বাইরে থেকে দেখে নর্থ কোরিয়া বা উত্তর কোরিয়াকে ইরান কিংবা ইরাকের মত বিধ্বস্ত মনে না হওয়াটাই স্বাভাবিক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সোভিয়েত শাসনাধীন উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতির মারাত্মক বিপর্যয় এবং পারমানবিক অস্ত্রের হুমকি বর্তমান বিশ্বের অজানা নয়। তবে ব্যাপারটা কিন্তু এখানেই শেষ নয় !
ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়া’র প্রেসিডেন্ট কিম জং উন (Kim Jong-un)। ক্ষমতাধর দেশগুলোকে বিভিন্ন সময় পারমানবিক হামলা চালানোর হুমকি দিয়ে আলোচনায় উঠে আসা এই লোকটাকে বিশ্বের সবচেয়ে উন্মাদ ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হয়। যে কিনা হতে পারে পুরো পৃথিবীর জন্য হুমকির কারণ ! চলুন জেনে নেয়া যাক ভয়ংকর এই ব্যক্তি কিম জং উন -এর সাজানো বিদঘুটে কিছু নিয়ম সমূহ। কিম জং উন তার নিজের বানানো এই নীতিবিধি গুলোর গোপনীয়তা রক্ষা করেন বলেই এগুলোকে বলা হয়, ডার্ক রুলস অব নর্থ কোরিয়া !
ডার্ক রুলস অব নর্থ কোরিয়া
১. কথিত ডেমোক্রেটিক রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়াতে রয়েছে ২৮টি হেয়ারকাট, যার ১০টি পুরুষ এবং ১৮টি নারীদের জন্য নির্দিষ্ট। এর বাইরে কোনো নারী কিংবা পুরুষ কোনো হেয়ারকাট রাখলে তার জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।
২. একমাত্র প্রেসিডেন্ট কিম জং উন ও তার সরকার তাদের দেশের জনগণের বসবাস নির্ধারন করেন। যদি কেউ একই সাথে উত্তর কোরিয়া এবং আমেরিকায় থাকার চিন্তা করে, তাহলে কোনোভাবেই তা সম্ভব নয়।
৩. প্রায় সকলকেই বাধ্যতামুলক ভোট দিতে হবে। এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট কিম জং উন এর প্রতিদ্বন্দ্বী কেউই নন। আর কেউ থাকলেও সে ওই কিম জং উন সরকারেরই সাজানো প্রতিদ্বন্দ্বী। এজন্যই দীর্ঘদিন যাবৎ কিম জং উন -এর সরকারই নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
৪. যারা উত্তর কোরিয়ার বাসিন্দা, গেম অফ থর্ন কিংবা ডেড তাদের জন্য নয়। সেখানে নেই কোনো ইন্টারনেট, নেই বাইরের কোনো টিভি চ্যানেল। শুধুমাত্র নিজস্ব তিনটি চ্যানেল রয়েছে, যেখানে দিনরাত চলতে থাকে সরকারী প্রোপাগান্ডা।
৫. উত্তর কোরিয়ায় নিষিদ্ধ ইন্টারন্যাশনাল কল। ২০০৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল কল করার অপরাধে এক ব্যক্তিকে অন দ্যা স্পট গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ৬ জন প্রতিবাদ জানালে তাদেরকেও একইসাথে গুলিবিদ্ধ করা হয়।
৬. অন্যায়ের শাস্তির নিয়ম কোনো দেশের জন্যই নতুন নয়। তবে যদি আপনি উত্তর কোরিয়ার হয়ে থাকেন, তাহলে নিয়ম আপনার জন্য ভিন্ন। আপনার অন্যায়ের শাস্তি আপনি একা পাবেন না। আপনার পুরো পরিবার সহ সে শাস্তি আপনাকে ভোগ করে যেতে হবে আমৃত্যু, আজীবন। একটি শিশুর অন্যায়ের শাস্তি তার বাবা, মা থেকে দাদা, দাদী পর্যন্ত পরিবারের সকলকে ভোগ করতে হবে যা অমানবিকতার সকল নিয়মকে হার মানায়।
৭. “Government is God” – মানে সরকােই একমাত্র প্রভু। সেদেশের প্রতিটা মানুষকেই কিম জং উন এবং তার বাবা কিম জং ইল -এর স্থাপত্যের সামনে মাথা নত করতে হবে। মাথা নত অবস্থায় প্রত্যেককেই কাঁদতে হবে। কেউ কাঁদছে না এমনটা দেখা গেলে তাকে পাঠানো হবে কারাগারে। যদি কেউ বাইবেল সহ ধরা পরে, তাহলে তার কারাদণ্ড কিংবা ফাঁসি পর্যন্ত হতে পারে !
৮. কেউ দেশ ত্যাগ করতে চাইলে অথবা দেশ থেকে পালাতে চেষ্টা করলে তাকে ব্যভিচারে হত্যা করা হবে। কেউ যেনো সাগর দিয়ে সাঁতরে নিকটবর্তী চীন কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করতে না পারে, সেজন্য বিরামহীন পাহারায় থাকে বন্দুকধারী বিশেষ সেনাবাহিনীর দল।
৯. সপ্তাহের পুরো সাত দিনই কাজ করতে হবে। একদিন বিরতি হলেও বাড়তি জরিমানা দিয়ে কাজে ফিরতে হয় কর্মচারীদের। নেই কোনো শিশু শ্রম আইন। পরিবারের চাহিদা মেটাতে কাজ করছে হাজারো শিশু শ্রমিক।
১০. একমাত্র সরকার প্রধানরাই সেখানে গাড়ি ব্যবহার করতে পারে। কোনো সাধারণ মানুষের জন্য গাড়ি ব্যবহারের অনুমতি নেই। ব্যক্তিগত গাড়ি উত্তর কোরিয়ায় একেবারেই নিষিদ্ধ। তাই স্কুল-কলেজ, অফিস আদালতে যেতে সাধারণ মানুষদেরকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বাসেন জন্য অপেক্ষা করতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা।
১১. যদি আপনি ট্যুরিষ্ট হিসেবে উত্তর কোরিয়া ভ্রমণে যান। তাহলে অবশ্যই আপনাকে ছবি তুলতে দেয়া হবে না। একবার কোনোভাবে সেখানকার কিছু ছবি ফাঁস হয়েছিলো। যা পরবর্তীতে ব্যান করা হয়েছে। ব্যানকৃত ২৭টি ছবির মধ্যে একটিতে খাদ্যের অভাবে এক ব্যক্তিতে মাটি থেকে ঘাস কুড়িয়ে খেতে দেখে গেছে।
১২. সরকার বিরোধী যেকোনো মতামত কিংবা মতবাদের জন্য আপনাকে পাঠানো হবে এডুকেশনাল ক্যাম্পে, যেখানে অমানবিক শাস্তি ও পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে ব্রেইনওয়াশ করানো হয়।
১৩. পারমানবিক অস্ত্রখ্যাত উত্তর কোরিয়ার নারী সেনাবাহিনীর মার্চ পাস্ট সুন্দর দেখাতে প্রত্যেককে একই চুলের ধরণ ও একই রকমের মিনি স্কার্ট পরতে হয়। জানা গেছে মেলিটারি ক্যাম্পে তাদের ব্রেইনওয়াশ করানো হয় “উই আর কিলিং আমেরিকানস” ফ্রেজ দ্বারা।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই বিধ্বংসী আচরণ মানুষ সহ্য করছে বছরের পর বছর। পালিয়ে আসা উত্তর কোরিয়ানদের জীবন কথাগুলোর একেকটা লাইন যেনো একেকটি অন্ধকার অধ্যায় !