আমাদের নিজেদের সভ্যতার মধ্যে যৌনতা নিয়ে কথা বলায় যথেষ্ট বিরোধীতা আছে। বলতে গেলে এটাই আমাদের সেক্সুয়াল ট্রেডিশন। আমরা সবাই এখনো এই বিষয়টাতে একমত যে, যৌনতা বা শারীরিক চাহিদা আসলে একটি গোপনীয় বিষয়, যা বন্ধ দরজার মধ্যে থাকাটাই ভালো। আবার অন্যদিকে LGBT গ্রুপ বা তাদের সম্পর্ক এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে কথা বলাটাকে আমরা পাবলিক ইস্যুর মত বানিয়ে ফেলি।
যদি আমরা ইতিহাস বা অন্যান্য সভ্যতার যৌনতা নিয়ে গবেষণা করি তাহলে আমরা যৌনতা বা শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে তাদের মধ্যে এক বিশালতা দেখতে পাই যা আমাদের নিজেদের মধ্যে নেই। এমনকি একটি কনডম কিনতে বা তার ব্যবহার নিয়ে বলতে আমরা অনেক লজ্জা বোধ করি যেখানে অন্যান্য সভ্যতাতে যৌনতা নিয়ে বলাকে খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার হিসাবে দেখা হয়। পশ্চিমা দেশ গুলোতে পাঠ্যবইয়ের সাথে যৌনতা বিষয়ক জ্ঞান এবং কি করলে কি হবে বা তাদের কি সেক্স বা শারীরিক সম্পর্কের সময় কি ব্যবহার করতে হবে সেটা নিয়ে অনেক শিক্ষাও দেয়া হয়।
অন্যান্য কিছু সভ্যতার মধ্যে এমন অনেক যৌনতা আছে যা আমাদের নিজেদের দেশের বা আমাদের জানামতে অন্যান্য অনেক জায়গায় খারাপ হিসাবে ধরা হয় বা এখন পর্যন্ত অনেকেই এই ব্যপারগুলো জানেন না। আসুন যৌনতা নিয়ে কিছু কিছু সভ্যতায় কি ধরনের প্রথা প্রচলিত আছি জেনে নিই !
দ্যা সেক্সুয়াল ট্রেডিশন
প্রাচীন মিশর : প্রাচীন মিশরে এখনকার অনেক সভ্যতার মতই কুমারীত্ব বা Virginity নিয়ে কোনো মতভেদ ছিলোনা। এইটা থাকা বা না থাকা নিয়ে কারো মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব ছিলোনা । পুরাণ কাহিনী অনুযায়ী তাদের প্রথম যেই দেবতা ছিলো, তিনি একটি প্রজন্মের জন্ম দিয়েছিলেন শুধুমাত্র হস্তমৈথুন করার মাধ্যমে। মিশরীয়রা জন্ম নিয়ন্ত্রনের পদ্ধতি হিসাবে বাবলা গাছের আঠা ব্যবহার করতেন, কুমিরের বিষ্ঠা সহ আরো অদ্ভুত অনেক ধাতু ব্যবহার করতেন।
প্রাচীন গ্রিক : প্রাচীন গ্রীকে একজন উপযুক্ত বা প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের সাথে একটি বাচ্চা ছেলের বা নাবালকের যৌনতার সম্পর্ককে খুব সাধারণভাবে দেখা হত। এবং এই ধরনের সম্পর্ক উচ্চ মর্যাদার বা রাজকীয় পরিবার গুলোতে বেশি থাকত।
পাপুয়া নিউগিনি : সাত বছর বয়সের সময় থেকেই টরবিয়ান্ড শিশুদেরকে যৌনতার শিক্ষা দেয়া হয় বা একে অন্যকে কিভাবে আকর্ষণ করবে তা খেলার ছলে তারা করে থাকে। ওইসব শিশুরা যখন সাবালক হয়, তখন তারা তাদের Sexual partner বা যৌনতার সঙ্গীকে নিজেরাই নির্ধারণ করে নিতে পারে এবং যেকোনো সময় তাকে পরিত্যাগ করে আরেকজনকে গ্রহন করতে পারে। মহিলারাই নিজেদের প্রেমিক বা সঙ্গীকে নির্ধারন করার ক্ষমতা রাখেন। এখানে বিবাহের রীতি অনেক অদ্ভুত, প্রেমিক যদি প্রেমিকার ঘরে রাতের খাবার খেয়ে সূর্য উঠার আগে বের হয়ে না আসে, তাহলেই তাদের বিয়ে হয়ে যায় এবং প্রেমিকার মাকে পরের দিন সকালবেলা মিষ্টি আলু রান্না করে নতুন জামাইকে খাওয়াতে হয়।
সাম্বিয়া গোত্রে একটা ছেলে কে পুরুষে পরিনত করতে ছয়টা ধাপ পার হতে হয়। আর এই সকল কিছু শুরু হয় ছেলেটার ছয় বছর বয়স থেকে। পুরুষে পরিনত হওয়ার সময় তাদের শিখানো হয় কিভাবে তারা যোদ্ধা হবে , শিকার করবে ইত্যাদি এই পুরা সময় তাদেরকে মেয়েদের থেকে দূরে রাখা হয় এমনকি তাদের নিজেদের মায়েদের কাছ থেকেও তাদের দূরে রাখা হয়। এই সময় অনেকেই সমকামিতার শিকার হয় কিন্তু এই ব্যাপারটাকে তারা তাদের বড় হবার প্রক্রিয়ার একটা অংশ বলে মনে করে। এই পুরুষ হবার প্রক্রিয়া প্রায় টানা দশ থেকে পনের বছর ধরে চলে এরপর সে পুরুষ হিসাবে কোন সন্তানের বাবা হবার অনুমতি পায়।
অস্ট্রেলিয়া : অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী দের মধ্যে একটি ভয়ঙ্কর প্রথা আছে, দশ থেকে বারো বছরের ছেলেদের কে সামনের যে কোন একটি দাঁত উঠিয়ে ফেলে তার Adulthood বা প্রাপ্ত বয়স্ক হবার কথা সবাইকে জানানো হয়। এরপর তাকে তার পছন্দের কোন স্থানে নিয়ে গিয়ে লিঙ্গ এর চর্মছেদন করা হয় । এবং পরবর্তীতে তার নিজের সেই চামড়াটুকু তাকে গিলে খেতে হয়। এই সমস্থ প্রক্রিয়ার পরে তাকে শিকারে পাঠানো হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না যে খাবার নিয়ে ফিরে এবং তা দিয়ে ভোজ আয়োজন করা যায় ততখন পর্যন্ত সে কোন নারী সঙ্গ পায় না।
আফ্রিকা : আফ্রিকার উদ-আবের মধ্যে একটা ছোট গোত্র আছে যাদের ক্যামেরুন , মধ্য আফ্রিকা , চাঁদ , নিগার এবং নাইজেরিয়ার কিছু অঞ্চলে পাওয়া যায়। তারা তাদের অদ্ভুত সাজসজ্জা এবং বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে তৈরি পোশাক পরার জন্য বিখ্যাত। এই গোত্রের মধ্যে একটি উৎসবের প্রচলন আছে যেখানে পুরুষেরা তাদের পারদর্শিতা এবং দক্ষতা নাচ গানের মাধ্যমে বিবাহ উপযুক্ত মেয়েদের সামনে উপস্থাপন করেন। একদল মেয়েদের জুরি সেখান থেকে সবচে আকর্ষণীয় পুরুষকে নির্বাচন করেন । এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মহিলারা তাদের প্রেমিক বা স্বামী নির্বাচন করে থাকে। আবার অনেক জুটি ভেঙ্গে গিয়ে নতুন জুটি তৈরি হয় । এই প্রক্রিয়ায় অনেক পুরুষ প্রাপ্তি হিসেবে দুজন স্ত্রী পেয়ে থাকেন।
হাইতি : হাইতি তে “ঝর্ণা” বা Saut-D’Eau নামের একটি গোত্র আছে যারা প্রতি বছর জুলাই মাসে ভোডোডু উৎসবের জন্য দূরের কোন একটি ঝর্নার কাছে যায়। এই উৎসবটিকে উর্বরতার উৎসব বলা হয়ে থাকে। কারণ এই উৎসবের তিন দিনই মেয়েরা প্রকাশ্যে যে কারো সাথে সেক্স বা শারীরিক সম্পর্ক করার অনুমতি পেয়ে থাকে ।
নেপাল : নেপালের তিব্বতিয়ান দের মধ্যে একটা গোত্র আছে যেখানে এক নারীর বহু স্বামী নেবার ক্ষমতা দেয়া আছে। মূলত জনসংখ্যার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য এই প্রথার প্রচলন হয় এবং আধুনিক কালের সাথে এই প্রথা হারিয়ে যাচ্ছে। প্রথা অনুযায়ী এক পরিবারে যে কয়েকজন ভাই থাকে তাদের সবাই একজন নারীকেই বউ হিসাবে গ্রহন করে থাকেন, এবং নিয়ম অনুযায়ী সবাই সপ্তাহের একটি দিন তার সাথে কাটায়। এই প্রচলিত প্রথায় জন্ম নেয়া সন্তানদের আসল পিতা কে তা নিয়ে কেও মাথা ঘামান না বরং শিশুটি পরিবারের একজন সদস্য হিসাবে গ্রহন করা হয়। অনেকের মতে, এই প্রথাটি বর্তমানে একেবারেই আর নেই।
যৌনতা আমাদের জীবনের একটি অংশ বা চাহিদা, প্রাচীন আমল থেকেই এই যৌনতা বা শারীরিক সম্পর্ককে একটি অন্যমাত্রায় উপস্থাপন করা হয়েছে কারণ এই যৌনতার উপর নির্ভরে করে বিস্তার করত এক একটি সভ্যতা। তাই কোনো সভ্যতার যৌনতা নিয়ে নিন্দনীয় কিছু বলার আগে তাদের জীবনযাপন আচার-আচরণ সম্পর্কে সঠিক ভাবে জেনে নেওয়া দরকার। আবেগ বা ধর্ম দ্বারা বিবেচনা না করে তাদের সভ্যতার বিকাশ হিসাবে দেখলে, যৌনতা অনেক সহজভাবেই গ্রহণীয়।