পিশাচতত্ত্বের আবির্ভাব ও এসম্পর্কে ধর্মীয় মতবাদ

পিশাচতত্ত্ব (Demonology) এমন একটি বিদ্যা যা অতিপ্রাকৃতিক কিছু ব্য‍াপার নিয়ে গবেষণা করে যার সাথে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। পিশাচ এই শব্দটি “হোমার” এর একটা বিশেষ অংশ থেকে জনপ্রিয়তা পায়।

পিশাচ বলতে অশরীরী কোনো আত্মা, ঈশ্বর প্রদত্ত কোনো অলৌকিক ক্ষমতা বা পশু পাখি বা অন্য কোনো প্রাণীর আত্মাকে বুঝায়, যা কারো ক্ষতি সাধন করতে পারে। পিশাচতত্ত্ব এর মূল কথা হল একটি নির্দিষ্ট কোন উপাদান বা আত্মা থেকে অন্য সকল কিছুকে নিয়ন্ত্রন করা বা বশীভূত করে রাখা। পিশাচতত্ত্ব এর সাথে পরশ্রীকাতরতা এবং ঘৃণা জরিত-মুলত এই দুই কারণেই এই বিদ্যাকে ব্যবহার করা হয়।

কোরিয়ানরা তাদের পুর্বপুরুষদের কাছ থেকে এই পিশাচ বিশ্বাস করতে শিখে। প্রাচীন ব্যাবিলনের পিশাচতত্ত্ব প্রেম ও ঘৃণার আবেগ জীবনের অন্যতম অংশ মনে করতেন। গ্রীক এর লোকের পিশাচ কে মানব জাতির অভিভাবক বলে মনে করতেন।

 

তিন শ্রেণীর পিশাচ মানুষ বিশ্বাস করে থাকে –

  • করুণা প্রাপ্ত আত্মা (জুডো খৃষ্ট থেকে আশা ফেরেশতা)
  • জীন
  • অতৃপ্ত আত্মা বা প্রেতাত্মা (দুনিয়া এবং দেবতা থেকে বহিষ্কৃত আত্মা)

Photo: Ancient Semitic Demon Possession and Exorcism

পিশাচদের ক্ষেত্রে যে বিশ্বাস সবখানে দেখা যায় তা হচ্ছে, যে তারা রাতের বেলা কবর থেকে মানুষের নাড়িভুড়ি বের করে খায়, তারা মানুষ এবং অন্যান্য জীব কে বশীভূত করার ক্ষমতা রাখে।

ব্যাবলনীয়দের মতে, তাদের ৭ টি পিশাচ দেব দেবী ছিলেন যাদেরকে Shedu বলা হয়, এদের প্রতিনিধিত্ব হিসাবে রাজকীয় ষাঁড় এর প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হত যার নাম ছিলো Shed. এদেরকে “ঝড়ের দেবতা” বলেও মনে করা হত। ব্যাবলনীয়দের এই shedu নাম পরে বনী-ইসরাঈলদের কাছে আসে এবং তারা ক্যাননীয় দেবতার নাম করে Shedim, যা ধ্বংসকারী দেবতা হিসাবে পরিচিত।

বৌদ্ধ ধর্ম মতে, যা কিছু নরকের জন্য স্বীকৃত , পাপী এবং জ্ঞান অর্জন থেকে বিরত রাখে তারাই পিশাচ। তাদের মতে Mara বা অন্ধকারের রাজপুত্র নামে একজন আছে যা শয়তানের সাথে সম্পৃক্ত। Mara অনুসারীরা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয় এবং এই মতামত শুধুমাত্র চীনারা বিশ্বাস করে থাকে ।

খ্রীষ্ট ধর্ম মতে, পিশাচবিদ্যা এই ধর্মের অন্যতম অংশ। বাইবেলেও তার উল্লেখ আছে। এখানে বলা আছে মানুষ পিশাচ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।

সনাতন ধর্ম মতে, একটি নবজন্ম হবার আগ পর্যন্ত যে আত্মা ঘুরে বেরায় বা কোন মানুষ অতৃপ্ত ইচ্ছা নিয়ে মারাগেলে বা ক্রোধ নিয়ে মৃত্যুবরণ করলে পিশাচ হয়ে যায়। “গরুড় পুরাণে” এই সম্পর্কে লিখা আছে। এবং তাদের বিশ্বাস এই আত্মা দুনিয়া এবং নরকে সর্বত বিচরন করে থাকে।

ইসলাম ধর্ম মতে, পিশাচ বা শয়তান একজন জীন ছিলেন, যিনি ইবলিস নামে পরিচিত। জীন অথবা মানুষ যে কেউ ইবলিস অনুসারী হতে পারে। এরা আল্লাহর আনুগত্যকে অস্বীকার করে থাকে।

ইহুদি ধর্ম মতে, আদম এবং ইভ তৈরি হবার পর ইভ যখন প্রথম ঈশ্বরের আদেশ অবমাননা করে তখন থেকেই পিশাচ তত্ত্বের উদ্ভব। এবং তারা তখন থেকে Azazel নামক একটি অশরীর ধারণাকে প্রাধান্য দেয়, যা মানুষ বা ফেরেশতা যেকোনো কিছুর পতন ঘটাতে পারে। যা থেকে Lucifer নামটি আসে এবং যারা এই Lucifer বা Azazel এ বিশ্বাসী তাদের কে Satanael বা নিপতিত ফেরেশতা বলা হয়।

পার্সি মতে, Mainyu বা Ahriman নামে একটি মহাজাগতিক শক্তি আছে যা পিশাচতত্ত্বের সাথে সম্পৃক্ত।

সকল ধর্ম এবং মতামত অনুযায়ী একটি অশরীরী শক্তি বা আত্মাকে পিশাচ বলা হয় এবং অনেকে তার উপসানা করে থাকে, যা কোনো ঈশ্বর বা দেবতাকে প্রকাশ করেনা। কিন্তু উপাসকরা বিশ্বাস করে যে, পৈশাচিক ক্ষমতা দ্বারা যেকোনো কিছু অর্জন করা নাকি অত্যন্ত সহজ !

Leave a Reply