করার মত কিছু না থাকলে বিশ্বাস করুন। বিশ্বাস করতে ক্ষতি নেই। পৃথিবীর সব ধর্মের পেছনেই রয়েছে বিশ্বাস। ঠিক যেমন সব ধর্মগ্রন্থেই তুলে দেয়া হয়েছে ভালোবাসা ও শান্তির বাণী ! কোনো ধর্মেই হানাহানি সংঘাতের পক্ষে বলা হয়নি। সব ধর্মই বলেছে মানবতার পক্ষে…
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মহামানব মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) একজন রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। চাইলেই তিনি কাফের বা ইসলামের শত্রুপক্ষকে শেষ করে দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি !
ডেল কার্নেগী নাস্তিকতা আর আস্তিকতার টানাটানিতে শেষ পর্যন্ত আস্তিকতা মেনে নিয়ে বলেন, “আমাদের জীবনটা আমাদের উৎস বা উৎপত্তি কোথায়, তা নিয়ে চিন্তা করে মাথা নষ্ট করার জন্য নয়। শুধুমাত্র তা উপভোগের জন্য।”
স্টিফেন হকিং এক সাক্ষাতকারে ঈশ্বরের অস্তিতের প্রশ্নে বলেছিলেন, “দরকারটা কি ওসবের আলোচনার? ঐ আলোচনা না করলে কি পৃথিবীর খুব ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে?”
ধর্ম, আস্তিক, নাস্তিক বহু কিছু। দেহের রক্ত ইদানিং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। আমার জ্ঞান অল্প, তাই এসব নিয়ে লেখার ভরসা পাই না। শুধু প্রসঙ্গ সাপেক্ষে একটা ঘটনা টেনে আনতে চাই। একদিন সাইকোলজির এক ষ্টুডেন্ট আমাকে বললো, “আমি আমার সাবজেক্ট সাইকোলজি খুব একটা ভালো করে বুঝে পড়ি না। কারণ দর্শন আর সাইকোলজি ভালো করে বুঝে পড়তে গেল নাস্তিক হয়ে যেতে হয়।”
আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সে যদি এটাই বুঝে থাকে যে সাইকোলজির প্রকৃত জ্ঞান তাকে নাস্তিক করে দেবে। তাহলে সাইকোলজিতে নাস্তিক হওয়ার যথেষ্ট যুক্তি আছে। তাহলে সে কি আস্তিক না নাস্তিক?
বিষয়টা অনেকখানি এরকম যে, চিড়িয়াখানায় কেউ কেউ বলছে, এই রুমটার ভেতর বাঘ আছে। আর কেউ কেউ বলছে, হুরর এখানে কোনো বাঘ নেই !
আপনি বললেন, ‘না, রুমের ভেতরে ঢুকে চেক করা যাবে না। কারণ চেক করলে আমি নিশ্চিত দেখবো যে বাঘ নেই। তাহলে আমার বাঘের অস্তিত্ব অস্বীকার করতে হবে ! কিন্তু আমি চাই বাঘের অস্তিত্ব বিশ্বাস করতে।’
আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সে যদি নিশ্চিত জানেই যে, ভিতরে গেলে বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া যাবেনা। তাহলে সে কি বিশ্বাস করছে ‘বাঘ আছে নাকি নেই?’
অবশ্যই সে বিশ্বাস করেছে বাঘ নেই…
ঠিক একই প্রক্রিয়ায় সে স্বীকার করেছে সৃষ্টিকর্তা নেই। রুমে ঢুকে বাঘ চেক করার মত গভীরভাবে ‘সাইকোলজি’ পড়লে বাঘের অস্তিত্বহীনতার মত ঈশ্বরও অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। এই অস্তিত্বহীনতার ভয়েই সে সাইকোলজি পড়ে না। তাহলে এই ছেলেটা কি আস্তিক নাকি নাস্তিক?
আসলে আমরা বোকা ! আমি বোকা, আপনি বোকা, আমরা সবাই বোকা !
বিখ্যাত জোতির্বিজ্ঞানী এবং সংশয়ী দার্শনিক কার্ল সাগান বলেছিলেন, “সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব বা অস্তিত্বহীনতা নিয়ে চিন্তা করার ক্ষমতা মানুষের হয়নি।” এজন্যই বললাম, আমি বোকা, আপনি বোকা, আমরা সবাই বোকা ! আমরা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে মতবাদ দেয়ার যোগ্যতা রাখিনা। আমরা চাইলেই সৃষ্টিকর্তা আছে কিংবা নেই বলে সিদ্ধান্তে যেতে পারিনা। আমরা বড়জোর তিনটা কাজই করতে পারি। এক, পেটে ভাত থাকলে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাতে পারি। দুই, পেটে ভাত থাকার সাথে হাতেও অফুরন্ত সময় থাকায় ‘করার মত কিছু খুঁজে না পেয়ে’ সৃষ্টিকর্তা নেই বলে ঘন্টাদেড়েক চেঁচাতে পারি।
সবশেষে ফ্রান্সিস বেকন এর একটি উক্তি দিয়ে ইতি টানছি – “অল্প দর্শন আপনাকে নাস্তিক করে আর গভীর দর্শন আপনাকে আস্তিক করে।”
“A little philosophy inclineth man’s mind to atheism, but depth in philosophy bringeth men’s minds about to religion.”
– Francis Bacon